রাজধানীর উত্তরা মডেল টাউন ও আজমপুর-ফায়দাবাদ এলাকায় প্রতারক দম্পতির প্রতারণায় শিকার হয়েছেন প্রায় আড়াইশ পরিবার। এর মধ্যে অর্ধ-শতাধিক পরিবার বিপুল পরিমাণের অর্থ বিনিয়োগ করে একেবারেই সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়েছেন।
একাধিক ভুক্তভোগী জানান, আবদুর রহমান ও তার স্ত্রী নাজমা আক্তার ফাইমা বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে গ্রাহকদের প্রায় ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছেন।
পথেবসা অর্ধ-শতাধিক পরিবার সহ আড়াইশ পরিবার এখন প্রতারক দম্পতির গ্রেফতার ও বিনিয়োগকৃত টাকা ফেরত পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, কয়েকজনকে সাথে নিয়ে প্রতারক আবদুর রহমান ও তার স্ত্রী নাজমা আক্তার ফাইমা ‘আল-মানি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড’ নামে একটি শরিয়া ভিক্তিক আর্থিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান খোলেন। এই প্রতিষ্ঠানের নামে তারা বেশি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে দুই লাখ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন অঙ্কে প্রায় আড়াইশ গ্রাহক বা পরিবারের কাছ থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেন। এই প্রতারণার কাজে প্রায় ১৯ সদস্যের একটি চক্র রয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে চেক জালিয়াতি সহ বিভিন্ন ধারায় একাধিক মামলা করা হয়েছে।
চক্রের সদস্যরা হলেন— এ বি এম খায়রুল ইসলাম, নাজমা আক্তার ফাইমা, রহিমা খাতুন রিতা, ফাতেমা খাতুন, নূরুন্নাহার, আমিনুল ইসলাম (বাবলু), রবিউল ইসলাম, সফিকুল ইসলাম, শাহ জালাল, মারুফ হোসেন, আমিনুল ইসলাম আমিন, সাইদুল ইসলাম, ছাইদুর রহমান, মাহফুজুল হক মিলন, মনিরা বেগম, হেমায়েত মিয়া, আলী আজম ও রফিকুল ইসলাম।
তাদের কাজই ছিল বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে সদস্য সংগ্রহ করা। পরে স্ট্যাম্প পেপারে নামকাওয়াস্তে সই-সাবুদ করে এই বিনিয়োগ সংগ্রহ করতেন তারা। তবে প্রতারণার মূল হোতা আবদুর রহমান। তিনি কুড়িগ্রামের রৌমারীর মফিজউদ্দিন মণ্ডলের ছেলে।
প্রতারক দম্পতিকে গ্রেফতার ও বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত পেতে এরই মধ্যে রাজধানীর উত্তরা মডেল থানায় একাধিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সেই ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে প্রায় ১৫-১৭টি নিয়মিত ছাড়া চেক জালিয়াতির মামলা করা হয়েছে। তার মধ্যে একাধিক মমালায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
একাধিক ভুক্তভোগী জানান, ওই প্রতারক দম্পতির বিরুদ্ধে মামলা করেও শান্তিতে নেই তারা। বিনিয়োগকৃত টাকা ফেরত তো দূরের কথা উল্টো নানাভাবে হামলা-মামলার হুমকি দিচ্ছে প্রতারক দম্পতি। এ সংক্রান্ত থানায় অভিযোগও করা হয়েছে। কিন্তু কোনও সুরাহা হচ্ছে না।
ভুক্তভোগীরা বক্তব্য, ‘সহায়-সম্পত্তি বিক্রি করে বিশ্বাস করে টাকা গচ্ছিত রেখেছিলাম। কিন্তু সেই টাকা ফেরত না পেয়ে আমরা একেবারেই পথের ফকির হয়ে গেছি।’
প্রতারণায় শিকার বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন যারা অন্যের কাছ থেকে ধার-দেনা করে টাকা গচ্ছিত রেখেছিলেন। আবার কেউ কেউ ভিটেভাটি বন্ধক রেখেছিলেন। তারা এখন বিনিয়োগকৃত টাকা ফেরত না পেয়ে চোখে সর্ষেফুল দেখছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী জানান, ‘প্রতারক ওই দম্পতি চেক জালিয়াতির সঙ্গেও যুক্ত। এই সংক্রান্ত একাধিক মামলা করা হয়েছে।
ওই ভুক্তভোগী আরও জানান, বিনিয়োগকৃত টাকা যাতে ফেরত ‘না চাই’ সেজন্য নানাভাবে হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছে। তবেই ওই দম্পতি প্রকাশ্যে কোথাও দেখা মিলছে না।
উত্তরা ১১ নং সেক্টরে ওই দস্পতির নামে একটি ফ্ল্যাট ছিল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফ্ল্যাটটি ক্রয় হয়েছিল বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনের জন্য। পরে তারা ওই ফ্ল্যাটটি বিক্রি করে লাপাত্তা হয়ে গেছে।
এই অবস্থায় প্রতারক দম্পতি ও তাদের চক্রকে গ্রেফতার আইনের আওতায় বিনিয়োগকৃত টাকা দ্রুত ফেরত পাওয়ার ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
জাগরণ/অপরাধ/কেএপি/এমএ