• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ২৫, ২০১৯, ০৮:৪১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ২৫, ২০১৯, ০৮:৪১ পিএম

ঋণমুক্তির সুযোগ পাবেন ভালো ঋণগ্রহীতারা 

ঋণমুক্তির সুযোগ পাবেন ভালো ঋণগ্রহীতারা 

কিছু ঋণগ্রহীতা ব্যাংক থেকে ঋণ নেন ব্যবসার উন্নতির জন্য আর কিছু এমন আছেন যারা ফেরত না দেয়ার উদ্দেশে ঋণ নেন। কিছু ঋণখেলাপি থাকেন যারা ব্যবসা করতে গিয়ে লোকসান দিয়ে ঋণখেলাপি হন। যারা প্রকৃত অর্থে ভালো ঋণগ্রহীতা, তাদের ঋণমুক্তির সুযোগ দিচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সোমবার (২৫ মার্চ) বিকেলে সরকারের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। 

তিনি বলেন, যারা ভালো ঋণগ্রহীতা তাদের সুদের হার আমরা কমিয়ে দিচ্ছি। তাদের ডাউন পেমেন্ট হবে দুই শতাংশ। তাদের যা ঋণ আছে সেই ঋণ থেকে তারা দুই শতাংশ পরিশোধ করবে। বাকি যে অ্যামাউন্ট (ঋণ) থাকবে সেটার ওপরে আমরা ৭ শতাংশ সুদ নেব। তাদের আমরা ১২ বছর সময় দিচ্ছি। যার যা ঋণ আছে, ছোট বা বড় সব ঋণগ্রহীতা তারা ২ শতাংশ পরিশোধ করবে। আর যে ঋণটা থাকবে সেটার ওপর সবসময় তারা ৭ শতাংশ চক্রাবৃদ্ধি নয় সরল সুদ দেবে। 

মন্ত্রী আরও জানান, ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে কেউ ভালো ঋণগ্রহীতা এবং কেউ অসাধু ঋণগ্রহীতা। যারা ভালো ঋণগ্রহীতা তাদের সুযোগ দেবো আর অসাধু ঋণগ্রহীতাদের এই সুবিধা দেয়া হবে না। আমরা বহু আগে থেকেই বলে আসছিলাম আমাদের সুদের হার সিঙ্গেল (এক) ডিজিটের হবে। এটা এতদিন আমরা করতে পারিনি। এখন আমরা সিঙ্গেল ডিজিট নিজেরাই করে দিচ্ছি। আমরা কাজ শুরু করেছি। সর্বোচ্চ এক মাস সময় লাগবে। কিন্ত এটা কার্যকর হবে ১ মে থেকে। 

অসাধু ঋণগ্রহীতা কীভাবে নির্ধারণ হবে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘যারা খারাপ ঋণগ্রহীতা তাদের রেকর্ডই তো আছে। টাকা নিলাম ১০ বছরে এক টাকাও দিলাম না তাহলে আমি ভালো? বা টাকা নিলাম দুই বছরেও এক টাকা দিলাম না আমি কী ভালো? কিংবা ১০ বার আমি রফতানি করলাম, কিন্তু একবারও আমি ব্যাংকে টাকা ঢুকালাম না! তাহলে কী আমি ভালো? কারা ভালো আর কারা অসাধু ঋণগ্রহীতা সেটা বের করার জন্য আমরা একটা স্পেশাল অডিটের ব্যবস্থা করেছি। এটা কাজ শুরু হবে। সেখান থেকেও আমরা জানতে পারবো কারা ভালো আর কারা খারাপ। 

‘কখনও তারা যদি  মনে করে সুদ করে চলে যাবে- সেই ব্যবস্থাও আমরা রেখে দিয়েছি। যদি মনে করি এখন তাদের লেনদেন ভালো, স্ট্যাটিক ভালো- সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে আমরা তাদের নতুন করে একই ব্যাংক থেকে ঋণ দেব। তাদের অ্যাক্সিট দেয়ার জন্য আমরা এই ব্যবস্থা করতেছি’ - যোগ করেন অর্থমন্ত্রী।  

নতুন ঋণগ্রহীতাদের বিষয়ে তিনি জানান, এখন থেকে যারা আসবে, তাদের জন্যও আমরা সুদের হার কমিয়ে দেব। একটা মার্কেট বেসড (বাজারভিত্তিক) সুদ হবে। সেটার ভিত্তিতে কেউ-ই লস করবে না। যারা আগে ১০, ১২ বা দুই ডিজিট সুদে ঋণ নিয়েছে সেটা তাদের দিতে হবে না। ৭ শতাংশ হারে সুদ দিলেই হবে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী। 

তিনি আরও বলেন, ‘এর মধ্যে যদি কেউ বিপদে পড়ে যায় তাদের জন্যও অ্যাক্সিটের ব্যবস্থা আছে। আমরা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি করবো। আমাদের ইনসলভেন্সি আইন তৈরি হচ্ছে। এই আইনের আওতায় নন পারফর্মিং ঋণগুলো সব ওই কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেয়া হবে। তারা এগুলো পাবলিক টেন্ডার দিয়ে বিক্রি করে যা পাবে তা সরকারকে দিয়ে দেবে।’ 

অতীত ইতিহাস টেনে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আবুল মাল আব্দুল মুহিত অর্থমন্ত্রী থাকার সময় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দূরাবস্থার কথা চিন্তা করে ব্যাংকারদের লাগবে, যারা ঋণগ্রহীতা তাদেরও লাগবে। ঋণগ্রহীতাদের বিকল্প নাই। কারণ তারাই আমাদের কর্মসংস্থান করে, দারিদ্র্য দূর করে, অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে। ঋণগ্রহীতাদের বাদ দিয়ে আমাদের চলবার কোনো ব্যবস্থা নাই। তিনি ভেবে দেখলেন তাদের যদি অ্যাক্সিটের (ঋণমুক্তি) ব্যবস্থা যদি করে দেয়া যায় কিছু সুযোগ-সুবিধা দেয়া যায়। তাহলে বোধহয় বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত হবে। সেই বিবেচনায় তিনি একটা কমিটি করে দিয়েছিলেন। সেই কমিটির কিছু পরামর্শ ছিল কীভাবে সুযোগ-সুবিধা দিয়ে একটা অ্যাক্সিটের মতো ব্যবস্থা করে দেয়া যায়। আপনারা জানেন, আমাদের দেশে অ্যাক্সিটের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। 

শেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘লাভবান হলে সবাই খুশি। কিন্তু লোকসান হলে আমরা সরকারের পক্ষ থেকে সেরকম কিছু দিতে পারি না। লোকসান হলেও আমরা তাদের ওপর সুদ বলবৎ রাখি। এই যে ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো ছিল এগুলো দূর করার জন্য সাবেক অর্থমন্ত্রী এই কাজ করেছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের কারণে তিনি সেই কাজ শেষ করে যেতে পারেননি। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা আজকে বসেছিলাম। 

এআই/এসএইচএস