সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) র্নিবাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, দুঃখজনক হলো সত্যিকার অর্থে ঋণ খেলাপি না কমিয়ে, সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে এটা কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। যার ফলে আমরা গুড প্র্যাকটিস থেকে ব্যাড প্র্যাকটিসে চলে যাচ্ছি। আর ঋণ খেলাপিদের সুবিধা দেয়াতে একদিকে খেলাপিরা উৎসাহিত হবে অন্যদিকে দুর্বল ব্যাংকও উৎসাহিত হবে। ব্যাংকের তারল্যের উপর প্রভাব পড়বে।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সরকারের ১শ দিন উপলক্ষে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সিপিডি আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- সিপিডি বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও ড. মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রমুখ।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যাংকিং ব্যবস্থা অর্থনীতির মূল স্তম্ভ। আমরা অতীতে দেখেছি, বড় বড় উদ্যোক্তাদের অর্থ জোগানের ক্ষেত্রে ব্যাংক ব্যবস্থার একটা ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু এখন আমরা এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছি যেখানে ঋণ খেলাপি একটা সমস্যা তা সবাই স্বীকার করছে। সরকারও তা স্বীকার করছে। যার ফলে আমরা দেখছি নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। কিভাবে এটা (খেলাপি ঋণ) কমানো যায়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে তা না করে খেলাপিদের সুবিধার মাধ্যমে কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগের জন্য যখন ব্যাংকের কাছে অর্থ চাওয়া হবে, তখন ব্যাংক যদি অর্থ দিতে না পারে তাহলে আমাদের বিনিয়োগ এবং অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হবে। আমরা মনে করি খেলাপি ঋণের বিষয়ে যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তার ফলে আমরা উল্টো দিকে যাচ্ছি। এর ফলে ব্যাংকের প্রকৃত যে স্বাস্থ্য তা পুনরুদ্ধার করতে পারবে না। এটা ভাসা ভাসা একটা সমাধান। নির্বাচনের আগে আমরা ব্যাংক কমিশনের কথা বলেছিলাম। আমরা সেটার জন্য কাজ করছি। সরকারের কাছে আমরা বার বার ব্যাংকিং কমিশনের কথা বলেছি। কিন্তু তারা এখনও পর্যন্ত সেরকম কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এখন আমরা শুধু ব্যাংকিং কমিশন নয়, নাগরিকদের নিয়েও কমিশনের চিন্তাভাবনা করছি।
এর আগে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্স ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। এ সময় তিনি বলেন, খেলাপি ঋণের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান সরকারের ১শ দিনে ব্যাংক খাতের কোনো উন্নয়ন আমরা দেখছি না। সরকারের পক্ষ থেকে ভালো ঋণ গ্রহিতাদের ছাড় দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু কারা ভালো ঋণ গ্রহিতা সে বিষয়ে দিক নির্দেশনা আসেনি। এটা নির্দিষ্ট করা উচিত। তা না হলে এর ফলে সুযোগ নেয়া হবে এবং অর্থনীতির জন্য কোনো লাভ হবে না।
প্রসঙ্গত, গত রোববার খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সব ধরনের চলতি ঋণ, ডিমান্ড ঋণ, ফিক্সড টার্ম লোন অথবা যেকোনো ঋণের কিস্তি তিন মাসের বেশি, কিন্তু ৯ মাসের কম অনাদায়ী থাকলে তা সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণ হিসেবে হিসাবায়ন করা হবে। ৯ মাসের বেশি কিন্তু ১২ মাসের কম অনাদায়ী থাকলে তা ডাউটফুল লোন বা সন্দেহজনক ঋণ হবে। আর ১২ মাসের বেশি অনাদায়ী ঋণ মন্দ ঋণ হবে। এর ফলে একজন ঋণ খেলাপি ৬ মাস কোন কিস্তি না দিলেও তার ঋণ নিয়মিত থাকবে।
এআই/একেএস