• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ১৩, ২০১৯, ১০:৫৬ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১৩, ২০১৯, ১০:৫৬ এএম

খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক


নানা অনিয়ম অব্যবস্থাপনা ও খেলাপি ঋণে ডুবছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। এ পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে কঠোর হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল রোববার এ নিয়ে সরকারি চার ব্যাংকের এমডিদের সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্ণর ফজলে কবির। এতে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিবিড় পর্যবেক্ষণের পরও চার ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার খুব একটা উন্নতি নেই। প্রভিশন ও মূলধন ঘাটতিতে নাজুক অবস্থায় ব্যাংকগুলো। শীর্ষ খেলাপিদের কাছ থেকে ঋণ আদায় নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এমডিদের সঙ্গে করা বৈঠকে ২০১৮ সালের প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী গেল বছর ব্যাংকগুলোর ব্যবসা পরিচালনার বিভিন্ন সূচকে রয়েছে মিশ্র প্রবণতা। লোকসানি শাখা কমলেও বিপুল অঙ্কের খেলাপিঋণ রয়েছে ব্যাংকগুলোতে। প্রভিশনের সঙ্গে মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে ব্যাংকগুলো। এছাড়া শীর্ষ-২০ খেলাপিদের থেকে নগদ আদায় সন্তোষজনক নয়। ফলে বৈঠকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপিঋণ ও শীর্ষ খেলাপিদের থেকে আদায় পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের সার্বিক আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। ব্যাংকগুলো ২০১৮ সালের আর্থিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছে। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো বেশকিছু সূচকে ভালো করেছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে সফল হয়নি। যেমন তাদের খেলাপিঋণ এখনও উচ্চমাত্রায় রয়েছে। শীর্ষ খেলাপিদের থেকে আদায় সেভাবে বাড়েনি। এছাড়া মুনাফা অর্জনের টর্গেটও অর্জন হয়নি। বৈঠকে গভর্ণর খেলাপিঋণসহ পিছিয়ে পড়া সূচকে উন্নতি করার ওপর জোর দিয়েছেন। 

এদিকে, সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে ২০০৭ সাল থেকে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) করে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমওইউতে খেলাপি ঋণ আদায়, ঋণ প্রবৃদ্ধি যথাযথ রাখা, লোকসানি শাখা ও পরিচালন ব্যয় কমানো, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তিন মাস পর পর ব্যাংকগুলোর সঙ্গে নিয়মিত বৈঠকের মাধ্যমে এসব লক্ষ্য অর্জনের মূল্যায়ন করা হয়।

জানা গেছে, ২০১৮ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৭ হাজার ২২৫ কোটি টাকা খেলাপিঋণ জনতা ব্যাংকের, যা ব্যাংকটির মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় ৩৬ শতাংশ। ২০১৭ সালে ব্যাংকটির খেলাপিঋণ ছিল ৭ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা। এ সময়ে অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপিঋণ বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে যা ছিল ৫ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। সোনালী ব্যাংকের খেলাপিঋণ কিছুটা কমে হয়েছে ১২ হাজার ৬১ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে যা ছিল ১৪ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। এছাড়া রূপালী ব্যাংকেরও খেলাপিঋণ কিছুটা কমে হয়েছে ৪ হাজার ১১০ কোটি টাকা, যা ২০১৭ সালে ছিল ৪ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা।

আর ২০১৮ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত এই চার ব্যাংকের ৩টিই প্রভিশন ঘাটতিতে রয়েছে। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের ৩ হাজার ৮৮ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকের ৫৯৩ কোটি ও রূপালী ব্যাংকের ৮৩৪ কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতি ছিল। এ সময়ে জনতা ও অগ্রণী ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে ছিল। এর মধ্যে জনতা ব্যাংকের ৫ হাজার ৮৫৩ কোটি ও অগ্রণী ব্যাংকের ৮৮৩ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতি রয়েছে।

সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে পরিচালন ব্যয় প্রায় একই ছিল রূপালী ব্যাংকের, ৭৭০ কোটি টাকা। জনতা ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় আগের বছরের চেয়ে ১০৬ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা। অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় ২৮ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। তবে সোনালী ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় প্রায় ৫২ কোটি টাকা কমে হয়েছে ১ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা।

এআই/আরআই