লাগামহীন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। কোনোভাবে এর রাশ টানতে পারছে না সরকার। ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৩২ দশমিক ২০ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের মার্চ মাস শেষে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক (সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল) ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৬৭ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে মোট খেলাপি ছিল ৪৮ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। এছাড়া বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ১৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ। আলোচিত সময়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ৭ লাখ ৫ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪৯ হাজার ৯৪৯ কোটি টাকাই খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। যা মোট ঋণের ৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।
সূত্র আরও জানায়, মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। যা ডিসেম্বর ২০১৮ শেষে ছিল ৯৩ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৩ মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৬ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সুশাসনের অভাব, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, অব্যবস্থাপনা ও নানা অনিয়মে দেয়া ঋণ আর আদায় হচ্ছে না। অন্যদিকে বিশেষ সুবিধায় পুনর্গঠন করা ঋণ আবার খেলাপি হচ্ছে। ফলে লাগামহীনভাবে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। এতে করে জনগণের আমানত গ্রহণ করলেও তার সুরক্ষা দিতে পারছে না ব্যাংকগুলো।
সূত্র জানায়, দেশে ব্যবসারত বিদেশি ৯ ব্যাংক ঋণ বিতরণ করেছে ৩৬ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ২ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৬ দশমিক ২০ শতাংশ। খেলাপি ঋণ তিনটি শ্রেণীতে বিভাজন করা হয়। একটি নিম্নমান, সন্দেহজনক এবং মন্দ বা ক্ষতিজনক মান।
ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে তার বেশির ভাগই আমানতকারীদের অর্থ। আমানতকারীদের অর্থ যেন কোনো প্রকার ঝুঁকির মুখে না পড়ে সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। এর একটি হলো প্রভিশন সংরক্ষণ।
নিয়মানুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণীকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে ৫ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। এছাড়া নিম্নমান বা সাব স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কুঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংকের আয় খাত থেকে অর্থ এনে এ প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয়। এতে করে কমছে মুনাফা।
এআই/একেএস