অর্থবছর পরিবর্তন করার পরামর্শ দিয়েছেন বিরোধী দলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ।
শনিবার (২৯ জুন) জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থ বছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ দাবি করেন।
অর্থবছর পরিবর্তন করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেক দেশেই সে দেশের সুবিধা অনুযায়ী অর্থবছর হয়ে থাকে। ভরা বৃষ্টির মৌসুমে আমাদের অর্থবছর শুরু হয়। সেই কথাটা মাথায় রেখে আমাদের চিন্তা করা দরকার। যদি অর্থ বছর পরিবর্তন করা যায় তাহলে আমাদের আরো বেশি উন্নয়ন হবে বলে আমি মনে করি।
রওশন বলেন, কালো টাকা সাদা করার বিষয় প্রত্যেক দেশেই আছে। আমাদের এখানে যে বড় বড় ব্যবসায়ীরা আছেন তাদেরকে এই সুযোগটা দিলে তারা এখানেই বিনিয়োগ করবেন। নইলে তারা টাকাগুলো বাইরে নিয়ে চলে যাবেন। কালো টাকা সাদা করে যদি এখানে বিনিয়োগ করে তাহলে সে সুযোগ করে দিবেন। কারণ এখানে ইন্ডাস্ট্রি গুলো করলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
নারীদের জন্য আলাদা ব্যাংকের দাবি জানিয়ে রওশন এরশাদ বলেন, নারী উদ্যোক্তার কথা অনেক শুনি। আসলে কিন্তু কোনো কাজ হয় না। বলা হয়েছিলো নারীদের জন্য একটি ব্যাংক দিয়ে দিতে। নারীরা যাতে এখান থেকে ঋণ নিতে পারে। নিজেরা নিজেরা সেই টাকা দিয়ে উদ্যোগ নিয়ে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করতে পারেন নিজের জন্য।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে এটা করা হলে অনেক ভালো হয়। নারীদের জন্য একটা ব্যাংক করে দেন এবং সেটার ব্রাঞ্চ যদি জায়গায় জায়গায় করে দেন, তাহলে নারী উদ্যোক্তা কিন্তু অনেক বেশি সৃষ্টি হবে। সুযোগ-সুবিধা পাবে এবং তারা সে টাকা নিয়ে বিনিয়োগ করে নিজে স্ববলম্বি হবেন অন্যদের স্ববলম্বি হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দেবেন।
বিরোধী দলীয় উপনেতা বলেন, ধান হলো। ধান আমরা কিছুই করতে পারলাম না। কৃষকরা মাথায় হাত দিয়ে ধানে আগুন দিল। এটা কেন হলো?
কৃষকরা কেন ক্ষেতে আগুন দিল সে বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ও খাদ্যমন্ত্রীর কাছে জবাব চান তিনি।
তিনি বলেন, অনেক লোক আছে যারা ছোট ছোট পুঁজি নিয়ে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে। এর আগেও একবার দেখা গেছে শেয়ার বাজারে ধ্বস নেমেছিল। সেই অবস্থা থেকে এখন উঠে আসা গেছে। সেই ধরণের অবস্থা কখনো যেন না হয়। ছোট ছোট বিনিয়োগকারীরা ওখানে বিনিয়োগ করেন। সেখান থেকে লাভ নিয়ে জীবন-যাপন করেন। সাধারণ মানুষ যেন পুঁজি বাজারে আগ্রহী হয় সে বিষয়ে আকর্ষণীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সঞ্চয়পত্রের সুদের হার উচ্চ থাকলে মানুষ পুঁজিবাজারে আগ্রহী থাকবে না।
রওশন এরশাদ বলেন, অর্থমন্ত্রী অসুস্থ থাকায় প্রধানমন্ত্রী এই বাজেটের সঙ্গে বিশদ ভাবে সম্পৃক্ত হয়েছেন। কোথায় কী বরাদ্দ দিতে হবে, কোথায় কী কমাতে হবে এটা উনি ভালোভাবে জানতে পেরেছেন।
তিনি বলেন, রাজস্ব আদায় আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতিবছরই আমাদের এই ধরণের বাজেট হয়ে থাকে। সরকারের রাজস্ব আদায় প্রতিবন্ধকতায় পরিণত হয়েছে। কারণ প্রতিবন্ধকতা দূর করতে যে ধরণের সংস্কার কাযক্রম নেওয়ার দরকার সে ধরণের সংস্কার প্রস্তাব বাজেটে নেই।
তিনি আরো বলেন, বরাবরের মতো আগামী বাজেটেও আমরা ঘাটতি লক্ষ্য করছি। যত সমস্যা এই ঘাটতি অর্থায়নে। অর্থমন্ত্রী প্রত্যাশা করছেন যে বৈদেশিক সহায়তা পাবেন। অন্যদিকে আভ্যন্তরীণ উৎস থেকে অর্থ নেয়া হবে। এমনিতেই চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়ে আছে ব্যাংক খাতগুলো। নগদ অর্থ নেই তাদের কাছে। ঋণ পাচ্ছেন না বেসরকারি খাত। অথচ সেখান থেকেই অর্থমন্ত্রী পরিকল্পনা করেছেন তিনি ঘাটতি পূরন করার পদক্ষেপ নেবেন।
বিরোধী দলীয় উপনেতা বলেন, ‘সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হবে বেসরকারি বিনিয়োগ নির্ভর কর্মসংস্থান সৃষ্টি। সেই পরিপেক্ষিতে ঘাটতি বাজেট পূরণে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার বেসরকারি খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জন্য দোয়া চেয়ে রওশন বলেন, ‘উনি এখন অনেক বেশি অসুস্থ আছেন। আস্তে আস্তে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এখন কিছুটা ভালোর দিকে। কিন্তু দুর্বল রয়ে গেছেন। সে জন্য আমরা মানসিক ভাবে অত্যন্ত বিপর্যস্ত। আমি আশা করবো। আল্লাহর রহমতে সুস্থ হয়ে উঠবেন। আমি আপনাদের সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করছি ওনার আরোগ্য লাভের জন্য। আপনারা সবাই মিলে ওনার জন্য একটু দোয়া করবেন।’
এইচএস/বিএস