• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ২৯, ২০১৯, ০৮:৩৬ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ২৯, ২০১৯, ০৮:৪১ এএম

বেসরকারি ব্যাংকের ঋণ প্রবাহে ভাটা, বুধবার ঘোষণা হবে মুদ্রানীতি

বেসরকারি ব্যাংকের ঋণ প্রবাহে ভাটা, বুধবার ঘোষণা হবে মুদ্রানীতি

ব্যাংকের তারল্য সঙ্কট, ঋণের উচ্চ সুদহারসহ নানা কারণে ভাটা পড়েছে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ছয় বছরের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে ঋণপ্রবাহের হার। সদ্য বিদায়ী অর্থবছর শেষে বেসরকারি খাতে ব্যাংকের ঋণপ্রবাহ তলানিতে নেমে গেছে। গত জুন পর্যন্ত বার্ষিক ঋণপ্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ১১ শতাংশের মতো। এটি চলতি মুদ্রানীতির ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৫ শতাংশ কম। এমন বাস্তবতায় চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) জন্য নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা না থাকায় নতুন মুদ্রানীতি আরো সংকোচনমুখী করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।  কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির আগামী ৩১ জুলাই এটি ঘোষণা করবেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য বাজারে মুদ্রা ও ঋণ সরবরাহ সম্পর্কে একটি আগাম ধারণা দিতে প্রতি ছয় মাসের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮.২ শতাংশ। আর মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫.৫ শতাংশ। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, স্বল্প মেয়াদে মূল্যস্ফীতি হ্রাসের পাশাপাশি শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদার কারণে প্রবৃদ্ধির উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এর পরও যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউসহ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দাভাব, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্য সংঘাতজনিত অনিশ্চয়তা, বৈশ্বিক সংকুচিত অর্থব্যবস্থা, বিলম্বিত ব্রেক্সিট পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় অর্থবাজারে ক্রমবর্ধমান শ্রেণীকৃত ঋণের হার এবং কিছুটা সংকুচিত উদ্বৃত্ত তারল্য পরিস্থিতি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এই ঊর্ধ্বগতির ধারাকে ব্যাহত করতে পারে। এমন বাস্তবতা মাথায় রেখেই নতুন মুদ্রানীতির ভঙ্গিমা প্রায় চূড়ান্ত করে এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সূত্র জানিয়েছে, নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ চলতি মুদ্রানীতির চেয়ে বেশ খানিকটা কমিয়ে ধরা হচ্ছে। অর্থাৎ আগের চেয়ে আরো সংকোচনমুখী হচ্ছে নতুন মুদ্রানীতি। যদিও তা চলতি মুদ্রানীতির প্রকৃত অর্জনের চেয়ে কিছুটা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হবে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা প্রকৃত অর্জন থেকে কিছুটা বাড়িয়ে ধরা হবে। তবে চলতি মুদ্রানীতি লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে তুলনা করলে তা অনেকটাই কমবে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, গুণগতমানের উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের স্বার্থেই বেসরকারি ঋণে গতি আনার বিকল্প নেই। এ জন্য বেসরকারি ঋণ কেন বাড়ছে না তার কারণ অনুসন্ধানের পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, মুদ্রানীতি নিয়ে বেশি মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই। কারণ মুদ্রানীতি থাকে এক জায়গায়, আর অর্থনীতির বাস্তব চিত্র থাকে আরেক জায়গায়। এর মানে মূল সমস্যা হলো বাস্তবক্ষেত্রে, সেটাকে মুদ্রানীতির মাধ্যমে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। 

বাস্তব সমস্যাগুলো কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্ন কারণেই মানুষ বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে না বলেই আমার ধারণা। এ ছাড়া ব্যাংকিং খাতে নান রকম সমস্যা রয়েছে, যেগুলো মুদ্রানীতির বাইরে থেকেই সমাধান করতে হবে। তাঁর মতে, রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল থাকার পরও বেসরকারি ঋণপ্রবাহ কেন বাড়ছে না, এটা কি ব্যাংকে তারল্য সংকটের জন্য হয়েছে, নাকি ঋণের চাহিদা নেই সেটা অনুসন্ধান করা দরকার।

প্রসঙ্গত, খেলাপি ঋণের আধিক্য, তারল্য সংকট এবং ঋণ ও আমানতের অনুপাত (এডিআর) সমন্বয়ের চাপে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণে ধীরে চলো নীতিতে রয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। অনেক ব্যাংকই শিল্পে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন বন্ধ করেছে। অন্যদিকে উচ্চ সুদসহ আরো কিছু কারণে ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারাও ব্যাংকঋণের চাহিদা করছেন কম।

এআই/আরআই

আরও পড়ুন