শরীয়তপুরে পাশাপাশি দুই উপজেলার মাঠে ফুলকপির দুটি খেত। খেত দুটিতে সবুজ পাতার ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে রঙিন ফুলকপি। একটি খেতের ফুলকপির রং বেগুনি, অপরটির হলুদ। বাহারি রঙের ফুলকপি দুটির নামও সুন্দর। বেগুনি রঙের ফুলকপির নাম ভ্যালেন্টিনা আর হলুদ রঙের ফুলকপির নাম ক্যারোটিনা।
নতুন দুটি জাতের এই রঙিন ফুলকপি চাষ করে সফল হয়েছেন কৃষক শাহিন আলম ও বাবুল খলিফা।শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার জয়নগর ইউনিয়ন চর খোড়াতলা গ্রামে বাড়ি শাহিন আলমের। আর সদর উপজেলার শৌলপাড়া ইউনিয়নের চর গয়ঘর গ্রামে বাড়ি বাবুল খলিফার। খোড়াতলা ও গয়ঘর মাঠে তাঁরা এই ফুলকপির চাষ করেছেন।
জেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, জাজিরা ও সদর উপজেলার এবার দেড় একর জমিতে এই দুই জাতের ফুলকপি চাষ হয়েছে। সাদা ফুলকপির চেয়ে এই দুই জাতের রঙিন ফুলকপিতে পুষ্টিগুণ বেশি। দেখতেও সুন্দর। গতানুগতিক সাদা রঙের ফুলকপির চেয়ে রঙিন ফুলকপির বাজারমূল্য বেশি।
রঙিন ফুলকপির খেতে গিয়ে দেখা গেছে, কিছুটা লম্বা সবুজ পাতার আড়ালে ফুটে আছে রঙিন ফুলকপি। খেত দুটিতে ফুটে আছে বেগুনি ও হলুদ রঙের ফুলকপি।
খেতে দাঁড়িয়ে কৃষক শাহিন আলম জানান, তিনি গত বছর বেসরকারি সংস্থা শরীয়তপুর ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (এসডিএস) থেকে ভ্যালেন্টিনা ও ক্যারোটিনা জাতের ফুলকপির বীজ সংগ্রহ করেন। গত বছর তিনি দুই জাতের বীজ থেকে ছয়শত চারা উৎপাদন করেন। পরীক্ষামূলকভাবে ১০ শতক জমিতে চারাগুলো লাগান। সব মিলিয়ে ১০ শতক জমিতে তাঁর ছয় হাজার টাকা খরচ হয়। তিনি ৪০ হাজার টাকার ফুলকপি বিক্রি করেন।
তিনি আরও জানান, এবার তিনি ৪০ শতক জমিতে ২ হাজার ভ্যালেন্টিনা এবং ক্যারোটিনা জাতের ফুলকপির চারা লাগিয়েছেন। এতে তাঁর খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা।
ভ্যালেন্টিনা জাতের ফুলকপি বেগুনি দুই থেকে সোয়া দুই কেজি এবং ক্যারোটিনা জাতের হলুদ ফুলকপি এক কেজি থেকে এক কেজি ২০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজন হয়েছে। তিনি প্রতি কেজি রঙিন ফুলকপি বিক্রি করেছেন ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।
চাষি বাবুল খলিফা বলেন, ‘এবছর প্রথম ১০ শতক জমিতে হলুদ ও গোলাপি রঙের ফুলকপি চাষ করেছি। বাজারে বিক্রি শুরু করেছি। চাহিদাও অনেক। বাজারে চাহিদা থাকায় আগামী বছর আরও বেশি জমিতে রঙিন ফুলকপি চাষ করবো।’
এই দুই জাতের ফুলকপি চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে এসডিএসের সমন্বিত কৃষি ইউনিটের কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. খাজি আলম জানান, ভ্যালেন্টিনা ও ক্যারোটিনা জাতের ফুলকপি সাধারণ সাদা ফুলকপির মতোই পরিচর্যা করতে হয়।
অল্প জমিতে এই ফুলকপি চাষ করে বেশি লাভ পাওয়া যায়। আমাদের কাছ থেকে চারা নিয়ে এলাকায় আরও কয়েকজন কৃষক এবছর অন্তত দেড় একর জমিতে এই দুই জাতের রঙিন ফুলকপি চাষ করছেন।
এসডিএসের নির্বাহী পরিচালক রাবেয়া বেগম বলেন, ‘এসডিএস কৃষি সেক্টর থেকে গত বছর এক কৃষকের মাধ্যমে বেগুনি ও হলুদ জাতের ফুলকপির চাষ করানো হয়। তাতে ওই কৃষক সাদা ফুলকপির চেয়ে রঙিন ফুলকপিতে বেশি লাভবান হয়েছেন। কৃষক লাভবান হওয়ায় এ বছর রঙিন ফুলকপির চাষ বেড়েছে বহুগুন।
এসডিএস কৃষি সেক্টর রঙিন ফুলকপি চাষ পদ্ধতিসহ বিভিন্নভাবে কৃষকদের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ফুলকপির জাত দুটি পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। রঙিন এই ফুলকপিতে আছে বিটা ক্যারোটিন, যা শরীরে ভিটামিন এ-তে পরিণত হয়।’
জাগরণ/কৃষিঅর্থনীতি/কেএপি