• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ১২, ২০১৯, ০৪:৪৯ পিএম

ক্লাস বর্জন কর্মসূচি স্থগিত

ভিপি নূরকে বুকে টেনে নিলেন শোভন  

ভিপি নূরকে বুকে টেনে নিলেন শোভন  
ভিপি পদে জয়ী নূরের সঙ্গে কোলাকুলি করলেন ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, ছবি: কাশেম হারুন


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভিপি পদে জয়ী নুরুল হক নূরকে বুকে টেনে নেন এবং এক সঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেন ছাত্রলীগের সভাপতি ও ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। 

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বিকেলে টিএসসিতে গিয়ে তিনি নূরের সঙ্গে কোলাকুলি করেন। এ সময়  নতুন ভিপি নুরুল হক ডাকসু নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে ডাকা অনির্দিষ্টকালের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। মঙ্গলবার বিকেল সোয়া চারটায় তিনি ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক শোভনের আহ্বানে এই কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।  

রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, 'ছাত্রলীগের ইতিহাস ত্যাগের ইতিহাস। বাংলাদেশকে ধারণ করে ছাত্রলীগ। হেরে যাওয়ার ব্যথা আমারও আছে। কিন্তু আমাদের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে'।  বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে, ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকুক কিংবা সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভোগান্তির শিকার হোক তা আমরা চাই না'। নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিয়ে কর্মী সমর্থকদের শান্ত থাকার আহ্বান জানান তিনি।

কর্মীদের উদ্দেশে শোভন বলেন,  ’ সবাই তো আমাদের। কে আপন, কে পর?  তুমি যদি মানুষকে পর করে দাও তাহলে তো হবে না।’ 

                    ভিপি নূরের সঙ্গে কোলাকুলি করছেন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, ছবি: কাশেম হারুন 
 তিনি আরও বলেন, ‘তোমাকে মনে রাখতে হবে তুমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মী। ছাত্রলীগ কর্মীদের মন অনেক বড় হতে হয়। আমার একটা জায়গা আছে, আমার জায়গা এভাবে নষ্ট করো না, এটা আমার অনুরোধ।’

যারা নির্বাচিত হয়েছেন সবার  সঙ্গে একসাথে কাজ করার কথা জানিয়ে শোভন বলেন, ‘নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হকও আমাদের সাথে কাজ করবে। সবাইকে নিয়ে আমরা কাজ করতে চাই।’

এদিকে এর আগে দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রলীগের অঙ্গ সংগঠন হিসেবে কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন নুরুল হক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, কারচুপি করেও নির্বাচনে আমাকে ঠেকানো যায়নি। নির্বাচিত হওয়ার পরেও হামলার শিকার হয়েছি'।

সে সময় ছাত্রলীগকে 'গুজব সংগঠন' আখ্যা দিয়ে নুরুল হক আরও বলেন, ডাকসু নির্বাচনে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন জড়িত ছিল। ডাকসু নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কারচুপি করে ছাত্রলীগকে সহযোগিতা করেছ বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

এ সময় ভিপি ও সমাজসেবা সম্পাদক পদ বাদে বাকি ২৩টি পদে আবারও নির্বাচনের দাবি জানিয়ে পুন:তফসিল না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান, সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের এই যুগ্ম আহ্বায়ক।

                             নূরকে সঙ্গে নিয়ে কথা বলছেন শোভন, ছবি: কাশেম হারুন 

নূর বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পরেরদিনই ক্যাম্পাসে এসে ধাওয়ার মুখে পড়েন ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক।  দুপুরে ক্যম্পাসে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আমাকে ধাওয়া দেয়া হয়। এরমধ্যেই ছাত্রদলের সঙ্গেও একটি গ্রুপের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তাদের অভিযোগ ছাত্রলীগ এই ধাওয়া দিয়েছে।  পরে পুরো ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।  ঘটনার বিরুদ্ধে তখনই ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। পরে বক্তব্যে কোটা আন্দোলনের এই নেতা দাবি করেন, 'সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ডাকসুতে একটি পদেও ছাত্রলীগ বিজয়ী হবে না'।
                                 শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নুরুল হক নূর, ছবি: কাশেম হারুন 

সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসু জিএস ও এজিএসসহ ডাকসুর ২৫ পদের মধ্যে ২৩টিতে বিজয়ী হয় ছাত্রলীগ। তবে, ভিপি নির্বাচিত হন কোটা আন্দোলনের নেতা নুরুল হক নুর। নুরুল হক নুর'কে ডাকসুর ভিপি পদে জয়ী ঘোষণার পর থেকেই বিক্ষোভ করছে ছাত্রলীগ। 

মঙ্গলবার উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগের কর্মীরা। নতুন ভিপিকে 'শিবির' আখ্যা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নুরুকে বহিষ্কার ও ভিপি পদের ফল বাতিলের দাবি করছেন তারা।

এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেছেন, ডাকসুতে পুনরায় নির্বাচনের কোনো সুযোগ নেই। ঢাবিতে নিজ কার্যালয়ে মঙ্গলবার দুপুরে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

প্রোভিসি বলেন, 'দেশের মানুষ ডাকসু নির্বাচন দেখেছে মিডিয়ার মাধ্যমে, মিডিয়া সাক্ষী। দু'টি হলের মধ্যে একটিতে সামান্য অনিয়ম হয়েছে। আমরা সেখানে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছি। আরেকটি হলে অনিয়ম বলবো না, হাঙ্গামা হয়েছে। কাজেই ডাকসু নির্বাচন যারা বর্জন করেছে, সেটি তাদের নিজস্ব ব্যাপার। তবে নির্বাচন বাতিল করার এখন কোনো সুযোগ আছে বলে মনে করি না'।

জাহো/বিএস