||মির-হোসেন সরকার
২৭ কিলোমিটারের নদী বুড়িগঙ্গাকে বলা হয় ঢাকার প্রাণ। আর এ বুড়িগঙ্গা নদীর পানির কথা মনে হলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে উৎকট ঝাঁঝালো গন্ধের কালো পানি। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বর্ষা আর করোনা মহামারি এই লকডাউনের প্রভাবে অনেকটা বদলে গেছে পানি রং, গন্ধ। কিছুটা হলেও প্রাণ ফিরেছে ঢাকার জন্মদাত্রী বুড়িগঙ্গায়। পানিতে আগের মতো গন্ধ নেই। পানির রং বদলে ঘন কালো বর্ণ উধাও! বেড়েছে অক্সিজেনের পরিমাণও। নদীতে আছড়ে পড়ছে ঢেউয়ের ওপরে ঢেউ। স্বচ্ছ জলে দু’পাড়ে দৃশ্যতায় এখন পাল তোলা নৌকা। আকাশে এখন উড়ছে পাখির দল। চারদিকে বিস্তৃত টলটলে জলরাশি। পড়ন্ত বিকেলের সূর্যের ছবি সেই জলে। মুক্ত হাওয়া বইছে এখন বুড়িগঙ্গার পাড়ে। তবে এই সুযোগে প্রাণ-প্রকৃতিও বেড়ে উঠছে নদীর জলে। স্বচ্চ পানিতে ভাসছে কচুরিপনা। এ যেন সবুজের সমারহ; এ যেন সেই শত বছর আগের পুরানো নদী।
নগর ও জনপদের কোল ঘেঁষে বয়ে যাওয়া এ নদী দেখতে আবারও দু’পাড়ে আনাগোনা পর্যটকদের। নতুন করে ফিরে পাওয়া এই বুড়িগঙ্গার মধ্যে আলপনা কেটে এগোচ্ছে আমাদের ছোট্ট নৌকা। বুড়িগঙ্গা নদীকে ঘিরেই হাজারও মানুষের জীবন-জীবিকা নির্বাহ। এমনই একজন বেলাল হোসেন। বৈঠা বাইতে বাইতে এক আলাপকালে জানান বুড়িগঙ্গার যৌবনের কথা। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে এ নদীতে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। বরিশাল থেকে ৩০ বছর আগে ঢাকার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান। এর পর পরিচিত এক লোকের পরামর্শে বুড়িগঙ্গা নদী ঘিরে শুরু হয় তার জীবন-জীবিকার পালা। গত ২০ বছর ধরে এই নদীর বুকে ভেসে বেড়াচ্ছেন বেলাল হোসেন। তার কথায়, আজ থেকে কুড়ি বছর আগের বুড়িগঙ্গা অনেক বড় ছিল। ছিল না কোনো গন্ধ। পর্যটকদের ভিড়ে দু’পাড়ে সৌন্দর্যতায় ভরে উঠতো। টলটলে জলরাশিতে মাছের দেখা মিলতো। পাওয়া যেত বড় বড় মাছ। এই নদীকে ঘিরেই চলত হাজারও মানুষের জীবন। সেই থেকে জলের মায়া ছাড়তে পারেননি তিনি।
নির্মল এই পরিবেশের আবেশ গায়ে মেখে নিতে বুড়িগঙ্গায় ছুটে এসেছেন শফিক মিয়া। বদলে যাওয়া স্বচ্ছ বুড়িগঙ্গায় ঘুরে বেড়ানোর লোভ ছাড়তে পারছেন না বলেই এক মাসে দু’বার এলেন এসেছেন। তিনি জানান, মা-বাবার মুখে অনেক শুনেছি বুড়িগঙ্গার ঐতিহ্যের কথা। খুব ইচ্ছা ছিলো নদীটি দেখার। কিন্তু দুর্ভাগ্য, মা-বাবার মুখে যে বুড়িগঙ্গার কথা শুনেছি, সেই বুড়িগঙ্গার আজ অস্পষ্ট। হারিয়ে গেছে এ নগরীর মাঝে। যে নগরীর পত্তন হয়েছিলো এ নদীর গোড়ায়, আজ সেই নদী পড়ে আছে গড়ে তোলা নগরীর কোণায়। তবুও আগের চেয়ে ভালো লাগছে। পানি স্বচ্ছতা অনেকটাই ফিরে এসেছে। গন্ধটাও কমে গেছে। পাল্টে গেছে দু’পাড়ের দৃশ্য।
নদীপাড়ের বাসিন্দা আফজাল বলেন, হাজারীবাগের ট্যানারি স্থানান্তরের পর বুড়িগঙ্গা কিছুটা হলেও প্রাণ ফিরে পায়। তারপর এবারের এই বর্ষা মৌসুমে বুড়িগঙ্গা পেয়েছে ভরা যৌবন। বাতাস ছাড়লেই নদীতে ঢেউ ওঠে। গত এক সপ্তাহ টানা বৃষ্টির পর মাছও বেড়েছে। জেলেদের জালে ধরা পড়ছে কালি বাউস, টেংরা, চাপিলা, পুটি, নলা, রুই, কাতল, বোয়াল, শিং, মাগুর, কৈ, বাইমসহ নানা প্রজাতির মাছ।