বিশ্বে বায়ুদূষণে আজও শীর্ষস্থান দখল করেছে রাজধানী ঢাকা। বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা সবার ওপরে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের বায়ুমান যাচাইবিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘এয়ার ভিজ্যুয়াল’ এর বায়ুমান সূচক (একিউআই) থেকে এ তথ্য জানা যায়।
একিউআই অনুযায়ী, ঢাকায় আজ বায়ু দূষণের মানমাত্রা ২৪১; যা গতকাল সকাল ১০টায় ২৬৯ রেকর্ড করা হয়। এর অর্থ হলো বাতাসের মান ‘অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ে রয়েছে।
একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে স্বাস্থ্য সতর্কতাসহ তা জরুরি অবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ অবস্থায় শিশু, প্রবীণ ও অসুস্থ রোগীদের বাড়িতে অবস্থানের এবং অন্যদের বাড়ির বাইরের কাজে গেলে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা ছাড়া দ্বিতীয় অবস্থানে আছে চীনের উহান ও কাজাকিস্তানের নুর সুলতান শহর, যাদের দূষণের মাত্রা যথাক্রমে ২৩১ ও ২২৯।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছয় ধরনের পদার্থ এবং গ্যাসের কারণে ঢাকায় দূষণের মাত্রা সম্প্রতি অনেক বেড়ে গেছে। এর মধ্যে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ধূলিকণা অর্থাৎ পিএম ২.৫ এর কারণেই ঢাকায় দূষণ অতিমাত্রায় বেড়ে পরিস্থিতি নাজুক হয়ে উঠছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ক্যাপসের পরিচালক ও স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘বায়ু দূষণের মাত্রা ২০০ ছাড়ালে আমরা বলি মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর। ৩০০ হলে দুর্যোগপূর্ণ হিসেব বিবেচনা করি। শীত শুরু হলে শুষ্ক মৌসুমের কারণে এ ধরনের আবহাওয়া থাকে। আমরা আগেই বলেছিলাম, একসময় জরুরি অবস্থাও জারি করা হতে পারে, যদি সরকার বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর কোনও পদক্ষেপ না নেয়।’
ক্যাপসের এক গবেষণায় সম্প্রতি বলা হয়, রাজধানীতে ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে গড় বায়ুদূষণ বেড়েছে ৯ দশমিক ৮ ভাগ। বায়ুমান সূচক (একিউআই) অনুযায়ী, গড়ে ২০২০ সালে দূষণের মাত্রা ছিল ১৪৫; যা ২০২১ সালে এসে হয় ১৫৯ দশমিক ১।
জরিপে বলা হচ্ছে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বায়ুমান সূচকের (একিউআই) গড় মাত্রা ছিল ২৩৫ দশমিক ১। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে বেড়ে দাঁড়ায় ২৬১ দশমিক ৬; যা দুই বছরের হিসাবে ১১ দশমিক ৩ ভাগ বেশি। একইভাবে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ছিল ২২০ দশমিক ৫। ২০২১ সালে বেড়ে হয়েছে ২৩১ দশমিক ৪।
গবেষণায় দেখা যায়, প্রতি মাসের গড় প্রতি ঘনমিটার অতিসুক্ষকণা (পিএম ২.৫) পরিমাপ করে দেখা যায়, তেজগাঁও, আগারগাঁও, মিরপুর-১০, গুলশান-২, শাহবাগ, ধানমন্ডি-৩২ এবং আবদুল্লাহপুর এলাকায় গড় মাসিক পিএম ২.৫ এর ঘনত্ব বেশি। লক্ষ করা যায়, যেসেব এলাকায় বিভিন্ন ধরনের শিল্পকারখানার উপস্থিতি রয়েছে, রাস্তা নির্মাণ ও মেরামতের কাজ চলমান, মেট্রোরেলের কাজ চলমান এবং কয়েকটি রাস্তার সংযোগ যেখানে ঘটেছে; সেখানে পিএম ২.৫ এর ঘনত্ব বেশি ছিল। সবচেয়ে বেশি দূষণ দেখা যায়, তেজগাঁও এলাকায়। যেখানে ঘনত্ব বাংলাদেশের নির্ধারিত মান থেকে ৪.৬৪ গুণ বেশি এবং তুলনামূলক কম দূষিত সংসদ এলাকা যেখানে দূষণের মান ৩.৫৯ গুণ বেশি।