• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২০, ২০১৯, ০৬:৪৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ২০, ২০১৯, ০৯:৩৫ পিএম

স্মৃতির শহর রাজশাহী-দুই 

স্মৃতির শহর রাজশাহী-দুই 
জাকির হোসেন

শরৎ পূর্ণিমার আবির ছড়ানো সন্ধ্যায় দিগন্ত জোড়া কাশবন, মায়াবী চাঁদ আর রূপালি পদ্মার দিকে তাকালে জীবনকে নতুন রূপে চেনা যায়, এই অনুভব প্রায়শই উপলব্ধির মাত্রাকে ছাড়িয়ে যায়। সব কিছুকে অপার্থিব বলে মনে হয়, অলৌকিক বলে মনে হয়

........‘’........

(পূর্ব প্রকাশের পর) 
রাজশাহী কলেজের প্রাকৃতিক শোভায় একটা বিশেষ মায়া আছে। এতে শুধু চোখই জুড়ায় না মনের ভেতরে গভীর ভালোবাসার নানারকম নকশা তৈরি করে। সারি সারি গাছের দীর্ঘ শীতল ছায়া, শান্ত পুকুরের আদর, ঝাঁক বেঁধে বসন্ত বউড়ির ওড়াউড়ি,  অসংখ্য পাখির কল-কাকলি যেন পৃথিবীর শান্তি ও মঙ্গলের কথা বলে। প্রকৃতি এখানে নিতান্তই ঘরোয়া, ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মতো আন্তরিক, বান্ধবীর মতো স্নিগ্ধ, আর মায়ের মতো মমতাময়ী। প্রকৃতির অনুসঙ্গসমূহ এখানে এতো নিরিবিলি আর চুপচাপ যে এর প্রতিটি ছোট ছোট ভঙ্গি খুব স্পস্টভাবে চোখে পড়ে। যেন বিজন চৌধুরী, শফি আহমেদ, কাইয়ুম চৌধুরীর আঁকা জলরঙের ছবি। প্রকৃতির এই নির্মল সৌন্দর্য মনকে বিশেষভাবে বিশ্রাম দেয়, ক্লান্তি দূর করে, মনে শান্তি আনে। এখানে প্রকৃতির সঙ্গে মন খুলে কথা বলা যায়, সুখ-দুঃখ, আনন্দ ও বেদনার অনুভূতি বিনিময় করা যায়। কেননা এ ক্যাম্পাসের প্রকৃতির একটা নিজস্ব ভাষা আছে। এই ভাষা সে তার নিজস্বতা দিয়ে ভরে তুলেছে। ক্যাম্পাসে অগনিত শিক্ষার্থীর পায়ের আওয়াজ, ভাব বিনিময়ের মৃদু গুঞ্জরণ, বাতাসের শব্দ, পুকুরের জলের শব্দ, পাখির কিচিরমিচির, এসব যেন এ ক্যাম্পাসের নিজস্ব ভাষা। 

ঢাকা শহরে শীত আসে কয়েকদিনের অতিথি হয়ে। আর শরৎ, হেমন্ত ও বসন্ত আসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায়। সেখানেই নানা আয়োজনে এই তিন ঋতুকে বরণ করা হয়। শহরের অন্য কোনও স্থানে এই তিন ঋতুর উপস্থিতি বিশেষভাবে চোখে পড়ে না। রাজশাহী এমন নয়। এখানে ঋতুচক্রের আবর্তনে বৈচিত্র্যপূর্ণ নানারকম ফুল ফোটে। কোনও মাসেই ফুল বাদ যায় না

........‘’........

ক্যাম্পাসের সারি সারি গাঢ় সবুজ গাছের দিকে তাকালে, শান্ত পুকুরে ধারে দাঁড়ালে, সান বাধানো ঘাটে বসলে, ঘন নীল আকাশের দিকে চোখ মেললে মনে যে ভাব আসে, মনের মধ্যে যে কথা আসে, তা অন্য কোথাও আসে না। এই ভাব, এই ভাষা, এ ক্যাম্পাসের নিজস্ব ভাষা। অন্য কোথাও এটা খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ ক্যাম্পাসের বাহ্যিক রূপের গভীরে একটা আলাদা আধ্যাত্মিক রূপ আছে। চোখ মেলে তাকালে সেই রূপ সবার চোখে পড়ে না, এটা মন দিয়ে দেখতে হয়। ক্যাম্পাসের ধূসর নরম মাটি, সবুজ সতেজ ঘাস, পুকুরের স্বচ্ছ জলে ভেসে থাকা শাপলা শালুকের সবুজ পাতা, ইতস্তত নানা রঙের ফুলের সমারোহ, চত্বর জুড়ে অবিরাম আলো এবং ছায়ার মায়াবী খেলার সমন্বিত রূপ প্রতিদিন এক অদ্ভূত ব্যঞ্জনার সৃষ্টি করে। কৈশোরে যখন আমরা সবাই এই ক্যাম্পাসের ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলাম তখন এই অপরূপ সৌন্দর্য বিশেষভাবে চোখে পড়েনি। ক্যাম্পাস ছাড়ার পর এই সত্যটা বার বার মনে পড়ে। আর তখন ক্যাম্পাসের স্মৃতি হঠাৎ মনে পড়া শৈশবের স্মৃতির মতোই ক্ষণিক আনন্দের স্পর্শ হয়ে ওঠে। 

রাজশাহীর ঋতু বৈচিত্র্য সবাইকে বিশেষভাবে আন্দোলিত করে। ঢাকার মতো এক ঘেয়ে নয়। বলতে গেলে রাজধানী ঢাকা এখন দুই ঋতুর শহর। গ্রীষ্ম আর বর্ষা। গ্রীষ্মে দুঃসহ গরম আর বর্ষায় সড়কে জলাবদ্ধতার কারণে রাজধানীবাসী এই দুটি ঋতুর উপস্থিতি বিশেষভাবে উপলব্ধি করতে পারে। ঢাকা শহরে শীত আসে কয়েকদিনের অতিথি হয়ে। আর শরৎ, হেমন্ত ও বসন্ত আসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায়। সেখানেই নানা আয়োজনে এই তিন ঋতুকে বরণ করা হয়। শহরের অন্য কোনও স্থানে এই তিন ঋতুর উপস্থিতি বিশেষভাবে চোখে পড়ে না। রাজশাহী এমন নয়। এখানে ঋতুচক্রের আবর্তনে বৈচিত্র্যপূর্ণ নানারকম ফুল ফোটে। কোনও মাসেই ফুল বাদ যায় না। ছাতিম, কৃষ্ণচূড়া, শিমুল, কাঠালীচাপা, গাঁদা, গোলাপ, ডালিয়া, শিউলি, বকুল, গন্ধরাজ নিজ নিজ সৌন্দর্য, বর্ণ এবং গন্ধে সবাইকে মুগ্ধ করে। গ্রীষ্মে উজ্জ্বল রোদের মাতামাতি ও দীর্ঘ দুপুরে গাছের প্রসারিত শীতল ছায়া, বর্ষায় অঝর ধারায় বৃষ্টি, শরতে ঘন নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, হেমন্তে গোধুলী আলোয় উজ্জ্বল তরুশীর্ষ আর সোনালী রোদের মিতালী, শীতে হাড় কাপানো ঠাণ্ডা ও ঝরা পাতার ধূসর বিষন্নতা, বসন্তে আমের মুকুলের সোদা গন্ধ এবং পলাশ, শিমুলের আগুন রাঙা উচ্ছ্বাস সবার মাঝে এক অতিলৌকিক অনুভূতির সৃষ্টি করে। 

রাজশাহী কলেজে পড়ার সময় আমি ছিলাম নতুন শাখা ছাত্রাবাসে। জীবনের প্রয়োজনে নিজ নিজ পরিবারের প্রিয় স্বজনদের ছেড়ে আমরা এখানে গড়ে তুলেছিলাম একটি বিশাল পরিবার। এখানে এক আনাবিল আনন্দে ভরপুর ছিল আমাদের জীবন। হোস্টেলে ক্যান্টিনের ম্যানেজার ছিলেন শফি ভাই। ফর্সা, নাদুস-নুদুস, মধ্যবয়সী এই মানুষটি ছিলেন অতিশয় ভদ্র ও বিনয়ী

........‘’........

রাজশাহীতে আমার প্রিয় ঋতু শরৎকাল। এ শহরে শরৎ যেন এক অপার্থিব রূপ নিয়ে আবির্ভূত হয়। বর্ষার সজল বিষণ্নতা শেষে শরৎ সবাইকে ঘরের বাহির করে। শরতের সোনালী রোদ্দুর আর ঘন নীল আকাশের হাতছানি সবার মাঝে নতুন উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। পদ্মা বুকে জেগে ওঠে ধূসর কালো চর। কাশবনের জন্মান্তরে এই চরের ধূসর কালো বুক ধীরে ধীরে ঘন সবুজে ভরে ওঠে। সেই সবুজ কাশবন সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে হঠাৎ হয়ে ওঠে রূপালী। শরতের মায়াবী সন্ধ্যায় দিগন্ত জোড়া সেই কাশফুলের আড়াল থেকে উঁকি দেয় রূপালী চাঁদ। চাঁদের আলোয় সাদা মেঘের দল এক অদ্ভুত দ্যূতি ছড়ায়। চাঁদের হাসি তখন এখানে সত্যিই বাধ ভাঙে, চারদিক নরম আলোয় চিকচিক করে। ইষৎ ঠাণ্ডা ঝিরঝিরে বাতাস, চারদিকে ফুটফুটে জোসনা, আপনাতেই মনের মধ্যে একটা খুশি খুশি ভাব ভিড় জমায়। বড় ভালো লাগে।

শরতের পূর্ণিমায় সবচেয়ে তীব্র আলো হয়। বানডাকা জোসনায় গোটা শহর প্লাবিত হয়, বিগত যৌবনা পদ্মার বুক ঝিলমিল করে। শরৎ পূর্ণিমার আবির ছড়ানো সন্ধ্যায় দিগন্ত জোড়া কাশবন, মায়াবী চাঁদ আর রূপালি পদ্মার দিকে তাকালে জীবনকে নতুন রূপে চেনা যায়, এই অনুভব প্রায়শই উপলব্ধির মাত্রাকে ছাড়িয়ে যায়। সব কিছুকে অপার্থিব বলে মনে হয়, অলৌকিক বলে মনে হয়।

লায়ন ভাই, দুলু ভাই, কবীর ভাই, সহিদুল ভাই আর মুকুল ভাই ছিলেন আনন্দ প্রিয় মানুষ, তারা সারাদিন আড্ডা দিয়ে আর কার্ড খেলে সময় কাটাতেন। আমার রুমমেট রহিম ভাই ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে ধ্যানমগ্ন থাকতেন আর পাশের রুমের ইব্রাহিম ভাই নিজেকে ব্যাপিত রেখেছিলেন বাংলা সাহিত্য চর্চায়, দীর্ঘদেহী সুলতান ভাই গভীর রাত পর্যন্ত টেবিল টেনিস খেলতেন

........‘’........

ইদানিং প্রায় প্রায়শই পুরোনো বন্ধুরা মনের জানালায় উঁকি দেয় বাবু, গাজী, তালাল, তারিন, নাসির, হারুন, আনোয়ারের মুখ আমাকে স্মৃতিকাতর করে। তখন আনন্দে আমি যেন গোটা বিশ্বটাকেই অতিক্রম করে যাই, অনন্তলোকে হারিয়ে যাই। আমার সমস্ত দুঃখ বোধ, ব্যর্থতার বোধ মুর্হূতেই অলৌকিক পাখি হয়ে উড়ে যায়, আমার চারপাশ আলোয় ঝলমল করে। সত্যিই, মানুষের মনে অতীতের মোহ বড়ই আশ্চর্য। এক সময় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও অভিমানের অন্ত ছিল না, সময়ের স্রোতে মান-অভিমান সবকিছু ভেসে যায়। স্মৃতির রঙিন কাচের ভেতর দিয়ে সব কিছুই অসহ্য সুন্দর দেখায়, মনোরম দেখায়। আর আমি তখন যেন গ্রিক দেবতা ইকারুসের মতো মোমের ডানা মেলে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে উড়ে বেড়াই। মৃত্যুভয় আমাকে এতটুকু স্পর্শ করতে পারে না। 

রাজশাহী কলেজে পড়ার সময় আমি ছিলাম নতুন শাখা ছাত্রাবাসে। জীবনের প্রয়োজনে নিজ নিজ পরিবারের প্রিয় স্বজনদের ছেড়ে আমরা এখানে গড়ে তুলেছিলাম একটি বিশাল পরিবার। এখানে এক আনাবিল আনন্দে ভরপুর ছিল আমাদের জীবন। হোস্টেলে ক্যান্টিনের ম্যানেজার ছিলেন শফি ভাই। ফর্সা, নাদুস-নুদুস, মধ্যবয়সী এই মানুষটি ছিলেন অতিশয় ভদ্র ও বিনয়ী। শফি ভাইয়ের সহযোগী ছিলেন মোকাররম ভাই ও ইউসুফ ভাই। মোকাররম ভাই ছিলেন লম্বা ও কৃষকায় আর ইউসুফ ভাই ছিলেন মাঝারী গড়নের। এদের তিনজনেরই বাড়ি সুদূর কুমিল্লায়। কয়েক বছর আগে আমাদের সেই শফি ভাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আর মোকাররম ভাই হারিয়েছেন তার প্রিয় সন্তান। সন্তান হারানোর নিদারুন কষ্ট বুকে চেপে চাকরি ছেড়ে নিজ গ্রামে ফিরে গেছেন তিনি। তবে বহু ঘটনার সাক্ষী হয়ে, বহু বিহর-বেদনার স্মৃতি বুকে চেপে ইউসুফ ভাই আজও নতুন শাখা ছাত্রাবাসে কর্মরত আছেন। এরাই ছিলো আমাদের আপনজন, এরাই ছিলো আমাদের প্রিয় স্বজন, আমাদের আত্মার পরম আত্মীয়।   

হোস্টেলের সেই সময়ের বড় ভাই এবং সহপাঠী বন্ধুদের এখন প্রায়শই মনে পড়ে। বড় বিচিত্র স্বভাবের মানুষ ছিলো তারা সবাই। এখন কারো সঙ্গেই আমার কোনও যোগাযোগ নেই। বড় ভাইদের মধ্যে রিজভী ভাই দিনের অধিকাংশ সময় ঘুমাতেন এবং সাবাতানির গান শুনতেন। বেশ সমঝদার মানুষ ছিলেন তিনি। লিটন ভাই ছিলেন প্রেমিক পুরুষ। তিনি বেশ নিয়ম করে প্রেম করতেন, প্রেমকে তিনি ধ্যান মনে করতেন। একবার বেশ ঘটা করে একটি চায়নিজ রেস্তোরাঁয় তিনি তার প্রেমের ‘প্রোপোজ ডে’ পালন করেছিলেন। এ নিয়ে আমাদের হামিদুল ভাইয়ের আক্ষেপের অন্ত ছিল না। কেননা তার জীবনে কোনো প্রেম ছিলো না, এই প্রেমের জন্য তার দুঃখ, কষ্ট, বেদনা, বঞ্চনা আর হা-হুতাশের অন্ত ছিলো না। লায়ন ভাই, দুলু ভাই, কবীর ভাই, সহিদুল ভাই আর মুকুল ভাই ছিলেন আনন্দ প্রিয় মানুষ, তারা সারাদিন আড্ডা দিয়ে আর কার্ড খেলে সময় কাটাতেন। আমার রুমমেট রহিম ভাই ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে ধ্যানমগ্ন থাকতেন আর পাশের রুমের ইব্রাহিম ভাই নিজেকে ব্যাপিত রেখেছিলেন বাংলা সাহিত্য চর্চায়, দীর্ঘদেহী সুলতান ভাই গভীর রাত পর্যন্ত টেবিল টেনিস খেলতেন। সহপাঠীদের মধ্যে খাদেমুল, রেজাউল, পল্লব, মিঠুন, কামাল, হারুন ছিলো বেশ পড়ুয়া। এরা সবাই দিনরাত শুধু পড়তো আর পড়তো। আমার বন্ধু বাবুর নেশা ছিলো গভীর রাতে চা খাওয়ার। সে থাকতো ‘ডি’ ব্লকে। প্রতিদিন মধ্যরাতে সে আমাকে নিয়ে যেতো সাহেব বাজার সোনাদিঘীর মোড়ে মাজদা হোটেলে। চলতিপথে আমরা বসন্ত কুমারী হোস্টেল থেকে সঙ্গে নিতাম বন্ধু তালালকে। চা খেয়ে আমার শহর বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরে বেড়াতাম। রাজশাহীর রাতের নিরবতা ও সৌন্দর্য উপভোগ করতাম, সেই সময়ের রাতের রাজশাহী আমাদের রহস্যময় এক মায়াবী জালে আচ্ছন্ন করতো।  প্রায় তিরিশ বছর আগে আমি এদের সবাইকে হারিয়ে ফেলেছি। এদের কারো সঙ্গেই আমার কোনও যোগাযোগ নেই।

বাবুর কথা আমার বিশেষভাবে মনে পড়ে। ওর সঙ্গে আমার খুব আন্তরিকতা ছিল। আর বন্ধনটা ছিল অবিচ্ছেদ্য। সেটা বিশেষভাবে বুঝেছি যখন ওর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলো। এখনও বুঝি, যখন ওর কথা মনে পড়ে। তখন বুকের ভেতর একটা অংশে গভীর শুন্যতা অনুভব করি...

গ্রীষ্মে উজ্জ্বল রোদের মাতামাতি ও দীর্ঘ দুপুরে গাছের প্রসারিত শীতল ছায়া, বর্ষায় অঝর ধারায় বৃষ্টি, শরতে ঘন নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, হেমন্তে গোধুলী আলোয় উজ্জ্বল তরুশীর্ষ আর সোনালী রোদের মিতালী, শীতে হাড় কাপানো ঠাণ্ডা ও ঝরা পাতার ধুসর বিষন্নতা, বসন্তে আমের মুকুলের সোদা গন্ধ এবং পলাশ, শিমুলের আগুন রাঙা উচ্ছ্বাস সবার মাঝে এক অতিলৌকিক অনুভূতির সৃষ্টি করে

........‘’........

প্রায় ত্রিশ বছর বছর পর কয়েকদিন আগে ওর খোঁজ পেয়েছি। সে এখন ঠাকুরগাঁওয়ের নিজ এলাকায় একটা স্কুলে শিক্ষকতা করে। মানুষ হিসেবে যোগ্য পেশাই বেছে নিয়েছে সে। অনেক দিক দিয়েই অসাধারণ বাবু। ব্যক্তিত্বে, আচরণে, সংযমে নিজে বৃত্তের সব মানুষের চেয়ে উন্নত সে। বিশেষভাবে ব্যতিক্রমী তার আন্তরিকতা। প্রতারণা ও প্রহসন তার স্বভাবে নেই। আচার-আচরণে, চিন্তা-চেতনায় স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন। কথাবার্তা, চলাফেরা ও পোষাক-পরিচ্ছদে আছে রুচির ছাপ। অতিশয় সভ্য, শান্ত, ভদ্র ও বিনয়ী সে। সহজে কারও সঙ্গে তর্ক ও বিবাদে জড়ায় না। নির্লোভ মানুষ সে। অর্থ-বিত্ত, ক্ষমতা, যশ, সম্মান এসব কিছুর প্রতি তার বিশেষ কোনও আগ্রহ নেই। একেবারেই অন্যরকম মানুষ বাবু। 

বাবুর নানার রকম দুঃখ আছে, বেদনা আছে, অস্বস্তি আছে- মানুষ মাত্রেই থাকে। কিন্তু বাবু এ নিয়ে কোনওদিন কারও সঙ্গে হৈচৈ করে না, কারও সঙ্গে বিরোধে জড়ায় না, কারও কাছে কোনও অভিযোগ করে না। সবকিছু সে নীরবে সহ্য করে। সে নীরবে দগ্ধ হওয়ার মানুষ। তার আবেগ আছে ভেতরে কিন্তু বাইরে শান্ত। আরও একটা ব্যাপার আছে বাবুর মধ্যে, সেটা হলো আত্মগোপনের অভ্যাস। নিজের দুঃখ, বঞ্চনা, হতাশা প্রকাশের প্রত্যাশা যতটা না আছে, তার চেয়ে অনেক বেশি আছে অপ্রকাশের অভিপ্রায়...
(চলবে)

লেখক ● সাংবাদিক 

জেডএইচ/এসএমএম

আরও পড়ুন