...................
২৬ ডিসেম্বর ভোর। বসে আছি ঢাকা এয়ারপোর্ট রেলওয়ে স্টেশনে। অপেক্ষায় আছি রাজশাহীগামী সিল্ক সিটির। ট্রেনটি প্রায় দুই ঘণ্টা লেট। তবু এ নিয়ে আমার মধ্যে কোনো বিরক্তি নেই। শীতের সকাল। চারদিকে কাশফুলের মতো ঘন কুয়াশা। পূর্ব দিগন্তে বিবর্ণ মুখে উঁকি দিচ্ছে সূর্য। আমি আনমনে চেয়ে আছি তার দিকে। হঠাৎ সে মৃদু হাসি দিয়ে রাঙা হয়ে উঠল। এতে তার প্রতি আমার দৃষ্টি আরো দৃঢ় হলো, আমার মন তাকে ছেড়ে ভিন্ন পথে পা বাড়াল না। কেননা শীতের সূর্য প্রতিদিন সকালে তার অপরূপ সৌন্দর্য অর্ধেক পৃথিবীর মানুষের কাছে তুলে ধরে। আমি অনেকটা মুগ্ধ হয়েই তার সেই অনিন্দ্যসুন্দর শোভা প্রত্যক্ষ করছিলাম। হঠাৎ দেখি সূর্যের মধ্যে একটি অস্পষ্ট মুখ। সে সূর্যমুখীর মতো আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মাঝে মাঝে হাসছে, বড় রহস্যময় সেই হাসি। ধীরে ধীরে মুখটি বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠল, ‘সুনয়নার’ মুখ।
...ট্রেনটি প্রায় দুই ঘণ্টা লেট। তবু এ নিয়ে আমার মধ্যে কোনো বিরক্তি নেই। শীতের সকাল। চারদিকে কাশফুলের মতো ঘন কুয়াশা। পূর্ব দিগন্তে বিবর্ণ মুখে উঁকি দিচ্ছে সূর্য। আমি আনমনে চেয়ে আছি তার দিকে...
রাজশাহী কলেজের পুনর্মিলনীকে ঘিরে ইদানীং প্রায়ই সুনয়নাকে মনে পড়ে। কারণে-অকারণে সুনয়না আমার স্মৃতিতে বিশেষভাবে ভেসে ওঠে। সবকিছুর মধ্যেই সুনয়নাকে দেখতে পাই, তার অস্তিত্বকে প্রত্যক্ষ করি, তার মায়াবী স্পর্শ অনুভব করি। কেননা রাজশাহী শহরে সে ছিল আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ, আমার প্রিয় স্বজন, আমার আপনজন। কলেজ ক্যাম্পাসে আমি দিনভর তার সঙ্গে আড্ডা দিয়েছি, ঝগড়াঝাঁটি করেছি, ঘুরেছি নির্জন রাস্তায়, চা খেয়েছি ক্যাফেটারিয়ায়, অভিমানের খেয়ায় ভেসেছি বিপন্ন পদ্মার জলে - কাশবন দেখার ছলে দিনভর দেখেছি একে অপরকে।
সুনয়না ছিল অতিশয় ভদ্র, বিনয়ী, মধ্যবিত্ত, বহুগুণে গুণান্বিত। সে সুন্দরীও ছিল বটে, ভীষণ সুন্দরী। যতটা কল্পনা করা যায় তার চেয়ে অনেক বেশি সুন্দরী সে। তাই তার রূপের বর্ণনা না দেয়াই ভালো। মূর্তিমান করে তাকে খাটো না করাই শ্রেয়। বিমূর্ত করে রাখাই যথার্থ এই অনিন্দ্যসুন্দরীকে। তবে সুনয়নার প্রধান বৈশিষ্ট্য রূপে নয়, ছিল গুণে। গুণবতী দৃঢ়চেতা মানুষ ছিল সে। মানবিক বোধে পু্ণ্য ছিল তার হৃদয়। ছিল দুই চোখ ভরা কৌতূহল। তার ঠোঁট দুটি ছিল বিশেষভাবে লক্ষ করার মতো। বেদনায় জমানো রসের মতো তুলতুলে আশ্চর্য দুটি ঠোঁট। ক্যাম্পাসের আড্ডায় সুনয়না প্রায়ই তার ঠোঁট দুটি দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরত। তখন আনমনে কী যেন ভাবত। আবার মাঝে মাঝে অল্পতেই উল্লাসে ফেটে পড়ত। নিজের কীর্তিকাহিনি বড়াই করে বলত। সবাইকে সে আনন্দে ভাসিয়ে রাখত কেবল চঞ্চলতা ও সৌন্দর্য দিয়ে নয় - সরলতায়, বুদ্ধিতে, উষ্ণতায় এবং আত্মসম্ভ্রম বোধে।
সুনয়নার ভেতরের মানুষটিকে আমি যতই দেখেছি, ততই তার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছি। তার অন্তর্গত মানুষটি ক্রমেই আমার কাছে স্বচ্ছ থেকে স্বচ্ছতর হয়েছে। চাঁদের প্রভাকে যেমন চাঁদ থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না, সুনয়না তেমনি বিচ্ছিন্ন হয় না তার গুণাবলি থেকে। নিজ গুণাবলির জোরেই সে সব সময় তার অবস্থানে স্থীর থাকত। ঝড়ঝাপ্টায় কাত হতো না। জীবনই তাকে শিখিয়েছে জীবন কী? অনেক রকম ভয়ভীতি, বাধা-বিপত্তির বেড়াজাল দু-হাতে ঠেলে আলোর পথে পা চালিয়েছে সে।
স্বাপ্নিক মানুষ ছিল সুনয়না। বিস্তৃত স্বপ্ন ছিল তার। লেখাপড়া করবে বুয়েটে, উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হবে, চাকরি করবে, আত্মনির্ভরশীল ও স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। স্বামী হবে আধুনিক, স্মার্ট ও রুচিশীল। বসবাস করবে বড় শহরে। অবকাশ যাপন করবে সমুদ্র তীরবর্তী দূর শহরের কোনো দ্বীপে। তার স্বপ্নগুলো বিস্তৃত হতে পারেনি, পাখা মেলে উড়তে পারেনি। হঠাৎ একদিন সুনয়না বলল তার বিয়ের কথাবার্তা চলছে। সেদিন থেকে সুনয়নার কী যে হলো জানি না। হয়তো সুনয়না নিজেও জানে না। অল্পে অল্পে সে গম্ভীর ও বিষণ্ন হয়ে গেল। তার ভেতরের আবেগময় উল্লাস তখন আর সাড়া দেয় না। সে ঝিমিয়ে পড়ল। আমার কাছ থেকে সরে গেল, দূরে নয়, অন্তরালে। সুনয়নার চিন্তাজগৎ নিরাশা, হতাশা ও বিষণ্নতায় ভরে উঠল। মনে দুঃখ ও কষ্টের আনাগোনা স্থায়ী হলো। কেননা পরিবারের লোকেরা তাকে বোঝা মনে করেছিল। এটা তার জন্য অপমানজনক। অবহেলা, অপমান বুঝতে না পারার মতো বোকা সে তো নয়। কিন্তু তবু সুনয়না শান্ত ছিল। বিচলিত হয়নি। দিশেহারা হয়নি। সময়মতো ক্লাসে আসত। ক্লাস শেষে বাড়ি যেত। মাঝে মাঝে আড্ডা দিত। আড্ডায় আগের মতো হাসিঠাট্টা করত না, রাগারাগি করত না, আবার মুখের ভাব দীন-দুঃখীর মতোও করে রাখত না।
সুনয়নায় বিষণ্ন হাসি, উৎসুক চোখ আমাকে ভীষণ ব্যথিত করত। ওর জন্য কিছু করতে না পারার দুঃখে আমি ম্রিয়মাণ ছিলাম। একে অপরের বিপদে পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। তা পারিনি বলে তখন আমার মধ্যে লজ্জা এসেছিল। আমি অস্বস্তিতে চোরের মতো উসখুস করতাম।
কয়েক দিন পর সুনয়না এল নববধূর বেশে। পরনে লাল শাড়ি, সারা শরীরে বাহারি স্বর্ণালংকার। প্রথমেই সে রহস্যের হাসি হেসে বলল, “তুই তো আমাকে ভালোবাসলি না। তাই অন্যের সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলাম।”
সুনয়না একাই এসেছিল। স্বামীকে সঙ্গে আনেনি। ওর স্বামী বিশ্বখ্যাত একটি গাড়ি কোম্পানীতে চাকরি করেন। অফিসের কাজে তিনি ভীষণ ব্যস্ত। তাই আসতে পারেননি। অন্য একদিন সে তার স্বামীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে। এরপর সুনয়নার সঙ্গে আমার আর দেখা হয়নি। সে আমার জীবন থেকে হারিয়ে যায়। বোধকারি আমিও নিরুদ্দিষ্ট তার জীবন থেকে। কেননা এইচএসসি পরীক্ষা শেষে আমি রাজশাহী শহর ছাড়ি। এরপর সুনয়নার কোনো খোঁজ আমি নিইনি।
প্রায় ৩০ বছর পর কয়েক দিন আগে হঠাৎ দেখা তার সঙ্গে। শুনলাম চার কন্যা সন্তানের জননী হয়েছে সে। সুনয়না নাকি সুখেই আছে। এখন সে গৃহী, সন্তানবাৎসল, স্বামী অন্তঃপ্রাণ। শ্বশুরবাড়ির সবাই তাকে সমীহ করে, শ্রদ্ধা ও সম্মান করে। স্বামীর কাছে সে আরাধনার বস্তু। তার স্বামী বিশ্বাস করে যে সুনয়নাকে পেয়ে তার জীবন পূর্ণ হয়েছে। এই জীবনে তার আর কিছু পাওয়ার বাকি নেই। তবু মাঝে মাঝে মনে হয়, সুনয়নার প্রতিটি হাসির পেছনে রয়েছে নির্বেদ। আনন্দের পেছনে অভিশাপ। তার চোখজুড়ে লেপ্টে আছে অবসাদ। চোখ দুটি যেন অতৃপ্তির স্মারকচিহ্ন। তবে সে অতৃপ্তির বোধে পিষ্ট হয়েছে এমনটি মনে হয় না। কেননা সে প্রতিশোধ নিয়েছে সমাজের ওপর।
সুনয়নার জন্য বড় কষ্ট হলো। নিজের মনকে সান্ত্বনা দিলাম এই ভেবে যে, সুনয়না একাকিনী নয়, সে আমাদের সমাজের অনেকের একজন, এ দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণির মেয়েদের প্রতিনিধি এবং প্রতীক সে। তার সামাজিক জীবনটা সংকীর্ণ। পারিবারিক জীবন সীমাবদ্ধ। স্বপ্ন উঁচু কিন্তু শৃঙ্খলাবদ্ধ। কল্পনাবিলাসী এই চিরকিশোরী ভেবেছিল স্বপ্নকে সফল করার উপায় আছে। আশা করেছিল একটি পথ সে খুঁজে পাবেই। কিন্তু পায়নি। পাওয়ার উপায় ছিল অবশ্যই। কিন্তু সময় ও সুযোগে কোনোটিই তার ভাগ্যে জোটেনি। তাই নারী হয়ে ওঠার আগেই তাকে স্ত্রী হতে হয়েছে, মা হতে হয়েছে। দায়িত্ব নিতে হয়েছে গোটা একটি সংসারের।
আমাদের সমাজে সুনয়নাদের ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছার বিশেষ কোনো মূল্য নেই। তাদের বিনা প্রতিবাদে দুর্ভাগ্যকে বরণ করে নিতে হয়। তারা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ, সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার শিকার। সংস্কৃতি, শ্রেণি এবং সমাজব্যবস্থাকে বাদ দিলে আমরা বুঝব না তাদেরকে। বিশেষভাবে শ্রেণি না থাকলে সুনয়নার জীবনের ট্র্যাজেডিটা ঘটত কি না সন্দেহ। তবে শ্রেণিকে ছাড়িয়ে ওঠার চেষ্টা করেছে সে। আর এটা করেছে বলেই মুখোমুখি হয়েছে কঠিন দুর্ভোগের। তবু সুনয়না বাস্তববাদী বলেই সমাজের আর পাঁচ মেয়ের মতো বেঁচে আছে, অন্তত টিকে আছে।
তবে সুনয়না তার এই পরিণতি আজও মেনে নিতে পারেনি। তার ভেতরে দুঃখের নদী আজও একই গতিতে বহমান, তার কষ্টগুলো আজও জোয়ারের জলের মতো আছড়ে পড়ে হৃদয়ের গহিনে, তার ভেতরের অনুশোচনাসমূহ প্রায়ই তাকে বিদ্রূপ করে, আর অস্থিরতা তাকে নিদারুণ উপহাস করে। সুনয়না হয়তো বহুবার নীরবে-নির্জনে কেঁদেছে। কিন্তু তার ভেতরের হাহাকার আর কান্নার শব্দ নিতান্ত আওয়াজ ছাড়া আরো কোনো সঙ্গী হিসেবে দাঁড়ায়নি কাছে। আমাদের সমাজ মেয়েদের জন্য এমনই জটিল যে অল্প কিছু পাওয়ার জন্য তাদের সর্বস্ব ত্যাগ করতে হয়!
শুধু আমাদের দেশ নয়, গোটা পৃথিবীতেই নারীরা যে পুতুল হয়ে রয়েছে, এই সত্য ধরা পড়েছে বিশ্ববিখ্যাত অনেক সাহিত্যিকের রচনায়। এর একটি বাস্তব চিত্র আমরা পাই হেনরিক ইবসেনের নাটক ‘ডলস্ হাউসে’। এ নাটকের নায়িকা নোরার জীবনে। আজ থেকে প্রায় ১৪০ বছর আগে (১৮৭৯) এই নোরাকে আমরা দেখেছি ঘর ছেড়ে বের হয়ে যেতে। ‘পুতুলে সংসারে সে আর পুতুল খেলা খেলেনি। গভীর রাতের গাঢ় অন্ধকারে সে দরজা খুলে বের হয়ে গেছে মুক্তির খোঁজে। নাটকের সমাপ্তি একটি শব্দ দিয়ে। নোরার দরজা খোলার শব্দ, ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার শব্দ। সে গভীর রাতে একাকী চলে যায়। সে চলে যায় সংসার ছেড়ে। প্রেমের কারণে ঘর ছাড়েনি নোরা। পালিয়ে যায়নি কারো হাত ধরে। নিজের ভেতরে ব্যক্তিত্বের যে জাগরণ ঘটেছে তারই তাড়নায় বের হয়ে যায় নোরা।
নোরা আত্মসমর্পণ করেনি, যেমন সারা বিশ্বের কোটি কোটি মেয়েরা করে, আত্মহত্যাও করেনি যেমন কেউ কেউ করে। লেভ তলস্তয়ের ‘আন্না কারেনিনা উপন্যাসে আন্না আত্মহত্যা করেছে। গুস্তাভ ফ্লবেয়ারের ‘মাদাম বোভারি’ উপন্যাসের নায়িক এমা বোভারিও আত্মহত্যা করেছে। আন্না ও এমা কোনো সমাধান নয়। তবে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, এরা সামজের নিষ্ঠুরতা, অন্তঃসারশূন্যতা ও ভাঙনের উন্মোচন। আর এরই প্রতিবাদে সুনয়না শিকল ভাঙার গান গেয়েছিল। এটা কেউই ভালোভাবে নেয়নি। এমনকি নিজ শ্রেণির মানুষেরাও তাকে বিদ্রূপ করেছে, বোধ করি এখনো করে, কেননা তারা নিঃস্ব, বিদ্রূপ ছাড়া অন্যকে তাদের দেয়ার কিছু নেই।
আমাদের দেশে নব্বই সাল থেকে নারীরা দেশ শাসন করছে। নারী প্রধানমন্ত্রী, নারী বিরোধীদলীয় নেত্রী, নারী স্পিকার, নারী শিক্ষামন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইত্যাদি। সরকারি অফিস-আদালত এবং প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরেও আছে নারীর সাবলীল উপস্থিতি। কিন্তু সমাজে ও পরিবারে নারীর অবস্থানের বিশেষ কোনো পরিবর্তন হয়নি। এখনো সমাজে ও পরিবারে তাদের নারী হিসেবেই দেখা হয়, মানুষ হিসেবে নয়। কেননা নারীর উন্নয়ন হয়েছে রাজনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে। সমাজ ও সংস্কৃতির উন্নয়ন এবং মানুষের সাংস্কৃতিক চেতনার উন্নয়নের ফলে এটা হয়নি। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মাধ্যমে আমরা যদি আমাদের চেতনার স্তরকে উন্নত করতে পারতাম তাহলে রাষ্ট্রে, সমাজে এবং পরিবারে নারীর প্রতি অহরহ অবমাননার ঘটনা ঘটতো না।
এদিকে যে দুই নারী পর্যায়ক্রমে রাষ্ট্র পরিচালনায় নিয়োজিত রয়েছেন, তারা রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা তারা খোঁজেননি। হত্যা ও খুনের রক্তাক্ত রাজনীতির শেষ পরিণতি হিসেবে ক্ষমতা তাদেরকে খুঁজে নিয়েছে। এরা দুজনই পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতিনিধি। ওনাদের জায়গায় একজন পুরুষকে বসানো হলে ওই পুরুষ মানুষটি যা করতেন ওনারা নারী হয়ে তা-ই করে চলেছেন।
রেল স্টেশনে একাকী বসে এসব কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ দেখি, গোটা শহর জুড়ে অদ্ভুত এক আঁধার নেমেছে। সূর্যকে ফের গ্রাস করেছে ঘন কুয়াশা। কুয়াশার চাদর ভেদ করে দূর থেকে বিকট শব্দে স্টেশনের দিকে এগিয়ে আসছে লোহার তৈরি একটি মস্ত বড় অজগর সাপ। আর এ উপলক্ষ্যে স্টেশনের মাইক থেকে ভেসে এল কয়েকটি শব্দ, “রাজশাহীগামী সিল্কসিটি কিছুক্ষণের মধ্যেই এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে এসে পৌঁছাবে...।” এ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে অলস ও স্থবির স্টেশন মুহূর্তেই ব্যস্ত ও চঞ্চল হয়ে উঠল। মুহুর্তেই দানবের মতো ছুটে এলো ট্রেন, দাঁড়ালো স্টেশনে। আর আমি পা বাড়ালাম আমার নির্ধারিত কামরার দিকে...
পুনশ্চ:
রাজশাহীতে সুনয়না বলে কেউ নেই। এটি একটি কাল্পনিক চরিত্র এবং আমার অলস সময়ের ভাবনা।
(চলবে)
এসকে