কুকুরের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক অন্তত ১৫,০০০ বছর পুরনো। প্রাণীকুলের মধ্যে এই প্রাণীটির সঙ্গে মানুষের নিবিড় সম্পর্ক সুদূর অতীত থেকেই বহমান। বিশ্বস্ত ও অনুগত হিসেবে কুকুরের যেমন সুখ্যাতি আছে, তেমনি পোষা কুকুরের প্রতি মানুষের ভালোবাসার নজিরও অনেক। আর অনেকেই বলেন যে, পোষা কুকুরটি তাঁকে খুব ভালোই বোঝেন। কুকুরের মস্তিষ্কের ‘এমআরআই স্ক্যান’ করে পরিচালিত নতুন এক গবেষণার পর বিজ্ঞানীরা বলছেন, পোষা কুকুরের মালিকদের এ দাবির বৈজ্ঞানিক সত্যতা আছে।হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন, কারও কণ্ঠস্বর শুনে মানুষের মস্তিষ্ক যেভাবে প্রতিক্রিয়া করে, কুকুরের মস্তিষ্কও প্রায় একই রকম প্রতিক্রিয়া করে। বিশেষত আবেগ অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ থাকে এমন শব্দে—হাসি, কান্না বা চিত্কার শুনে মানুষের মস্তিষ্ক আর কুকুরের মস্তিষ্কের প্রতিক্রিয়াও হয় প্রায় একই রকম।
আদিম মানুষের সঙ্গে মাংসাশী যে বিশেষ পাহাড়ি প্রাণীটির সখ্যতা গড়ে উঠেছিল তারা হলো- আজ থেকে প্রায় ২৭,০০০-৪০,০০০ বছর পূর্বের সর্বশেষ গ্লেশিয়যুগীয় পৃথিবীর বুকে বিচরণকারী ধূসর নেকড়ে বা গ্রে উলফ। সংঘবদ্ধ পারিবারিক জীবন প্রক্রিয়ায় অভ্যস্ত প্রাণীটির মাঝে সমাজবদ্ধভাবে জীবনযাপনের রীতি পরিলক্ষিত হয় যা আজও বিদ্যমান। সম্ভবত এটাই ছিল মূলকারণ যা এদের সময়ের সঙ্গে ক্রমেই মানব সমাজের সম্পৃক্ততা গভীর করেছে।
জিনগত বিবর্তনের মাধ্যমে ক্যানিড (শ্বদন্তক) গোত্রীয় এই নেকড়ের থেকে কুকুরের উদ্ভব এক আশ্চর্য কাহিনী। সেই নিয়ে গবেষণাও কম আশ্চর্যের নয়। তবে নানারকম জীবাশ্ম (ফসিল) ও জিনগত (জেনেটিক) সূত্র থেকে এটুকু সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত যে কুকুরদের পূর্বপুরুষ এই শ্বদন্তকেরাই। তবে ঠিক কবে আর কিভাবে নেকড়ে থেকে কুকুরে রূপান্তর ঘটেছে তা নিয়ে বিস্তর গবেষণা চলছে পৃথিবী জুড়ে।
প্রাণীর জেনেটিক গবেষণা প্রযুক্তির আশীর্বাদে জানা গেছে, কুকুরের বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে মানুষের “ভাষা” বোঝার, মানুষের নানা অঙ্গভঙ্গি বুঝে সেইমত কাজ করার । পোষা কুকুর ছুঁড়ে দেওয়া বল মুখে করে নিয়ে আসে, সকালবেলা খবরের কাগজ মুখে নিয়ে এসে মালিককে দেয়, বসতে বললে বসে, শুতে বললে শোয়, এসব আমাদের জানা কথা। কুকুর যাঁরা ভালোবাসেন তাঁরা এক কথায় স্বীকার করবেন যে কুকুরের চোখের দিকে তাকালে তাঁদের মন গলে যায়, কুকুররা তাঁদের সঙ্গে যেন কথা বলে। পোষা কুকুরের চোখের দিকে তাকিয়ে তার অভিভাবকের এমন মনে হওয়া আশ্চর্য্যের নয়, কিন্ত রাস্তার নেড়ি কুকুর? ধারণা করা হয়, শুধুমাত্র জিনগত গঠন বা জেনেটিক বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণেই নয় সুদীর্ঘ সময় ধরে প্রজন্মান্তরে মানবসম্পৃক্ততাই আজকের কুকুরের মাঝে মানুষের মনোভাব, আচরণ, মানসিকতা এবং ভাষা ও ইশারাগত সংকেত অনুধাবন ও অনুসরনের বিশেষ ক্ষমতা সৃষ্টি করেছে; যা পূর্বপুরুষদের থেকে বংশানুক্রমে চর্চিত হয়ে আজকের এই প্রাণীটির মাঝে জিনগত বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে।
এদের অনুধাবনের ব্যাপারেও প্রায় একই রকম মানসিক বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় মানুষের মাঝেও। নির্বাক কুকুরদের চোখের ভাষা পড়ে তার ক্ষুধা বা আনুষাঙ্গিক বহু প্রয়োজনীয়তার অব্যক্ত আবদার সহজেই বুঝে নিতে পারে মানুষ। যা প্রমাণ করে, সত্যিই সুদীর্ঘ সময়ের বন্ধন রয়েছে এই দুইটি সমাজবদ্ধ প্রাণীর মাঝে যা, আজও বিদ্যমান। এদের দেখেও তো মানুষের দয়া হয়, মন গলে, মনে হয় “আহা বেচারা, বড্ড খিদে পেয়েছে ওর!” এই দয়ার জন্যই এতকাল ধরে টিঁকে রয়েছে হয়ত কুকুরেরা, হয়ে উঠেছে মানুষের সবচেয়ে প্রিয় প্রাণী, সবসময়ের সাথী।
সম্প্রতি দেশের একটি আলোচিত ইস্যুতে পরিণত হয়েছে ঢাকা শহরের রাস্তায় বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যাধিক্য এবং তা নিয়ন্ত্রণে নগরীর বাইরে এদের সরিয়ে নেয়ার প্রসঙ্গ। অধিকাংশের মতে, এদের সরিয়ে নেয়ার অস্পষ্ট এই তত্ত্ব একার্থে-সম্ভবত এদের লোকচক্ষুর আড়ালে নিধনের মত কোনো কার্যক্রম গ্রহণের প্রতি ইঙ্গিত করছে। তবে মূলত কি করা হবে এদের নিয়ে সে ব্যাপারে দুই সিটি করপোররেশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও এখন পর্যন্ত সুস্পষ্ট কোনো ধারণা প্রকাশ করেনি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন বলছে, ঢাকা শহরের আনুমানিক ৬০ হাজারের মতো বেওয়ারিশ কুকুর থাকতে পারে। তবে এর কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই। যদিও এই সংখ্যার সাথে দ্বিমত প্রকাশ করেছে প্রাণী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো। তাদের হিসাবে ঢাকার দুই সিটিতে মোট ৩৭ হাজার কুকুর রয়েছে।
বর্তমানে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় এসকল বেওয়ারিশ কুকুরগুলোর কারণে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে বলেই এদের নগরীর বাইরে স্থানান্তরের কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানা গেছে। বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারাও বেওয়ারিশ কুকুরের কারণে নানা ধরণের সমস্যায় পড়ার কথা জানিয়েছেন। রাজধানী ঢাকার উত্তরা এলাকার এক বাসিন্দা দৈনিক জাগরণকে জানান, এমনিতেই কুকুরের ব্যাপারে ভীতি তিনি। তার ওপর তার বাসার গলিতে ১০-১২টি কুকুর সারাক্ষণই থাকে।
তিনি বলেন, 'বাজার করে ফিরতে গেলে, হাতে ব্যাগ থাকলে এই কুকুরগুলো প্রায়ই পিছু নেয়। বাজারের ব্যাগগুলো ধরার চেষ্টা করে। সন্ধ্যার পর বাসায় ঢোকাটাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি চলতি রিক্সা বা যানবাহনেও কুকুর লাফিয়ে উঠে পড়ে।'
এদিকে ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশন বলছে, তহবিলের অভাবে বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচী বন্ধ থাকায় গত কয়েক বছরে শহরে কুকুরের সংখ্যা বেড়েছে। বেওয়ারিশ কুকুরের সমস্যার কারণে এর আগে ৩০ হাজার কুকুর সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন।
এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় কুকুরদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধির কথা এবং তাদের উগ্র আচরণের কারণে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ার অভিযোগও করেছেন অনেকে। কিন্তু পাশাপাশি তারা এদের হত্যা বা নিধন না করে ভিন্ন কোণোভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যায় কিনা সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের ভাবার অনুরোধও জানিয়েছেন।
যদিও কুকুর সরিয়ে নেয়ার খবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব হয়ে ওঠে পশু অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো কিন্তু দুঃখজনকভাবে কেউই এ ব্যাপারে কোনো সমাধানের পথ প্রদর্শন করোতে পারছেন না। তবে এ প্রসঙ্গে বিবেচনা করার মত একটি পন্থা সম্ভাব্য উপায় হিসেবে ভাবা যেতে পারে আর সেটি হলো, এই বেওয়ারিশ কুকুরগুলোর একটি অংশকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় দায়িত্বরত নিরাপত্তা ও নৈশ প্রহরীদের সঙ্গে যুক্ত করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে বড় একটি পদক্ষেপ নেয়ার পরিকল্পনা করা সম্ভব। কারণ, নিরাপত্তা কাজে বিশ্বের সামরিক পর্যায় থেকে পুলিশ প্রশাসন পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই কুকুরের ব্যবহার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। যার অন্যতম একটি উদাহরণ হচ্ছে মার্কিন মেরিন কমান্ড ইউনিট। মার্কিন সেনাবাহিনীতে র্যাংকপ্রাপ্ত একাধিক কুকুরসেনা রয়েছে যারা এ যাবত একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মিশনে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছে। এশীয় অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য সেই কুকুরগুলো বিদেশি প্রজাতি হলেও তাদের ক্ষেত্রে কিন্তু সেগুলো দেশী ব্রিডই। তাছাড়া বাংলাদেশের দেশি ব্রিড সরাইলের কুকুর সারাবিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়।
ঢাকা উত্তর সিটির কামারপাড়া এলাকার নৈশ প্রহরি হাসান আলীও এই ধারনার সঙ্গে একমত। আলাপকালে হাসান তার সঙ্গে থাকা কালু নামক কুকুরটির নানা কসরত প্রদর্শনের ফাঁকে বলেন, এই কুকুরটা লোকাল একটা বাচ্চা ছিল। এইটার সঙ্গে আরো তিনটা আছে। আমি অসুস্থ অবস্থায় রাতে কাজ করতে কষ্ট হইতো বইলা এগুলানরে সঙ্গে রাখতাম। এখন ইশারা দিলেই বুঝে কোন মার্কেটের ভিতরে দৌড় দিয়া যাইতে হবে। যেদিকেই টর্চ মারবো একটা ঘেউ দিবে। রাতভর বাজারের দোকানগুলা পাহারার কাজে লাগে তাই সন্ধ্যায় কাঁচাবাজারের দোকানিরা এগুলার খাবার দিয়া যায়। কোনো সমস্যা করে ন। তবে এই সময় একটু সাবধান থাকি, কারণ বাচ্চা দেওয়ার সময়। সিটি করপোরেশন টিকা মারার কাজ করলে আর সেই চিন্তাও থাকে না।
পরিকল্পিতভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে একদিকে যেমন এই কুকুরগুলোর সঠিক পরিসংখ্যান রাখা সম্ভব হবে তেমনি সম্ভব হবে এদের জন্মনিয়ন্ত্রণ ও ভ্যাক্সিনেশনের কাজও। তাছাড়া এর মাধ্যমে খুব অল্প খরচে একটি শক্তিশালী নগর নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। আর সেটা করা সম্ভব হলে অনেকাংশেই রোধ করা যাবে অপরাধ। এমনকি চলতি পথে পথচারীদের ছিনতাই বা আকস্মিক হামলার মত ঘটনার ক্ষেত্রে প্রশিক্ষিত কুকুরগুলো তড়িৎ ভূমিকা পালন করতে পারবে। নগরীর অনেক রাস্তাই রাতের আধাঁরে বিপদসঙ্কুল হয়ে ওঠে যেখানে এদের ভূমিকা বদলে দিতে পারে দৃশ্যপট। এলাকাভিত্তিকভাবে এই কার্যক্রম পরিচালনা করা গেলে সমন্বিতভাবে একটি শক্তিশালী নগর নিরাপত্তাজনিত প্রশিক্ষিত 'ডগ স্কোয়াড' গড়ে তোলা মোটেই অসম্ভব নয়। রাস্তার নেড়ী কুকুরের দল নিজেদের এলাকা সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন থাকে। তাই তাদের দ্বারা এই কাজটি করানো আরো সহজ ও কার্যকর ভাবে করা সম্ভব। বর্তমান সরকারের আমলেই অভিনব নানা উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের দৃশ্যমান প্রমাণ রয়েছে। তাই এই সময়েই এমন একটি প্রকল্পের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানের একটি পথ বের করে নেয়া সম্ভব বলেই অধিকাংশ মানুষের বিশ্বাস। বিশেষ করে তরুণ সমাজ এমন একটি প্রকল্পের ব্যাপারে অত্যন্ত ইতিবাচক। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে তারা নগর কর্তৃপক্ষকে সহায়তা প্রদানেও রাজি বলে জানা গেছে।
বেওয়ারিশ কুকুর ব্যবস্থাপনার কাজে সিটি কর্পোরেশন- সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ, পশু সম্পদ বিভাগ ছাড়াও প্রাণী কল্যাণে কাজ করা সংগঠনগুলোর সাথে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নিতে পারে। কুকুর ব্যবস্থাপনা এবং 'সিটি ওয়াচ ডগ' আদলের একটি প্রকল্প পরিচালনায় প্রয়োজনে পশুপ্রেমী সংগঠগুলোসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরের সাথে আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। পাশাপাশি কুকুরের সহাবস্থানের বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার প্রচারণা চালানোও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা যায়। আর এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নিতে হবে কারণ এটা তাদের দায়িত্ব। বাংলাদেশে এই দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের।
যেসকল অভিযোগের ভিত্তিতে এই কুকুরগুলোকে স্থানান্তরের কথা ভাবা হয়েছল তা অবশ্যই সঠিক ইস্যু হিসেবেই বিবেচিত। কিন্তু যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা গেলে এ সমস্যাগুলো আর থাকবে না। মূলত ক্ষুধার কারণেই কুকুরগুলো এমন আচরণ করে। তাছাড়া বর্তমান সময়টি কুকুরের প্রজননকাল। এ সময় প্রাকৃতিক কারণেই কুকুরেরে মাঝে কিছু আচরণগত পরিবর্তন আসে তবে তা সব সময় থাকে না। সেক্ষেত্রে এটি কুকুরগুলোর কোনো দোষ হিসেবে বিবেচনা করা অপ্রাসঙ্গিক।
এছাড়া পরিবেশের বাস্তসংস্থান বলে যে বিষয়টি আছে, এই কুকুরগুলোকে স্থানান্তর করা হলে সেক্ষেত্রেও হতে পারে সমস্যা। কারন প্রতিদিন ঢাকা শহরের কাক ও কুকুরগুলো যে পরিমাণ বর্জ্য খেয়ে শেষ করে তা বিশেষভাবে আমলে নেয়ার মত। পরিবেশের পরিচ্ছন্নতায় বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলেই মন্তব্য অনেকের। ঢাকার এই কুকুরগুলোর অপসারণে ভবিষ্যতে কিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে তা পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে বলার জন্যে উল্লেখ করা যেতে পারে ইতিহাসের একটি আলোচিত ঘটনা।
১৯৫৮ সালে গণচীন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা, কমিউনিস্ট নেতা মাউ জিডংয়ের নির্দেশে দেশটিতে চড়ুই পাখি নিধন শুরু হয়। মূলত অধিক পরিমাণে খাদ্য মজুদ সৃষ্টির লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ নেয়া হয় যেহেতু চড়ুই খাদ্যশস্য ও ফল খেয়ে ফেলত। কট্টর এই কমিউনিস্ট নেতার মতে, এই চড়ুই পাখিরা পরিশ্রম করে উৎপাদন করে না বরং কৃষকের শস্য খেয়ে নেই তাই তারা পুঁজিবাদী সমাজপতিদের প্রতীক। এমন উদ্ভট তত্ত্বের ভিত্তিতে গোটা চীনজুড়ে ঘোষিত হয় চড়ুই নিধন কর্মসূচি। চীনের ইতিহাসে এটি 'পিনইয়েন : ঝিয়াওমিই ম্যাকয় ইয়নডং' বা এলিমিনেইট স্পেরোও নামে পরিচিত। পরিণতিতে প্রকট পরিবেশ বিপর্যয় সৃষ্টি হয় এবং ১৯৫৯-১৯৬১ সাল টানা তিন বছরের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে চীন যাতে প্রায় ৪ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। দেশটির ইতিহাসে গ্রেট ফেমিন অব চায়না নামে আখ্যায়িত। বাস্তবতা অনুধাবনে ১৯৬০ জিডং চড়ুই নিধন বন্ধ ঘোষণা করেন। পরিবেশের বাস্তুসংস্থান ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারে এবং প্রকৃতগত বিপর্যয় রোধ করে দুর্ভিক্ষের কবল থেকে রক্ষা পেতে শেষ পর্যন্ত তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছ থেকে আড়াই লাখ চড়ুই পাখি আমদানি করে চীন।
এই কুকুরগুলোর বাঁচার অধিকার আছে আর এক্ষেত্রে যে ব্যবস্থাই নেয়া হোক না কেন তা হতে হবে, স্বাস্থ্যসম্মত এবং প্রকৃতির নিয়মানুযায়ী। নইলে সম্ভাবনা রয়েছে ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টির।