• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ১০, ২০২১, ০৪:৩৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ১০, ২০২১, ০৪:৪৯ পিএম

থমকে যাওয়া শটে বেঁচে থাকবেন বুদ্ধদেব

থমকে যাওয়া শটে বেঁচে থাকবেন বুদ্ধদেব

বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর কবিতা আমার কাছে বেশি জরুরি, হ্যাঁ, সিনেমার থেকেও। বিশেষ করে ওঁর প্রথম দিকের কবিতা। তবু আজ তাঁর প্রয়াণ দিনে, ওঁর একটি ছবির কথা আমাকে বলতেই হবে, যা আমার এ জীবনের নানা সময়ে মনে পড়েছে ও পড়বে। হ্যাঁ, গৃহযুদ্ধ। অনেকে জানি বলবেন, কেন ‘তাহাদের কথা’ না? বা, কেন ওঁর বাকি ছবির ফটোগ্রাফিক ওয়াইড অ্যাঙ্গেলগুলো না? বা, কেন বাস্তব আর পরাবাস্তব মিলেমিশে যাওয়া বীরভূম-বাঁকুড়ার ল্যান্ডস্কেপগুলি না? এর উত্তর আমার কাছে রয়েছে। তবে তা দেওয়ার দিন আজ নয়। আগামীতে কখনো বলা যাবে।

গৃহযুদ্ধ আমার ছবি। কারণ, এ ছবিতে প্রজন্ম পেরোনো এক সত্যি আছে। এ ছবিতে রাখা রয়েছে সেই ময়দান, সেই সাংবাদিকতা, সেই সত্তরের আবহ, সেই সরু গলি দিয়ে ছুটে যাওয়া নকশাল, সেই উদ্বেগে থাকা বয়স্ক বাবা, সেই প্রেমিকা, যে বা যারা কি-ভীষণ আমার না হয়েও আমার...যেখানে আমি কখনো না-থেকেও কি-ভীষণ রয়েছি, থেকে যাব...থেকে যাবে এসব ভাঙা দেয়ালে আমার হাতের লাল ছাপ...

প্রগ্রেসিভ হওয়ার নামে যে কি-ভীষণ আমরা রিগ্রেসিভ হলাম, কর্পোরেট হওয়ার নামে হলাম সুসভ্য-লুম্পেন, তা এ ছবির ফ্রেম-টু-ফ্রেমে লেখা রয়েছে। লেখা রয়েছে, একদিন আমরা লিবারাল হওয়ার নামে ফেসবুকে খাপ বসাব, আমাদের প্রত্যেক প্রিভিলেজদের বাড়ি-গাড়ি হবে বদলে বিকিয়ে দিতে হবে আত্মা এবং আমরা তা দেব, শুধু প্রেমিকার ছেড়ে যাওয়ার আগের চোখের কোনায় চিকচিক করবে জল, সে শুধু বলে যাবে- আমাদের সেই পোস্টার লেখা আর রাত জেগে মিছিলের প্রস্তুতির দিনগুলো কি সুন্দর ছিল! বদলে এই আলিপুরের ফ্ল্যাট-সাউথ ফেসিং সোনাদানা এসব তো আমরা চাইনি... তারপর শেষ সিনে প্রেমিকা মমতা শংকর প্রেমিক অঞ্জন দত্তকে প্রত্যাখ্যান করে রাস্তা পেরোবেন আর ফ্রিজ হয়ে যাবে শট...ফ্রিজ হয়ে যাব আমিও, বারবার...

এই থমকে যাওয়া শটেই আমার কাছে আজীবন বেঁচে থাকবেন বুদ্ধদেব... বেঁচে থাকবেন এই দ্বন্দ্ব যা আমার প্রেমের মধ্যেও আজীবন বেজে চলবে... বেজে চলবে আমাদের ভুল বোঝাবুঝির ভেতরে রাগেও...প্রজন্মের পর প্রজন্মে...সেখানেই মিশে যাবে স্বপ্ন, বাস্তব আর সিনেমা।