|| শেখ মিনহাজ হোসেন
দেশপ্রেম একটা ডিল্যুশনাল ব্যাপার। ধরেন, বাংলাদেশের চেয়ে ভালো সিনেমা বিদেশে হয়। এজন্য আমরা বাংলা সিনেমা না দেখে হলিউড-বলিউডের সিনেমা দেখি। তখন আমরা কেউ বলি না যে "তোমার মধ্যে দেশপ্রেম নাই!" আমরা বলি যে, বাংলা সিনেমার কোয়ালিটি বেটার করা দরকার। নেটফ্লিক্স, প্রাইম টিপলেই যদি আমি বেটার কোয়ালিটি পাই, তখন আমি লো কোয়ালিটির সিনেমা কেন দেখবো!
এই যুক্তি মার খেয়ে যায় স্পোর্টসে এসে। সিনেমার ক্ষেত্রে যেটা থাকে না, দেশের ক্ষেত্রে "দেশের নাম" জড়িত থাকে।
ব্যক্তিগতভাবে সেই ব্রায়ান লারার ৩৭৫ থেকে শুরু করে ক্রিকেটের স্মরণীয় প্রায় সব খেলা-ইনিংসই লাইভ দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। তবে আমি আমার জীবনের এক অন্যতম আফসোস বলি, ২০০৩ বিশ্বকাপে যখন একইসাথে বাংলাদেশ বনাম কেনিয়া আর ভারত বনাম পাকিস্তানের খেলা চলছিল, তখন আমি বাংলাদেশের খেলা দেখছিলাম! সেজন্য আমি ইতিহাসের অন্যতম সেরা ওয়ানডে ইনিংস শচীন টেন্ডুলকারের ৭৫ বলে ৯৮ রানের নান্দনিক ইনিংসটি লাইভ দেখতে পারি নাই! এই আফসোসের কোনো শেষ নাই। তবু যদি বাংলাদেশ ওই ম্যাচ জিততো!
তবে গত একমাসে বাংলাদেশের মাটিতে টি-টোয়েন্টি খেলা দেখে "দেশের নাম" জড়িত থাকার আবেগও আর কাজ করছে না। একদিন মিরপুরের মাটিতে খেলা দেখে পরেরদিন যখন বুমরাহর বোলিং, রুটের ব্যাটিং দেখি তখন মনে হয় বাংলা সিনেমার চেয়ে বাইরের দেশের সিনেমাই ভালো! এখন এই খেলা দেখতেও বোরিং লাগে! বিশ্বাস করেন, "ক্রিকেট দেখতে বোরিং লাগে"- এই কথাটা যে আমাকে কোনদিন বলতে হবে সেটা কখনো চিন্তাও করি নাই!
তবে ক্রিকেটপ্রেম আর দেশপ্রেমের মধ্যে কোনটা চাই সেটা নির্ণয় করার দিকে এখনও হয়তো দেশপ্রেমই এগিয়ে থাকবে।
অনেস্টলি একটা কথা বলি। বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রতি আবেগ-অনুভূতি আছে বলেই যখনই বাংলাদেশ মাঠে নামে তাদের জয়ই চাই। যেখানেই খেলুক, যাই খেলুক না কেন বাংলাদেশ সবসময় জিতুক। আমাদের সবাইকে ভুল প্রমাণ করে বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপ জিতুক - সেটাই চাই।
কিন্তু আমি যদি নিউট্রাল ক্রিকেটপ্রেমী হতাম তাহলে চাইতাম, বাংলাদেশ যেন ওমানে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব পেরুতে না পারে। দেশের মাটিতে এই ধরনের ক্রমাগত ৬০-৭০-৮০-৯০ রানের একেকটা পিচ বানিয়ে, থ্রিলার ম্যাচ খেলে যারা বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নেয় তারা বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব পেরুতে না পারলে একটা ভালো শিক্ষা হবে।