বহু কাঠখড় পোড়ানো শেষে নির্ধারিত ৪ দশমিক ৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়ে গিয়েছে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট। ৯১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৭ তলা ভবন বিশিষ্ট এই ইনস্টিটিউট পাঁচ মাস আগে উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা অধ্যাপক সামন্ত লাল সেন রোববার (২৪ মার্চ) দৈনিক জাগরণকে বলেন, কাল (২৫ মার্চ) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক আসবেন বার্ন ইনস্টিটিউটের বিদ্যুৎ পরিস্থিতিসহ অন্য বিষয় পরিদর্শনে। এরপর থেকেই বিদ্যুতের ব্যবহার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হবে।
কিছুদিন আগে সামন্ত লাল সেন জাগরণকে জানিয়েছিলেন, খুব আশায় আছি যে, আগামী ২০ মার্চের মধ্যে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট বিদ্যুৎ সংযোগ পাবে। সে অনুযায়ীই বিদ্যুৎ পেল প্রতিষ্ঠানটি।
উদ্বোধন হবার পর থেকে বার্ন ইনস্টিটিউটের যতো ধরণের অগ্রগতি হচ্ছে, তার মধ্যে এটি সবচেয়ে অগ্রগতি। এবার ইনস্টিটিউট তার আসল রূপ দেখাতে পারার পথ পেল। কেননা, বিদ্যুৎ ছাড়া চিকিৎসার ভারী ভারী যন্ত্রপাতি পরিচালনাসহ সার্বিক কাজ নিশ্চিত বাধার মুখে।
সামন্ত লাল সেন বলেন, অনেক কাজ এখনও রয়ে গেছে। চিকিৎসা যন্ত্রপাতিগুলো আগে দেখতে হয়, প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেকশন করা লাগে। এরপর যন্ত্রগুলো বুঝে নিতে হয়। সিটি করপোরেশন এবং ডিপিডিসি মিলে এই জটিলতা দূর করেছে। ১৩২ কেভি থেকে ঢাকা মেডিক্যালের সাব স্টেশনে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে ৩৩ কেভি লাইনের মাধ্যমে বার্ন ইনস্টিটিউটকে বিদ্যুৎ দেওয়া হয়েছে।
ইনস্টিটিউট সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়ে যাওয়ায় খুব দ্রুতই ইনস্টিটিউটের জন্য আনা যন্ত্রপাতি পরীক্ষা কাজ শুরু হবে। এরপর জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
বিদ্যুতের লাইন মেইন গেট পর্যন্ত এসেছে। মেশিন ও লিফট যে প্রতিষ্ঠানগুলো সরবরাহ করছে তারাই পরীক্ষা করে স্থাপন করে দেবে। অল্পকিছুদিনের মধ্যেই মেশিনগুলো চালানো হবে।
২০১৬ সালের এপ্রিলে শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপর ২৯ জুন থেকে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এই ইনস্টিটিউট তৈরির কাজ চলছে।
৬ লাখ ৬২ হাজার স্কয়ার ফুট আয়তনের এই ইনস্টিটিউটটি বার্ন এবং প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট দুই ইউনিটে বিভক্ত। এর একেকটা ফ্লোরের আয়তন ৩৬ হাজার স্কয়ার ফুট। ১৬টি লিফট ও পাঁচটি সিঁড়ি থাকছে এই ১৭ তলা ভবনে। ২৪টি ডাবল বেডের কেবিন এবং ২৮টি সিঙ্গেল বেডের কেবিনের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। এই ইনস্টিটিউটে একসঙ্গে ১০ জন রোগীর অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা থাকবে। দূরের রোগীদের সরাসরি ইনস্টিটিউটে আসার সুবিধার জন্য ছাদে থাকবে হেলিপ্যাডও।
বিএনপি-জামায়াত জোট ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জন করে। দেশব্যাপী শুরু হয় পেট্রোল বোমা হামলা। শত শত মানুষ সে সময় শুধু পুড়েই মরেনি, চিরতরে পঙ্গুত্বও মেনে নিতে হয়েছে অনেককে। ওই সময় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে আগুনে পোড়া মানুষদের সবার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে পড়ে পূর্ণাঙ্গ বার্ন ইউনিট স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছিল সরকার।
আরএম/আরআই