..............................................
চলতি মৌসুমে ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে কিছু সংখ্যক হেমারেজিক ও শক সিনড্রোমে আক্রান্ত আছে। প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, এ সব রোগীই ঝুঁকিপূর্ণ এবং কয়েকজন মৃত্যুবরণ করেছেন। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্তদের তথ্য স্বাস্থ্য অধিদফতর জানাতে পারলেও হেমারেজিক ও শক সিনড্রোমে আক্রান্তদের সংখ্যা বলতে পারছে না।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম বলছে, গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা কেন্দ্র বলছে মৃতের সংখ্যা ১০ জনেরও বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন- হেমারেজিক ও শক সিনড্রোম হচ্ছে ডেঙ্গুর পৃথক দুটি পর্যায় এবং দুটিই বিপজ্জনক। এসময় রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা বাধ্যতামূলক। আইসিইউ সাপোর্টে পর্যন্ত যেতে হতে পারে। রোগী হেমারেজিক পর্যায়ে গেলে দেহের ভেতর রক্তক্ষরণের ঘটনা ঘটে। একইসঙ্গে রক্তের প্লাটিলেট কমে যেতে শুরু করে। এই হেমারেজিকের পরবর্তী রূপই হচ্ছে শক সিনড্রোম। যা আরও ভয়ংকর।
চিকিৎসকরা জানান, শক সিনড্রোমের উপসর্গ হলো- শ্বাস-প্রশ্বাসে অসুবিধা হওয়া কিংবা শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বৃদ্ধি। ত্বক ঠাণ্ডা হওয়া। ত্বকের ভেতরের অংশে রক্তক্ষরণের কারণে ত্বকের ওপর লালচে ছোপ সৃষ্টি হওয়া। বমি, মল কিংবা প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া, প্রচণ্ড পেটব্যথা ও অনবরত বমি হওয়া, নাক ও দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ ও অবসাদ। কখনো মস্তিষ্কের ভেতর রক্তক্ষরণ হতে পারে।
রাজধানীতে ২০ জুলাই (শনিবার ) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় যে ২৮৫ জন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাদের মধ্যে একজন হেমারেজিক ও দুজনের শক সিনড্রোমে আক্রান্ত। আগের দিন ১৯ জুলাই (শুক্রবার) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় যে ২৩৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল চিকিৎসা নিয়েছেন তাদের মধ্যে ৪ জন ডেঙ্গু হেমারেজিকে আক্রান্ত।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ও চিকিৎসক আয়েশা আক্তার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সম্প্রতি বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলছেন, এবারের ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে একটু ভিন্ন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এসব হচ্ছে- তীব্র পেট ব্যথা, হৃৎপিণ্ডের সমস্যা বৃদ্ধি ও মস্তিষ্কে সমস্যা।
জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক খাইরুল বাশার দৈনিক জাগরণকে বলেন, এসব লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। তবে আমি এখন পর্যন্ত এসব লক্ষণের রোগী পাইনি।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা কেন্দ্রের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান দৈনিক জাগরণকে বলেন, এবারের ডেঙ্গু জ্বরে নতুনত্ব নিশ্চয়ই আছে। চিকিৎসকদের চোখে তা ধরা পড়েছে। ফলে তেমনভাবে মন্তব্যও করছেন। এসব তথ্য সুনির্দিষ্টভাবে সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ বা গবেষণা করলে বেরিয়ে আসত যে, আসলেই ডেঙ্গুর রূপ পূর্বের চেয়ে বদলেছে কি—না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হেমারেজিক বা শক সিনড্রোম হলে তীব্র পেট ব্যথা, হৃৎপিণ্ডের সমস্যা বৃদ্ধি, মস্তিষ্কে সমস্যা দেখা দিতে পারে। শুধু এসবই নয়, কিডনি, ফুসফুস, লিভারেও প্রভাব ফেলতে পারে। তার আশঙ্কা— এবারের ডেঙ্গু ভাইরাসের রূপ আগের চেয়ে ভিন্ন।
সরকারের তথ্য অনুযায়ী— গত জানুয়ারি থেকে আজ ২১ জুলাই পর্যন্ত ৬ হাজার ৫৪৪ জন রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্তমানে ভর্তি আছেন ১ হাজার ৫৫৮ জন। ছাড়পত্র পেয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন৪ হাজার ৯৮১ জন।
আরএম/টিএফ/এফসি/এসএমএম