সারাদেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিন নতুন নতুন জেলার মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। শুধু রাজধানীতে নয়, দেশের বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। এরইমধ্যে দেশের ১৫ জেলায় ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। আক্রান্তদের রাজধানী না ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
রাজধানীর ধানমণ্ডিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত একটি শিশুকে গত ৪ জুলাই প্রথমে বেসরকারি হাসপাতালে, পরে উন্নত চিকিৎসার আশায় বিশেষায়িত হাসপাতালে নেয়া হয়। শিশুটি ৫ জুলাই মারা যায়। অসহায় ও ক্ষুব্ধ বাবা শিশুটির চিকিৎসা ও মৃত্যুর সব তথ্য সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে (আইইডিসিআর) দিয়েছিলেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণকক্ষ ডেঙ্গু জ্বরে মৃতের তালিকাও প্রকাশ করেছে। তবে তাতে ওই শিশুটির কথা উল্লেখ নেই।
সরকারের তথ্য অনুযায়ী, জুন-জুলাই মাসে ডেঙ্গু জ্বরে রাজধানীতে মারা গেছে ৮ জন। তবে সংশ্লিষ্টদের দাবি, মৃতের প্রকৃত সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে বেশি। সরকারি-বেসরকারি ১৭টি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা গেছে, মৃত্যুর সংখ্যায় ব্যাপক গড়মিল। যারা ডেঙ্গুতে মারা গেছে তাদের মধ্যে চিকিৎসক, নার্স, একজন গর্ভবতী, বিশ্ববিদ্যলয়ের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও বড় একটি অংশ শিশু। এ তথ্য ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের।
সরকারি তথ্যের বিষয়ে আইইডিসিআরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক জাগরণকে বলেন, মৃত্যু পর্যালোচনা কমিটি মৃত্যুর তথ্য যাচাই-বাছাই করেছে। ডেঙ্গুর পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে তালিকা প্রকাশ করবে। তিনি আরো বলেন, পরিসংখ্যান দিলে তাদের চাপ বাড়বে। এ কারণে মৃত্যুর সংখ্যা সঠিকভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে না।
ডেঙ্গু আক্রান্তদের বেশিরভাগ সম্প্রতি ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে গেছেন বলে জানিয়েছেন রোগীর স্বজন ও চিকিৎসকরা। তবে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনতার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, কোরবানির ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের কারণে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য আক্রান্ত রোগীদের যার যার বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
রাজধানী ছাড়াও গত কয়েকদিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। এতে জনমনে বিরাজ করছে আতঙ্ক। এক পরিসংখ্যানে দেশের ১৫ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা জানা গেছে। এর মধ্যে গাজীপুরে ৭৩ জন, বগুড়ায় ৪৯ জন, ফেনীতে ২৬ ও চাঁদপুরে ২৩ জন আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া নওগাঁ, যশোর, শেরপুর ও বরগুনায় আরো অর্ধশত মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের বেশিরভাগ রোগীই রাজধানী থেকে আক্রান্ত হয়ে গ্রামের বাড়িতে কিংবা নিজ জেলায় চলে যান।
বরিশালের শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোববার (২৮ জুলাই) আরও ২৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে ২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গত ১৬ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত সেখানে ৪২ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।
কিশোরগঞ্জে এ পর্যন্ত ৬৫ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। জায়গা সংকটে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মশারি ছাড়াই একই বেডে অন্য রোগীর সঙ্গে রাখার অভিযোগ রয়েছে স্বজনদের। তবে শিগগিরিই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জনরা।
রংপুরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ জন। আক্রান্তদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে মানিকগঞ্জে ১৭ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়। এদের মধ্যে দুজনের অবস্থায় আশঙ্কাজনক হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঝিনাইদহে ১৫ দিনে ১২ জন রোগীর রক্ত পরীক্ষা করে ডেঙ্গুর জীবাণু মিলেছে। ডেঙ্গু রোগ সম্পর্কে সচেতন করতে এলাকায় লিফলেট বিতরণ ও আতঙ্কিত না হতে জনসাধারণকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
এদিকে রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগী শনাক্তকরণের জন্য স্কাউটদের মাঠে নামানো হয়েছে। রোববার (২৮ জুলাই) সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীদের অবস্থা সরেজমিন পরিদর্শন করেন এবং ডেঙ্গুর ব্যাপকতার কথা স্বীকার করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। তিনি বলেন, আগামীকাল সোমবার (২৯ জুলাই) থেকে রাজধানীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় বিনামূল্যে এরোসল স্প্রে বিতরণ করা শুরু হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ডেঙ্গুমুক্ত করা সম্ভব হবে।
টিএইচ / এফসি