আগামী সপ্তাহে ব্রিটেনে করোনাভাইরাসের প্রতিরোধী টিকা মানুষের ওপর যাচাই করা শুরু হবে।
এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণির ওপরে কোভিড-১৯ টিকা প্রয়োগ করে আশার আলো দেখে বিজ্ঞানীরা হিউম্যান ট্রায়ালের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সম্প্রতি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদলের প্রধান অধ্যাপক অ্যাড্রিয়ান হিল প্রথম সারির ব্রিটিশ সংবাদপত্র ‘দ্য ডেইলি মেল’-কে একটি সাক্ষাৎকারে জানান, প্রথম পর্যায়ে ১৮–৫৫ বছর বয়সী ৫১০ জন স্বেচ্ছাসেবী আগামী সপ্তাহে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিতেসম্মত হয়েছেন।
ডেইলি মেলে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ব্যাপারে এতটাই আশাবাদী যে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এই টিকার সাহায্যে লাখ লাখ মানুষ মারণ করোনাভাইরাসের কবল এড়িয়ে চলতে পারবেন বলে তাদের বিশ্বাস।
অধ্যাপক অ্যাড্রিয়ান হিল ও তার সহযোগী বিজ্ঞানীরা শিম্পাঞ্জির শরীরে সার্স কোভ-২ ভাইরাস ইঞ্জেকশন দিয়ে শিম্পাঞ্জির শরীরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করেন। এই অ্যান্টিবডিই টিকা হিসেবে মানুষের শরীরে দিলে সার্স কোভ– ২ ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি হবে বলে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল নিশ্চিত। এরই মধ্যে প্রাণিদেহে এই টিকা ব্যবহার করে উল্লেখযোগ্য ভাল ফল পাওয়া গেছে। এবারে হিউম্যান ট্র্যায়াল করার পর টিকাটির কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের দলটি ChAdOx1 nCoV-19 ভ্যাকসিনটির সাফল্যের ব্যাপারে অত্যন্ত আশাবাদী।
নভেল করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে বিশ্বের প্রায় সব দেশের বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, বিশ্বজুড়ে প্রায় ৭০টি করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নিয়ে কাজ চলছে। অক্সফোর্ডের গবেষণা তার মধ্যে একটি। হিউম্যান ট্রায়ালই প্রমাণ করে দেবে যে এই টিকা মানুষের শরীরের জন্য যথেষ্ট নিরাপদ কিনা। এই প্রসঙ্গে অ্যাড্রিয়ান হিল বিবিসি-কে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন যে নতুন ভ্যাকসিন ব্যাপক ভাবে উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন ফার্মা কোম্পানির সঙ্গে কথা বলবেন। এরই মধ্যে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপের ক্লিনিকাল টিম ও জেনার ইনস্টিটিউট যৌথভাবে সেপ্টেম্বর মাসে এই টিকা তৈরি করতে সমর্থ হবেন।
গত সপ্তাহে অক্সফোর্ডের এই গবেষকদলের পক্ষে ভ্যাক্সিনোলজিস্ট সারা গিলবার্ট দাবি করেছিলেন, আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই তারা করোনাভাইরাসের টিকা আনতে সমর্থ হবেন। সেই কথারই প্রতিধ্বনি শোনা গেল অধ্যাপক হিল-এর মুখেও। যদিও এখনও পর্যন্ত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনও টিকার কার্যকারিতা প্রমাণ করতে কমপক্ষে ১৮ মাস সময় লাগে। প্রথম পর্যায়েরট্রায়ালের পর দ্বিতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন দেশের আরও অনেক মানুষের ওপর টিকা প্রয়োগ করতে হয়। এবং শেষ পর্যায়ে ট্রায়ালের জন্য হাজার হাজার মানুষকে টিকা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে তবেই টিকা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মার্ক লিপস্টিচ জানান যে বিশ্ব মহামারির বিপর্যয় প্রতিরোধ করতে টিকাটি দ্রুত বিশ্বের মানুষদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তৃতীয় ধাপের সমীক্ষা কিছুটা কম করা যেতে পারে।‘ডেইলি মেল’-এ প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, এরই মধ্যে চীনের একটি ও আমেরিকার দু’টি কোভিড-১৯-এর টিকার হিউম্যান ট্রায়াল শুরু হয়েছে। আশা করা যায় মানুষ দ্রুত এই মারণ ভাইরাসকে জব্দ করতে পারবে।
কলকাতায় জনস্বাস্থ্য বিষয়কচিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী‘ডেইলি মেল’-এ প্রকাশিত ChAdOx1 nCoV-19 ভ্যাকসিনটির সাফল্যের ব্যাপারে আশাবাদী। তবে এখানে কিছু প্রশ্ন থেকে যায় বলে জানালেন সুবর্ণবাবু।
তার মতে,‘ব্যাপক হারে টিকা দেয়ার আগে টিকার কার্কারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে একটা সুদীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্যে যেতে হয়। সম্পূর্ণ নতুন সার্স কোভ-২ ভাইরাস সম্পর্কে এখনও অনেক তথ্যই আমাদের অজানা।
এই প্রসঙ্গে তিনি পোলিও ভ্যাকসিনের উল্লেখ করেন। পোলিওর জীবাণু নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণার পর তবেই ব্যাপক হারে টিকার ব্যবহার শুরু করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নতুন চরিত্রের মারাত্মক ভাইরাস নিয়ে এত তাড়াতাড়ি টিকার হিউম্যান ট্র্যায়াল কতটা সফল ও নিরাপদ জানতে ন্যুনতম দেড় বছর সময় লাগবে। ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি স্ট্রেন থাকায় এখনও সফলভাবে কার্যকর টিকা বানানো সম্ভব হয়নি। সেখানে কোভিড-১৯- এর ২৯টি স্ট্রেনের বিরুদ্ধে টিকা বানানো সময়সাপেক্ষ বলে মনে করেন সুবর্ণবাবু। আনন্দবাজার।
এসএমএম