গাজীপুর থাপ্পড়ের প্রতিশোধ নিতে বাড়ির মালিকের শিশুপুত্রকে অপহরণ করে হত্যা করেছে ভাড়াটিয়া। ঘটনা ভিন্ন খাতে নেয়ার জন্য অপহরণকারী পরিচয়ে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণও দাবি করা হয়েছিল।
শনিবার (২ মে) রাতে টাকা দেয়ার ফাঁদ পেতে মূলহোতা সাগর হোসেনকে আটক করে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মহানগরীর কোনাবাড়ী থানার পারিজাত আমতলা এলাকার একটি গেঞ্জির ঝুট গোডাউন থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে র্যাব ১।
নিহত শিশু আলিফ হোসেন (৫) কোনাবাড়ি থানার পারিজাত এলাকার বাসিন্দা ফরহাদ হোসেনের ছেলে। আটক সাগর হোসেন (১৯) নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার পদিপাড়া গ্রামের রফিক উল্লাহর ছেলে।
র্যাব ১ এর গাজীপুর ক্যাম্পের কমান্ডার (লে. কমান্ডার) আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, শিশু আলিফ হোসেন গত ২৯ এপ্রিল বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নিখোঁজ হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার রাতে শিশুর দাদা রাহামুদ্দিনের মোবাইলে ফোন করে আলিফ হোসেনকে অপহরণ করে অজ্ঞান অবস্থায় করে রাখা হয়েছে জানিয়ে মুক্তিপণ হিসেবে ২০ লাখ টাকা দাবি করে অপহরণবারীরা। মুক্তিপণের টাকা না দিলে শিশুটিকে হত্যার হুমকি দেয়। এরপর অপহরণকারীরা মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেয়।
শুক্রবার (১ মে) বেলা ১১টার দিকে অন্য একটি মোবাইল নম্বর থেকে আবারও ফোন দিয়ে আলিফের পরিবারের কাছে মুক্তিপণের টাকা দাবি করেন অপহরণকারীরা। শিশুটির বাবা টাকা নিয়ে অপহরণকারীদের কথা মত বিভিন্ন জায়গায় যান। কিন্তু সামনাসামনি না হয়ে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। একপর্যায়েয় আলিফ হোসেনের বাবা ঘটনাটি র্যাবকে জানায়। পরে র্যাব ১ সদস্যরা শনিবার (২ মে) রাতে টাকা দেয়ার জন্য ফাঁদ পেতে সাগরকে আটক করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ফরহাদ হোসেনের বাড়ির তিনতলার একটি গোডাউন থেকে শনিবার রাতে আলিফ হোসেনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবের কাছে সাগর স্বীকার করছে, তিন বন্ধু মিলে তারা ফরহাদ হোসেনের বাড়ির তৃতীয় তলার ফ্লাটে ভাড়া থেকে গার্মেন্টে চাকরি করত। বাড়ির ছাদে উঠে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা এবং উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করায় এক সপ্তাহ আগে বাসার মালিক শিশুটির বাবা সাগরের রুমমেট জুয়েল আহমেদ ওরফে সবুজকে কয়েকটি চড়-থাপ্পড় দেয়। ওই থাপ্পড়ের প্রতিশোধ এবং দ্রুত অনেক টাকার মালিক হওয়ার স্বপ্নে বাড়ির মালিকের প্রতি ক্ষোভ থেকে প্রতিশোধ নিতে সাগর ও সবুজ মিলে শিশু আলিফকে হত্যা এবং অপহরণের নাটক সাজিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করে।
পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন আলিফকে ডেকে ঘরে নিয়ে আসে এবং খেলার ছলে বাসার ছাদে নিয়ে যায়। সেখানে সবুজ গলা টিপে ধরে এবং সাগর মুখ চেপে ধরে শ্বাস রোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে মরদেহ একটি প্লাস্টিকের বস্তার ভেতর করে বাসার পাশের রুমে ঝুটের গুদামের ভেতর রেখে দেয়। ওই রাতে বানায় থেকে পরদিন সকালে স্বাভাবিকভাবে বাসা থেকে বের হয়ে ঢাকায় চলে যায় এবং আসামিরা বিভিন্ন মোবাইল ফোন ব্যবহার করে ভিকটিমের বাবার মোবাইল ফোনে কল করে অপহরণের কথা জানায় এবং মুক্তিপণ হিসেবে ২০ লাখ টাকা দাবি করে। সবুজ পলাতক রয়েছে।
এসএমএম