পারমাণবিক চুক্তি অনুযায়ী প্রতিশ্রুতি হ্রাসের প্রথম ধাপ অতিক্রম করে দ্বিতীয় ধাপ শুরু করেছে ইরান। অর্থাৎ, নিয়মানুযায়ী ইউরোনিয়াম সমৃদ্ধির বাঁধার আরেক ধাপ পার করল ইরান। দেশটির পরমাণু শক্তি সংস্থার মুখপাত্র বেহরুজ কামালভান্দি সোমবার (৮ জুলাই) বলেন, গতকাল আমরা চুক্তিতে অঙ্গীকারকৃত সময়সীমার দ্বিতীয় ধাপ শুরু করলাম।
ইরানের পারমাণবিক প্রোগ্রাম নিয়ন্ত্রণ রাখতে ২০১৫ সালে বৈশ্বিক পরাশক্তিদের অংশগ্রহণে ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটা পারমাণবিক চুক্তি হয়। চুক্তিতে ইরানের ইউরোনিয়াম সমৃদ্ধির মাত্রা ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ নির্ধারিত হয়েছিল। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র একতরফা ভাবে চুক্তিটি থেকে সরে গিয়ে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এরপরেই, ইরান ইউরোনিয়াম সমৃদ্ধির মাত্রা বাড়ানোর হুমকি দিলেও চুক্তির অন্য অংশীদারদের হস্তক্ষেপে চুক্তিটি রক্ষায় নিয়ম অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়ে আসছে।
চুক্তি অনুযায়ী সুবিধা না পাওয়ায় ইরান তাদের অঙ্গীকারকৃত ইউরোনিয়াম সমৃদ্ধিত মাত্রাও বাড়াবে বলে সতর্ক করে দেয় চুক্তির আন্তর্জাতিক অংশীদারদের। দুই মাস বা ৬০ দিন ব্যাপী ধাপের প্রথম ধাপ শেষ হয় রবিবার। আজ থেকে ইরান বিশ্বকে পারমাণবিক চুক্তিটি রক্ষায় আরেক দফা সময়সীমার ধাপ শুরু করেছে।
বেহরুজ কামালভান্দি বলেন, প্রতিশ্রুতি হ্রাসের প্রতিটি পর্যায় দুই মাস সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। ৩য় ধাপে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরোনিয়াম সমৃদ্ধি করতে পারবে। আমরা দুই মাস অপেক্ষা করলাম এবং গতকাল দ্বিতীয় পর্যায় শুরু করেছি। অবশ্যই, এই পদক্ষেপটি এক বছরের দীর্ঘ ধৈর্যের পরে গ্রহণ করা ছিল যাতে অন্য দল তাদের প্রতিশ্রুতি সম্পন্ন করতে পারে। তবে, তারা কোনও পদক্ষেপ নেয়নি, তাই প্রেসিডেন্ট ও সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের আদেশ অনুসারে, আমরা ইউরোনিয়াম সমৃদ্ধির ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশের সীমা অতিক্রম করেছি।'
ইরানের প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থাকে জানাতে হবে, তবে রোববার আইএইএ বন্ধ থাকায় নথিটির একটি কপি তেহরানে সংস্থাটির অফিসে দেয়া হয়েছে এবং মূল কাগজটি আজ আইএইএ-তে পাঠানো হবে বলে তিনি জানান। ইউরেনিয়ামের মজুদ ৩০০ কিলোগ্রাম অতিক্রম করতে সময় লেগেছে কিন্তু সমৃদ্ধির মাত্রা কয়েক দিনের মধ্যেই বাড়ানো যেতে পারে। অন্যান্য অংশগুলোর জানা উচিত যে ইরান এমন কিছু দেশের মতো নয় যারা সিরিয়াস না; এমনকি যদি তাদের এ ধরনের মানসিকতা থাকে তবে তারা এটি থেকে পরিত্রাণ পেতে পারে বলে তিনি আশা করেছিলেন।
ইরান প্রতিশ্রুতিগুলিকে একমাত্র উপায় হতে দেবে না এবং তার অধিকার থেকে বঞ্চিতও হবে না বলে জানান কামালভান্দি। তিনি বলেন, ইরানের অধিকার ভোগ করা উচিত; যদি না হয়, তেহরান ধীরে ধীরে প্রতিশ্রুতি হ্রাস করবে, কিন্তু অন্য পক্ষ যদি লাইনে চলে আসে, তাহলে ইরান তার প্রতিশ্রুতিতে ফিরে যাবে। প্রতিশ্রুতি হ্রাস করার তৃতীয় পর্যায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সে সম্পর্কে বিভিন্ন ধারনা রয়েছে ... ইরান বিজ্ঞতার সঙ্গে, শান্তভাবে এবং দেশের প্রয়োজন অনুসারে কী করা উচিৎ তা নির্বাচন করবে। পরমাণুর মজুদ বাড়ানোর একটা উপায় আছে।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আইএইএ'র গভর্নরদের একটি সভা আহ্বানকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, 'অন্য দেশ দেখছে যে, ইরান যৌক্তিক এবং দৃঢ়ভাবে আগাচ্ছে'। ইউরোনিয়ামের মজুদ ২০ শতাংশ বাড়ানোর ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এর প্রয়োজন এখনও আসেনি, তবে, ইরান যদি উত্পাদন করতে চায় তবে কোন বাধা নেই। ইরানের তেল বিক্রয় সহজতর করা এবং ব্যাংকিং ও বাণিজ্য বাধা দূর করা ইউরোপীয়দের প্রতিশ্রুতিগুলির মধ্যে ছিল বলে জানান কামালভান্দি।
এদিকে রাশিয়ান ফেডারেশন কাউন্সিলের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারপারসন কনস্টান্টিন কোসচেভ বলেছেন, যৌথ সংবিধিবদ্ধ পরিকল্পনা (জেসিপিওএ) নামে পরিচিত ইরানের পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে সংকট সৃষ্টি হওয়ার দায় মার্কিন যুক্তরাষ্টের। এক সংবাদ সম্মেলনে কোসচেভ বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই কেবলমাত্র জেসিপিওএ-কে রক্ষা করতে পারবে, পরমাণু চুক্তিটি সংরক্ষণে ইরানের দাবি যৌক্তিক। যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে চুক্তিটি সংরক্ষণ করতে সক্ষম।
ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সূচক এই মুহুর্তে গুরুত্বপূর্ণ নয়, তবে জেসিপিওএ-তে ফিরে যাওয়ার জন্য তেহরানের প্রস্তুতিটি গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান তিনি। কোষাচেভ পুনরাবৃত্তি করে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ই প্রথম চুক্তিটিকে ভারী আঘাত করেছে এবং স্বাক্ষরকরা ইইউ রাষ্ট্রগুলোও প্রতিশ্রুতি দেয়া বাণিজ্য বিনিময় সহায়তা বাস্তবায়নেও বিলম্ব করেছে।
সূত্র : ইরনা
এসজেড