সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশানুয়ায়ী অাসামে এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের ডেডলাইন চলতি মাসের ৩১ তারিখ। তার আগে এনআরসি তালিকা থেকে বাদ পড়ার জেলাভিত্তিক হিসেব প্রকাশ্যে আনল অাসাম সরকার। ওই তালিকা দেখে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন জেলাগুলিতে বাদ পড়াদের হার কম। সে তুলনায় অন্য জেলাগুলিতে বাদ পড়াদের হার বেশি। এই তথ্যকে সামনে রেখেই সরকারের তরফে জানানো হয়েছিল এনআরসি প্রক্রিয়ায় ত্রুটি রয়েছে। উল্লেখ্য, প্রতিটি জেলায় এনআরসি তালিকা থেকে বাদ পড়াদের হার মুখবন্ধ খামে জমা দিতে গত বছরের ১৬ অগাস্ট জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর কো-অর্ডিনেটর প্রতীক হাজেলাকে নির্দেশ দেয় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
বিধানসভায় জিরো আওয়ার নোটিসের প্রেক্ষিতে জবাব দিতে গিয়ে এদিন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটওয়ারি লিখিত বিবৃতিতে জানান, ‘‘তথ্য অনুযায়ী, চূড়ান্ত খসড়া তালিকা থেকে ১২.১৫ শতাংশ আবেদনকারীর নাম বাদ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন জেলাগুলিতে যেমন, দক্ষিণ সালমারায় ৭.২২ শতাংশ আবেদনকারীর নাম এনআরসি তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। ধুবড়িতে এই সংখ্যা ৮.২৬ শতাংশ, করিমগঞ্জে এই হার ৭.৬৭ শতাংশ। কিন্তু করবি আংলংয়ের মতো জেলায় এই হার ১৪.৩১ শতাংশ, তিনসুকিয়ায় এই হার ১৩.২৫ শতাংশ’’। প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী ধুবড়িতে মুসলিমদের জনসংখ্যার হার ৭৯.৬৭ শতাংশ, করিমগঞ্জে এই হার ৫৬.৩৬ শতাংশ।
এই তথ্যাদি তুলে ধরেই সরকারের তরফে দাবি করা হয় যে, এনআরসিতে অন্তর্ভুক্তি ও বাদ পড়ার তালিকার প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ। আর সে কারণেই বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন জেলাগুলিতে ২০ শতাংশ নাগরিকের তথ্যপঞ্জি খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছে সরকার। পাশাপাশি অন্যান্য জেলায় ১০ শতাংশ নাগরিকের তথ্যপঞ্জি খতিয়ে দেখার দাবি তোলা হয়েছে। কিন্তু সেই আর্জি খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
অাসামের হোজাই জেলায় বাদ পড়াদের হার সবথেকে বেশি। সেখানে এই হার ৩২.৯৯ শতাংশ। দরং জেলায় এই হার ৩০.৯ শতাংশ। নগাঁও জেলায় বাদ পড়াদের হার ১৪.১২ শতাংশ। অন্যান্য মুসলিম অধ্যুষিত জেলা যেমন, মরিগাঁও জেলায় বাদ পড়াদের হার ১৫.০৪ শতাংশ। বরপেটায় এই হার ১৩.৪ শতাংশ। মাজুলিতে এনআরসি থেকে বাদ পড়াদের হার সবথেকে কম। সেখানে এই হার ১.৬২ শতাংশ। চারাইদেওতে এই হার ২.৮৮ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটওয়ারি বলেন, ‘‘আমরা এই তথ্যই সুপ্রিম কোর্টে আগে পেশ করেছিলাম। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট শোনেনি। যখন জিরো আওয়ারে বিধানসভার সদস্যরা এ ইস্যু নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছিলেন, তখন এই তথ্যাদি তুলে ধরি। সীমান্তবর্তী এলাকাতেই এনআরসিতে অন্তর্ভুক্তির হার বেশি, যেখানে এ দেশের মানুষের বাস বেশি, সেখানে বাদ পড়াদের হার বেশি’’। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী আরও বলেন, বিজেপি সাংসদ রমাকান্ত দেওয়ারির নাম এনআরসি থেকে বাদ পড়েছে। আমরা চাই ফের খতিয়ে দেখা হোক। নির্ভুলভাবে এনআরসি প্রক্রিয়া করা হোক। অন্যদিকে, এনআরসি প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখার প্রসঙ্গে জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর কো-অর্ডিনেটর প্রতীক হাজেলা বলেন, ২৭ শতাংশ নাগরিকের তথ্যপঞ্জী ইতিমধ্যেই খতিয়ে দেখা হয়েছে।
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
এসজেড