
বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে রোকেয়া পদক প্রদান ও আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে এখন শিক্ষাক্ষেত্রে মেয়েদের অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো। মেয়েরা এখন পড়াশোনায় খুব আগ্রহী। সমাজে এক ধরনের পরিবর্তন এসে গেছে।
তিনি বলেন, আমরা বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন পাস করেছি। জনসচেতনা সৃষ্টি হচ্ছে। মেয়েদের মাতৃকালীন ছুটি ৬ মাস করে দিয়েছি। এবার মাতৃকালীন ভাতা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। গার্মেন্টস কর্মজীবী মেয়েদের জন্য ডরমেটরি করে দিচ্ছি। মেয়েদের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশটা এগিয়ে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও আরও এগিয়ে যাবে।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বেগম ফজিলাতুনন্নেসা ইন্দিরা। স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন্নাহার।
তিনি বলেন, নারীদের শুধু শিক্ষা দিলেই হবে না, তাই আমরা সরকারে এসে বিভিন্ন পদে নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। প্রথমেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬০ শতাংশ নারীদের চাকরির সুযোগ করে দেই। কারণ নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সবচেয়ে বেশি দরকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরাই প্রথম উপলব্ধি করেছি নারী শিক্ষার বাধ্যতামূলক করে দেয়া। এখন নারীরা পার্লামেন্টেও সুযোগ পাচ্ছে। আমরা নারী শিক্ষার অগ্রগতির জন্য ২ কোটি ৩ লাখ বৃত্তি এবং উপবৃত্তির ব্যবস্থা করেছি। সারা দেশে বাংলাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়েছি। সেখানে ট্রেনিং এর সুযোগ করে দিয়েছি। প্রত্যক জায়গায় আমরা মেয়েদের উৎসাহিত করছি। উদ্যোক্তা হিসেবে মেয়েদের সুবিধা দিচ্ছি।
বিভিন্ন সেক্টরে মেয়েদের অগ্রগতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা চাই মেয়েরা বিনিয়োগ সেক্টরে এগিয়ে আসুক। এখন বাংলাদেশের সব জায়গায় মেয়ের অবস্থান রয়েছে। পার্লামেন্টে সব জায়গায় মেয়েদের অবস্থান। ক্রীড়াঙ্গনে মেয়েরা ভালো করছে। স্বর্ণ পাচ্ছে। চলমান এসএ গেমসে মেয়েরা স্বর্ণ জয় করেছে।
মেয়েদের জন্য সরকারের চালু করা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটা সময় মেয়েদের খেলার সুযোগ ছিল না দেশে। আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মেয়েদের জন্য এবং ছেলেদের জন্য বঙ্গবন্ধু টুর্নামেন্ট চালু করেছি।
নারীমুক্তির অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার আদর্শে নারী-সমাজকে উজ্জীবিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয় বরং নারীর ক্ষমতায়নের জন্যও বিশ্বে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেগম রোকেয়া নারীদের নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছি। নারীরা একদিন লেখাপড়া শিখে জজ, ব্যারিস্টার হবে। বেগম রোকেয়ার এই স্বপ্ন এখন বাস্তব। নারীরা শুধু জজ-ব্যারিস্টার নয় এখন সব জায়গাতেই নারী দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। বেগম রোকেয়ার আদর্শ ধারণ করে জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমাদের কাজ করে যেতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সমাজের অর্ধেক জনসংখ্যা হলো নারী। সেই নারীদের বাদ দিয়ে একটি সমাজের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব না। বর্তমানে নারী-পুরুষ সমন্বিতভাবে কাজ করছে। এ কারণে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকার নারীকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরের জন্য জাতীয় কৌশল, নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সনদ ও এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে।’
রোকেয়া পদ পেলেন যারা
এবার বেগম রোকেয়া পদক পেয়েছেন বেগম সেলিনা খালেক (নারী শিক্ষা, নারী অধিকার, নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাধ্যমে নারী জাগরণে অবদান), অধ্যক্ষ শামসুন্ন নাহার (নারী শিক্ষা), ড. নুরুননাহার ফয়জননেসা (মরণোত্তর), পাপড়ি বসু (নারীর অধিকার, নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান) এবং বেগম আখতার জাহান (নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান)।
এএইচএস/এসএমএম