ভারতের রাজধানী দিল্লিতে তাবলিগ জামাতের একটি জমায়েত থেকে ব্যাপকভাবে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে।
সরকারি নির্দেশ অমান্য করে এই জমায়েত করেছিলো দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজ। এই অভিযোগে তাবলিগ জামাতের শীর্ষ নেতা মওলানা সাদ কান্ধলভি ও নিজামুদ্দিন মারকাজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। তাকে গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে বলেও জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন।
পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজলেও এখনও পর্যন্ত মওলানা সাদ কান্ধলভির কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।
এর মধ্যেই গোপন জায়গা থেকে অডিওবার্তায় মওলানা সাদ জানিয়েছেন, তিনি কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন।
গত ২৮ মার্চ শেষবারের মতো দেখা তাকে দেখা গিয়েছিল। তারপর থেকে তিনি লোকচক্ষুর অন্তরালে তিনি। মারকাজ নিজামউদ্দিনে জমায়েত করা ও থাকার জন্য তিনিই উৎসাহ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ আছে পুলিশের তরফ থেকে।
একশো বছরের বেশি বয়স নিজামউদ্দিনের ওই বাড়িটির। বাড়ি খালি করার জন্য নোটিসও দিয়েছিলো পুলিশ। মওলানা সাদ নাকি তা অগ্রাহ্য করেছিলেন।
নিজামউদ্দিনের ওই ঘটনায় মওলানা সাদ ছাড়াও মারকাজের আরও ছয় জনকে খুঁজছে দিল্লি পুলিশ।
মওলানা সাদকে গ্রেফতারে এরই মধ্যে লখনৌ, মুজাফফারনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়েছে দিল্লি ক্রাইম ব্রাঞ্চ।
এরমধ্যে বুধবার (১ এপ্রিল) মওলানা সাদের নামে দু’টি অডিও প্রকাশ্যে আসে।
মারকাজ ইউটিউব চ্যানেলে প্রথম অডিওতে বলা হয়েছে, মসজিদই মৃত্যুর জন্য সেরা স্থান।
ইন্ডিয়া টিভির খবরে বলা হয়, ওই অডিও টেপটি গত ১৮ মার্চ ধারণ করা। এতে মওলানা সাদকে বলতে শোনা যায়, মসজিদে জড়ো হলে রোগ পয়দা হবে এই চিন্তা সম্পূর্ণ বাতিল চিন্তা। আপানার যদি এই চিন্তা আসে যে মসজিদে আসার কারণে মানুষ মারা যাবে তাহলে মৃত্যুর জন্য এরচেয়ে ভালো জায়গা আর হতেই পারে না।
তবে মহামারি ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে মামলা দায়েরের পর আত্মগোপনে থেকে করা অডিও টেপে মওলানা সাদ বলেন, নির্সন্দেহে, পৃথিবীতে যা হচ্ছে তা মানুষের অপরাধের ফল। আমাদের ঘরে থাকা উচিত। এটাই সৃষ্টিকর্তার ক্রোধকে শান্ত করতে পারে। চিকিৎসকদের পরামর্শ মানুন এবং প্রশাসনের সঙ্গে সহায়তা করুন। কোয়ারেন্টাইনে থাকুন, সে আপনি যেখানেই থাকুন না কেন। এটা ইসলাম বা শরিয়ত বিরোধী নয়।
এর আগে সরকারি নির্দেশ অমান্য করে জমায়েতের মাধ্যমে করোনা ছড়ানোর অভিযোগে তাবলিগ জামাতের শীর্ষ নেতা মওলানা সাদ কান্দলভি ও নিজামুদ্দিন মারকাজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে দিল্লি পুলিশ।
সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজে তাবলিগ জামাতের বড় জমায়েত হয়েছিল। সেখানে বহু বিদেশি মেহমান ছিলেন বলে জানা গেছে। সেখান থেকে করোনা সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। নিজামুদ্দিনের ওই মসজিদে যোগ দেয়ার পর মোট ৭ জন মারা গেছেন। এরই মধ্যে মসজিদটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিপুল সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দিল্লি পুলিশ আগেই নোটিশ দিয়েছিল সাদকে। তবে গত ২৮ মার্চ থেকেই তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টিভি নিউজ এর খবরে আরও বলা হয়, ওই জামাত থেকে ফিরে দিল্লিতে ২৪ জন, তেলেঙ্গানায় ৬ জন, আন্দামানে ১০ জন, কাশ্মীরে একজন ও তামিলনাড়ুতে ৫০ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। ওই জামাতে ৮২৪ জন বিদেশি ছিলেন। এরই মধ্যে পুলিশ সেই তথ্য সংগ্রহ করেছে।
দিল্লি পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ ওই আবেদনে উল্লেখ করে, ওই জামাতে উপস্থিতদের মধ্যে ৯৪ জন ছিলেন ইন্দোনেশিয়ার, ১৩ জন কিরগিস্তানের, ৯ জন বাংলাদেশের, ৮ জন মালয়েশিয়ার, ৭ জন আলজেরিয়ার। এ ছাড়া তিউনিসিয়া, বেলজিয়াম ও ইতালি থেকে একজন করে এসেছিলেন। বাকিরা ছিলেন ভারতীয়। ওই জামাতে যারা অংশ নিয়েছিলেন তারা শহরের ১৬টি মসজিদে ছিলেন।
গত ৩৬ ঘণ্টায় ওই মারকাজ থেকে ২ হাজার ৩৬১ জনকে সরিয়ে নেয়া হয়। তাদের মধ্যে ৬১৭ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুরো এলাকা ঘিরে রাখা হয়েছে। এখান থেকে বিভিন্ন রাজ্যে গেছেন মানুষজন। ফলে সব রাজ্যকেই কড়া নজর রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ভারত থেকে তাবলিগ জামাতের সাদপন্থী ১১ বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে দু’জন কাকরাইলে ও বাকিরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে আছেন। তাদের সবাইকে বিমানবন্দরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
পুলিশ জানায়, সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া বিদেশফেরত তাবলিগ সদস্যদের তথ্য সংগ্রহ ও কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হচ্ছে।
রাজধানীর কাকরাইল মসজিদ থেকে গত ফেব্রুয়ারিতে ১১ জন বাংলাদেশি নাগরিক তাবলিগে ভারতে যান। বিভিন্ন মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়ে, নিজামউদ্দিন মারকাজে অবস্থান নেয়া অনেকেই করোনায় আক্রান্ত।
মাওলানা সাদপন্থীদের দাবি, তারা লকডাউনের আগেই ফিরে আসেন। এর আগে থেকেই চার মাস সময়ের জন্য আরও ৩৩ জন সদস্য অবস্থান করছিলেন দিল্লির নিজাম উদ্দিন মারকাজে। সাংগঠনিক কাজ শেষ না হওয়ায় দেশে ফেরেননি তারা।
কাকরাইলে থাকা একজন জানান, যারা নিজামউদ্দিন মারকাজ থেকে এসে কোয়ারেন্টাইনে গেছেন; সবাই সুস্থ হয়ে গেছেন। আমাদের মধ্যে কেউই আক্রান্ত হননি।
ভারত থেকে দেশে ফেরা একজন দাবি করেন, সপরিবারে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন তারা।
স্থানীয়রাও জানান, বিদেশ ফেরতদের ব্যাপারে তথ্য দিতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
পুলিশের এক সদস্য জানান, এ মুহূর্তে কাকরাইল মসজিদে ১৫৭ জন বিদেশি রয়েছেন। সারা দেশে ৯৭ জন রয়েছেন।
বাংলাদেশে থাকা তাবলিগের দুই পক্ষেরই মূল অবস্থান কাকরাইলে। আপাতত সাদপন্থীদের তালিকা হলেও অন্যপক্ষেরও বিদেশ ভ্রমণকারীদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহের কথা জানায় পুলিশ।
এসএমএম