চৈত্রের শেষদিকে ঢাকাসহ সারা দেশে বৃষ্টির প্রবণতা শুরু হয়েছিল। তবে বৈশাখের প্রথম সপ্তাহের শেষদিকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে।
মৃদু তাপপ্রবাহের মাঝে বৃষ্টি, মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্থি এলেও এডিস মশার বংশ বিস্তার ও সম্ভাব্য ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ে ভাবনায় ফেলে দিচ্ছে।
কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, এডিস মশার ডিম বৃষ্টির পরপরই ফুটে লার্ভা বের হবে। লার্ভা ১০ দিনের জীবন চক্র শেষ করবে। এক্ষেত্রে বৃষ্টির পর একই জায়গায় ১০ দিন পানি জমাট থাকলে সেখান থেকে এডিস মশা তৈরি হতে পারে, যদি সেখানে আগে থেকে এডিস মশার ডিম থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের মধ্যে যদি এডিস মশার প্রকোপ বাড়ে তাহলে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এজন্য মৌসুমের শুরু থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
তবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন বলছে, তারা বছরের শুরু থেকেই এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।
রোববার (১৯ এপ্রিল) শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল লতিফ বলেন, বৃষ্টি হলেই এডিস মশা বাড়ে। কারণ বৃষ্টির পানি বা পানির ছোঁয়া পেলে মশার আগের ডিমগুলো থেকে বাচ্চা অর্থাৎ লার্ভা বের হবে। লার্ভার ১০ দিনের জীবন চক্র শেষ করে এডিস মশা হিসেবে রূপ নেবে।
প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ লেলিন চৌধুরী বলেন, এখনো কিন্তু সারা দেশেই এডিসবাহী ডেঙ্গু মশা আছে। কোথাও কোথাও মশার ডিম আছে। বৃষ্টির কারণে যেখানেই পানি জমবে সেখান থেকে লার্ভা সৃষ্টি হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রার ফর ডিজিস কট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলছে, ‘ডিম দেওয়া, লার্ভা, পিউপা এবং এডাল্ট মশা’- এডিস মশার জীবন চক্রে এই চারটি পর্যায় রয়েছে। এর মধ্যে ডিম দেওয়ার পর কয়েক দিন কিংবা কয়েক মাস পর পানির সংস্পর্শ পেলে সেখান থেকে লার্ভা হয়। লার্ভা থেকে পিউপা পর্যন্ত রূপান্তর হতে সর্বনিম্ন ৫ দিন সময় লাগে। পিউপা হওয়ার পর এডাল্ট মশায় রূপ নিতে সর্বনিম্ন দুই থেকে তিন দিন সময় লাগে।
সিডিসি বলছে, একটি স্ত্রী মশা কমপক্ষে ১০০টি ডিম দিতে পারে। ডিমগুলো যেকোনো পরিবেশে বেঁচে থাকার ক্ষমতা রাখে এবং আট মাসেরও বেশি সময় বেঁচে থাকতে পারে; এমনকি কঠিন শীতের মধ্যেও।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ও বায়ুমণ্ডলের ৭০ শতাংশের ওপরে বাতাসের আদ্রতা থাকলে এডিস মশা প্রজনন করতে পারে।
এডিস মশা নির্মূলের ক্ষেত্রে পরামর্শ দিয়ে অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল লতিফ বলেন, যেখানে পানি জমে সেখানে থেকে পানি সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বৃদ্ধি করতে হবে। এখন কিন্তু এডিস মশা বাড়ার সময়। এখন এটি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পরে মারাত্মক আকার ধারণ করবে। টায়ার, টব, এসি-এগুলো পরিষ্কার করে রাখতে হবে যেন এডিস মশা ওখানে বংশবৃদ্ধি করতে না পারে। পাশাপাশি নিয়মিত লার্ভিসাইড স্প্রে করতে হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান বলেন, সম্ভাব্যতা বিবেচনা করে আমরা বছরের শুরু থেকেই কিন্তু কাজ করে যাচ্ছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শনাক্ত করা হটস্পটগুলোতে বিশেষ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। নিয়মিত ফগিং লার্ভিসাইডিং করা হচ্ছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. শরীফ আহমেদ বলেন, এডিস মশার প্রকোপ যেন বাড়তে না পারে, বিষয়ে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। আমরা নিয়মিত মশক নিধন কর্মীদের মাধ্যমে সব এলাকায় ওষুধ প্রয়োগ করছি। যেসব জায়গায় পানি জমে থাকার সম্ভাবনা আছে সেসব জায়গা পরিস্কার করা হচ্ছে।
এওয়াই/এসকে