• ঢাকা
  • রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ২০, ২০২০, ১১:৩৬ এএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ২০, ২০২০, ১১:৩৬ এএম

ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী

“প্রতি জেলায় একজন সচিব ত্রাণ মনিটরিং করবেন”

“প্রতি জেলায় একজন সচিব ত্রাণ মনিটরিং করবেন”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা - বিটিভির সৌজন্যে

বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সীমিত করে সচিবদের বিভিন্ন জেলার ত্রাণ বিতরণসহ সংশ্লিষ্ট পরিস্থিতি মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য সহায়তা সঠিকভাবে পৌঁছাচ্ছে কি না, সে বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। করোনাভাইরাসের কারণে এখন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সীমিত করে আমি আমাদের একেকজন সচিবকে একেকটি জেলা মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দিয়েছি। জেলাগুলোতে সঠিকভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে কি না, অভাবী মানুষের কাছে খাদ্য পৌঁছাচ্ছে কি না, তারা সেটি দেখবেন এবং আমার কাছে রিপোর্ট করবেন। এছাড়া আমাদের আওয়ামী লীগের নেতারা রয়েছেন। তাদের প্রত্যেককে আমি নির্দেশ দিয়েছি, সবাই দেখবেন কোনো মানুষ যেন খাবারের অভাবে কষ্ট না পায়।  এখন অনেক এলাকায় কৃষকের ধান কাটার সমস্যা হওয়ায় ছাত্রলীগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যার যার এলাকায় তারা একাজে সহায়তা করছে। এভাবেই সবাইকে পরিস্থিতি মোকাবেলায় এগিয়ে আসতে হবে। 

সোমবার (২০ এপ্রিল) সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে বিভিন্ন জেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এই জেলাগুলো হলো— ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ এবং ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর ও নেত্রকোনা।

 প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেকোনো সময় দুর্যোগ আসতে পারে। তবে দুর্যোগ এলে মনোবল না হারিয়ে উপযুক্ত কৌশলের মাধ্যমে সাহস নিয়ে দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হবে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি শেষ হলে বিশ্বব্যাপী মন্দা দেখা দিতে পারে, আসতে পারে দুর্ভিক্ষও। তাই খাদ্য সংকট মোকাবেলায় এখন থেকেই মনোযোগী হতে হবে। এসময় কারো কোনো জমি যেন অনাবাদি না থাকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।  ধান শেষ হলে সেই মাঠে অন্য কোনো ফসল ফলান, সবজি চাষ করুন। কোনো জমি যেন অনাবাদি না থাকে। ধান কাটার কাজে কেউ যেতে চাইলেও যেতে পারছে না। কারণ যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে বলবো, তাদের যাওয়ার ব্যবস্থা করুন। এবছর আমরা আরো বেশি ধান সংগ্রহ করবো।

আলোচিত পিপিই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পিপিই শুধু স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য। এপ্রিল মাসটা দুশ্চিন্তার মাস, এই মাসে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেশি দেখা দিতে পারে, তাই এই মাসটা বেশি সতর্ক থাকতে হবে। করোনা মোকাবেলায় সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে যারা দিনমজুর বা প্রতিদিনের উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল, তাদের ঘরে খাবারের অভাব রয়েছে। কিন্তু সরকার সামাজিক সুরক্ষার আওতায় তাদের প্রত্যেকের ঘরে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে। আমাদের ভিজিডি, ভিজিএফ, টিআর, কাবিখাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে। ১০ টাকা কেজি দরের ওএমএস চাল বিক্রি করা হচ্ছে অভাবীদের জন্য। মোট কথা, আমরা সব উপায়ে নিম্ন আয়ের মানুষদের কাছে সহায়তা পৌঁছাব। আমাদের ৫০ লাখ রেশন কার্ড দেওয়া আছে। আমরা আরও ৫০ লাখ মানুষকে রেশন কার্ড দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছি। মোট এক কোটি মানুষ রেশন কার্ডের আওতায় আসবে।

গাজীপুর জেলা প্রশাসনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা ও আশেপাশের কারখানায় নিয়োজিত পোশাক কর্মীদের গ্রামের বাড়ি থেকে ডেকে আনা ঠিক হয়নি। সুপারভাইজারকে দিয়ে শ্রমিকদের ফোন করানো হলো। এভাবে শ্রমিকদের ডেকে আনা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। মাইলের পর মাইল হেঁটে এসেছে। অনেক বাবা তার মেয়েকে নিয়ে এসেছেন। গাড়িঘোড়া বন্ধ ছিল। শ্রমিকদের আনার ব্যবস্থা যেমন করা হবে, নেওয়ার ব্যবস্থাও করতে হবে।
গাজীপুরে শিল্প কারখানা খোলা রাখার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘লকডাউন নিশ্চিত করে সীমিত পর্যায়ে হলেও উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে। সেটি কীভাবে করা যায় নিশ্চিত করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বৃহৎ শিল্প থেকে শুরু করে সব ধরনের শিল্প খাত এবং কৃষি খাতের জন্যও প্রণোদনা দিয়েছি। আমরা বিভিন্ন খাতে মোট ৯৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছি। কোনো খাত প্রণোদনা থেকে বাদ পড়বে না।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সারাবিশ্বের প্রায় আড়াইশ কোটি মানুষ ঘরবন্দি। সারাবিশ্বের অর্থনীতি থমকে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশও বিশ্বের একটি দেশ। তাই বাংলাদেশেও এর প্রভাব রয়েছে। তবে আমরা অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় এরই মধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা প্রণোদনা ঘোষণা করেছি।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমরা ধাপে ধাপে রফতানিমুখী খাত, বৃহৎ শিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প থেকে শুরু করে সব ধরনের ব্যবসায়ীর জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করেছি। পরে কৃষি খাতের জন্য প্রণোদনা দিয়েছি। এই প্রণোদনা কেবল ধান চাষিদের জন্য নয়, মৎস্য-পোল্ট্রি-ডেইরি সব খাতকে প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। কেউ প্রণোদনার আওতা থেকে বাদ পড়বে না।

গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। অনুষ্ঠানে মহাখালী থেকে স্বাস্থ্য সচিব আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরাসহ অন্যরা উপস্থিত আছেন।

জেড এইচ/এসকে