• ঢাকা
  • সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ২২, ২০২০, ১২:১০ এএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ২২, ২০২০, ১২:৫০ এএম

করোনা জয়ের যুদ্ধ

অক্সফোর্ড উদ্ভাবিত ভ্যাক্সিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ বৃহস্পতিবার

অক্সফোর্ড উদ্ভাবিত ভ্যাক্সিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ বৃহস্পতিবার
ব্রিটিশ স্বাস্থ্য মন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক- মেইল অনলাইন

করোনাভাইরাসের মহামারি প্রাদুর্ভাবে যখন রীতিমত কোনঠাসা হয়ে পড়েছে গোটা বিশ্ব, তখন সর্বস্ব বাজি ধরে সেই করোনার আগ্রাসন থেকে মানবতার পরিত্রাণ অর্জনে দুর্বার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে একদল যোদ্ধা। যাদের মাঝে অন্যতম ব্রিটেনের বিখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ব বিদ্যালয়ের গবেষক দল। 

সম্প্রতি অক্সফোর্ড গবেষক দলের উদ্ভাবিত যে কোভিড-১৯-এর সম্ভাব্য ভ্যাক্সিনটির নতুন তথ্য জানতে অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষার প্রহর গুনছিলো কোটি বিশ্ববাসী, অবশেষে তার সম্পর্কে পাওয়া গেল নতুন বার্তা। সবকিছু ঠিক থাকলে আসছে বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) থেকে বড় পরিসরে মানব দেহে নিজেদের উদ্ভাবিত এই কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করতে যাচ্ছে ব্রিটেন।

মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা দ্য টেলিগ্রাফ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্য মতে জানা যায়, অক্সফোর্ড উদ্ভাবিত এই ভ্যাক্সিনটিকে বিশ্বের প্রথম করোনাভাইরাস জয়ী প্রতিষেধক হিসেবে সফলভাবে প্রয়োগের পরীক্ষা নিশ্চিত করতে সামর্থ্যের সবটা উজাড় করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ব্রিটিশ স্বাস্থ্য মন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক।

এক বিবৃতিতে হ্যানকক বলেন, ব্রিটেনের হাত ধরে বিশ্বের প্রথম করোনা জয়ী প্রতিষেধক উদ্ভাবনে নিজেদের উজাড় করে দিতে প্রস্তুত ব্রিটিশ সরকার।

এরইমধ্যে এই গবেষণা কাজের জন্য অক্সফোর্ড গবেষক দলে কর্তব্যরত বিজ্ঞানীদের ২০ মিলিয়ন ইউরো সহযোগিতা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। পাশপাশি করোনা প্রতিষেধক উদ্ভাবনে ব্রিটেনের ইম্পেরিয়াল কলেজ অব লন্ডনের আরেকটি গবেষক দলকে ২২.৫ মিলিয়ন ইউরো সহযোগিতা প্রদানের ঘোষণার কথাও জানান ব্রিটিশ স্বাস্থ্য মন্ত্রী।

অক্সফোর্ড উদ্ভাবিত এই ভ্যাক্সিনটির নামকরণ করা হয়েছে ChAdOx1 nCoV-19. বৃহস্পতিবার ১৮-৫৫ বছর বয়স সীমার মধ্যে ব্রিটেনের লন্ডন, ব্রিস্টল,অক্সফোর্ড ও সাউদ্যাম্পটন রাজ্যের নির্বাচিত মোট ১,১১২ জন স্বেচ্ছাসেবকের মধ্য থেকে প্রথম পর্যায়ে ৫১০ জনের দেহে এই ভ্যাক্সিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ ঘটানো হবে বলে জানিয়েছে দ্য মেল অনলাইন।

করোনা প্রতিষেধক উদ্ভাবনে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মান, জাপান, চীন ও ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশ নিরন্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। যার মাঝে এ যাবত এটিই হতে যাচ্ছে ব্রিটেন কর্তৃক উদ্ভাবিত প্রথম কোনো করোনাভাইরাস প্রতিষেধক ভ্যাক্সিন যা বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছে। আর অক্সফোর্ডের এই ভ্যাক্সিনটির সাফল্যের প্রত্যাশায় অপেক্ষমান গোটা বিশ্ব। 

ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, অক্সফোর্ড উদ্ভাবিত এই প্রতিষেধকের হাত ধরেই করোনা যুদ্ধে জয় লাভ করবে মানুষ। আর অবরুদ্ধ জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে মুক্ত পৃথিবীর বুকে আবারো বিচরণ করবে মুক্ত বিহঙ্গের মত। প্রাণ ভরে ভালোবাসবে ভাল লাগার আর ভালোবাসার এই প্রাণের আবাসকে।

এরইমধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছে ব্রিটেনের প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার মানুষ। যার মধ্যে জীবনের পাট চুকিয়ে চির বিদায় নিয়েছেন ১৭ হাজার ৩৩৯ জন। সারা বিশ্বে এই আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষাধিক। আর মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষের। এই মৃত্যুর মিছিল রুখতে তাই বদ্ধ প্রতিজ্ঞ ব্রিটেন। সেই সঙ্গে বিশ্ব মানবতাকে মুক্তির পথে আলোকবর্তিকা হাতে দিক নির্দেশনা দিতে চায় তারা।

সেই লক্ষ্যে ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞদের প্রচেষ্টা ও বিশ্ববাসীর প্রত্যাশা সত্যিই কতটা সম্ভাবনার আলো খুঁজে পায় তার উত্তর পেতে প্রতীক্ষা করতে হবে আরো কিছুটা সময়। ব্রিটিশ চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা আরো একবার মানবতার ত্রাতা হয়ে ওঠতে পারবেন কিনা, নাকি প্রাণঘাতী এই অদৃশ্য শত্রুর আঘাতে পরাজিত হন- তাই এখন দেখার প্রতীক্ষায় গোটা বিশ্ব। যেখানে সকল প্রার্থনা একাট্টা হচ্ছে শুধুই তাদের সাফল্যের তরে।