চীনের স্থানীয় বণ্যপ্রাণীর বাজার থেকে নয় বরং উহানের ল্যাব থেকেই ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। সম্প্রতি এমন বিস্ফোরক মন্তব্য করে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত বিতর্ক নতুন করে আলোচণায় তুলে আনলেন অস্ট্রেলিয়ার এক খ্যাতনামা লেখক ও বিশেষজ্ঞ।
তার অভিযোগ বেশ কিছু তথ্য প্রমাণ থেকে এটা বলা যায় যে, অবশ্যই উহানের ল্যাবরেটরি থেকেই করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে, কোনো বণ্যপ্রাণীর বাজার থেকে নয়।
রোববার (১০ মে) রাতে স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে চীনা বিষয়ক অস্ট্রেলীয় বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ক্লিভ হেমিলটন বলেন, দক্ষিণ চীনের সামুদ্রিক খাবারের বাজার থেকে করোনার উৎপত্তি হয়েছে এই কথার এখন আর কোনো ভিত্তি নেই।
তিনি বলেন, প্রথমদিকে কোভিড-১৯-এ যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের কারো সঙ্গেই উহানের সামুদ্রিক বাজারের কোনো সম্পর্ক ছিল না। যদিও প্রথম থেকে ওই সামুদ্রিক বাজারকেই এই ভাইরাসের উৎপত্তির জন্য দায়ী করে আসা হচ্ছে।
এছাড়া গত বছরের অক্টোবরে বেশ কিছুদিন উহানের ওই ল্যাব বন্ধ রাখা হয়েছিল। কেন বন্ধ ছিল, সেখানে কি হয়েছিল সে সম্পর্কে এখনও পরিষ্কার কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি। সে কারণে ওই ল্যাবকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের জল্পনা দানা বাঁধছে।
তিনি বলেন, শীর্ষ মানের বেশ কিছু গবেষণা থেকে অনেক রকম তথ্য উঠে এসেছে। তাই গত ডিসেম্বরে উহানের সামুদ্রিক খাবারের বাজার থেকে করোনার উৎপত্তি এমন তথ্য একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।
বাকি যে সম্ভাব্য ব্যাখ্যাটি উপস্থাপন করা যায় তা হচ্ছে, এটি উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি থেকে ছড়িয়েছে। তিনি বলেন, অনেক চীনা বিজ্ঞানীও একই ধরনের ধারণা পোষণ করেছেন। যদিও পরবর্তীতে এসব তথ্য ইন্টারনেট থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রথম যে নারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে কাজ করতেন। চীন জুড়ে ইন্টারনেটে তাকে খুঁজে বেরিয়েছে সবাই। কিন্তু তার কোনো খবরই পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, প্রথমদিকে বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন যে, বাদুড় থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে। উহানের যে সামুদ্রিক বাজারের কথা বলা হয়ে থাকে সেখানে নানা ধরনের প্রাণী খাঁচায় ভরে বিক্রি করা হয়।
ওই বাজারটি উহানের ল্যাব থেকে বেশি দূরে নয়। সেখানে বাদুড়ের নানা ধরনের করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণা চলে। সেখান থেকেই হয়তো কোনো ভাবে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে।
দীর্ঘদিন ধরেই বেইজিংয়ের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমালোচনা করে আসছেন অধ্যাপক হ্যামিলটন। তিনি বলেন, দুই চীনা বিজ্ঞানীর লেখা গবেষণাপত্রে জোর দিয়েই বলা হয়েছে যে, উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি থেকেই করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে।
তিনি বলেন, এটার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে যে, ওই ল্যাব থেকেই কেউ হয়তো এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে পরবর্তীতে সে ওই ল্যাব থেকে অন্যদের সংস্পর্শে আসায় তারাও ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি বোটাও শিয়াও এবং লেই শিয়াও নামে দু'জন বিজ্ঞানী করোনা নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। তারা দু'জনই উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের।
ওই গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে যে, করোনাভাইরাস বহন করে বলে যেসব বাদুড়কে সন্দেহ করা হয় সেগুলোর আবাসস্থল উহানের সামুদ্রিক প্রাণীর বাজার থেকে ৯শ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এছাড়া উহানের লোকজন বাদুড় খায় না। তাই ওই বাজারে বাদুড় কেনা-বেচাও হয় না। উহানের ওই বাজার থেকে করোনা ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে অনেক বিজ্ঞানী এবং চিকিৎসকও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে বেসরকারি সেলফোনের লোকেশনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত উহানের ওই ল্যাব বন্ধ ছিল। ফলে এই সংশয় দানা বাঁধছে যে, ওই সময়ের মধ্যে সেখানে হয়তো মারাত্মক কিছু ঘটেছে।
করোনার জন্য প্রথম থেকেই যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশই চীনকে দায়ী করে আসছে। যদিও বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে চীন।
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও দাবি করেছিলেন যে, চীনের ল্যাবেই হয়তো এই ভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছে। সে সময় তিনি এই মহামারি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় চীনের ব্যাপক সমালোচনা করেছেন।
ট্রাম্পের মতে, চীন চাইলেই এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারত। কিন্তু তারা সেটা করতে না পারায় এখন সারাবিশ্বকেই এর জন্য ভুগতে হচ্ছে।
এসকে