• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ৫, ২০২১, ০৩:৫৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ৫, ২০২১, ০৪:৩৩ পিএম

মমতার উত্থান: কর্মী থেকে মুখ্যমন্ত্রী

মমতার উত্থান: কর্মী থেকে মুখ্যমন্ত্রী

ভারতের প্রধান রাজনৈতিক দল বিজেপিকে টক্কর দিয়ে তৃতীয় দফায় পশ্চিমবঙ্গের সরকার গঠন করতে যাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। ১৩৬ আসনের বিশাল ব্যবধানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দলকে পরাজিত করার পেছনে তৃণমূলের কাণ্ডারি ‘বাংলার মেয়ে’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বুধবার তৃতীয় বারের মতো মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন এই নেত্রী। তৃণমূলের এই অভাবনীয় সাফল্যে অনেকেই আশা করছেন ভবিষ্যতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদের জন্যেও লড়াই করতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অপ্রতিরোধ্য প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে পাহাড়ের মতো অটল এই নেত্রীর সংগ্রামী জীবনের গল্পটা হয়তো অনেকেরই অজানা। 

রাজনীতিতে মমতার আগমন
১৯৫৫ সালের ৫ জানুয়ারি কলকাতার হাজরা এলাকায় নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম মমতার। ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের পতনের দাবিতে স্বাধীনতা সংগ্রামে যুক্ত ছিলেন পিতা প্রমিলেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাই সংগ্রাম ও রাজনীতির হাতেখড়ি শুরু ঘর থেকেই। 

কলকাতার শ্রীশিক্ষায়তন কলেজ থেকে বিএ পাশের পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। পরে যোগেশচন্দ্র চৌধুরী কলেজ থেকে আইনের ডিগ্রি অর্জন করে যুক্ত হন শিক্ষকতা পেশায়। তবে ছাত্রজীবন থেকেই কংগ্রেসের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি।

১৯৭০ সালে কংগ্রেস দলের সাধারণ একজন কর্মী হিসেবে রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। যদিও তার নেতৃত্বের গুণাবলীতে অনেক নেতাই মুগ্ধ ছিলেন সেসময়।

ইন্দিরা গান্ধীর অনুরাগী ছিলেন মমতা। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও এককালের পশ্চিমবঙ্গের সিনিয়র কংগ্রেস নেতা প্রণব মুখার্জিও স্নেহভাজন ছিলেন। ১৯৭৬ সালে একুশ বছর বয়সে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মহিলা কংগ্রেসেএর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই নিখিল ভারত যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পদ লাভ করেন।

মহিলা কংগ্রেসের দায়িত্বে থাকাকালীন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীও তার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। এরপর লোকসভা নির্বাচনে কোলকাতার যাদবপুরের প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতাকে হারিয়ে ভারতের সর্বকনিষ্ঠ পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন মমতা। যদিও ১৯৮৯ সালে কংগ্রেস ছাড়ার পর সেই আসনেই পরাজিত হন তিনি।

এরপর ১৯৯১ সাল থেকে টানা পাঁচবার আবারও কলকাতা দক্ষিণ আসন থেকে লোকসভা সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন মমতা। সিপিআইএমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ, পার্লামেন্টে জ্বালানীর মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ এবং এমপির দায়িত্ব থেকে পদত্যাগের ঘোষণায় আলোচিত হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসীমা রাও এর সময়কালে কেন্দ্রীয় সরকারের রাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। 

তৃণমূল কংগ্রেসের পথচলা
১৯৯৮ সালে কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসে তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৯৯ সালে বিজেপি জোটের শরিক দল হিসেবে রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তৃণমূল নেত্রী। ধীরে ধীরে বামদল, কমিউনিস্ট পার্টি শাসিত পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল হয়ে ওঠে তৃণমূল কংগ্রেস।

২০০৫ সালে পশ্চিমবঙ্গে শিল্প কারখানা স্থাপনের জন্য কৃষিজমি বরাদ্দের প্রতিবাদে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামে জমি রক্ষার আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় তৃণমূল কংগ্রেস। নন্দীগ্রামের আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে অন্তত ১৪ জন নিহতের পর কৃষকদের বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়ে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে দলটি। একইসঙ্গে নন্দীগ্রাম থেকে পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় নেতা হয়ে ওঠেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টির চাইতেও তৃণমূল বেশি আসন পায়। এরপর বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সাথে জোট বেঁধে ৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকা বামফ্রন্টকে হটিয়ে রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে তৃণমূল কংগ্রেস।

মুখ্যমন্ত্রী মমতার জয়যাত্রা
২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৬ এবং ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনেও জয়ী হয় তৃণমূল কংগ্রেস। 

রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন, মমতা ব্যানার্জীর বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব আর জনপ্রিয়তাই তৃণমূলের মূল শক্তি।  সাধারণ মানুষের ভাষায় কথা বলা ও পাশের বাড়ির মেয়ের মতো সবাইকে আপন করে নেওয়ার মতো গুণ রয়েছে তার। তাই আকর্ষণীয় ও সহজাত এই নেতৃত্বের ওপরেই ভরসা করেন পশ্চিমবঙ্গের মানুষ।

আর সেকারণেই বিজেপিকে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ চেষ্টার পরেও রাজ্যে সুবিধা করতে পারছে না কেন্দ্রের দল বিজেপি। ২০০ আসনে জয়ের ঘোষণা দিয়েও নির্বাচনে মাত্র ৭৭ আসন পেয়েছে গেরুয়া শিবির। আর হুইলচেয়ারে বসে প্রচার চালিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের হয়ে ২১৩ আসনের জয় ছিনিয়ে এনেছেন।

তথ্যসূত্র: বিবিসি, আনন্দবাজার অনলাইন ও অন্যান্য

আরও পড়ুন