বিশ্বজুড়ে তাণ্ডব চালানো করোনাভাইরাসের লাগাম টানতে টিকার পাশাপাশি এবার মুখে খাওয়ার বড়িও আবিষ্কার হয়েছে। জাতিসংঘের সংস্থা মেডিসিনস পেটেন্ট পুলের (এমপিপি) এক চুক্তির মাধ্যমে মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মার্কের করোনা বড়ি ‘মলনুপিরাভির’সাশ্রয়ী মূল্যে সরবরাহ করা হবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১০৫টি দেশে। এর ফলে উচ্চমূল্যের এ বড়ি পাওয়া নিয়ে শঙ্কা কেটেছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের এ দেশগুলোর।
গত বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) নতুন চুক্তির বিষয়টি সামনে আনে এমপিপি। চুক্তি অনুযায়ী আগামী মাসে এই বড়ি সরবরাহ শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন এমপিপির একজন মুখপাত্র। ওষুধগুলো সরবরাহ করা হবে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, বাংলাদেশ, ইথিওপিয়া, ফিলিপাইন, মিসরসহ ১০৫টি দেশে।
এর আগে গত অক্টোবরেই এক চুক্তিতে এমপিপিকে এই বড়ি উৎপাদনের আনুষ্ঠানিক অনুমতি দিয়েছিল মার্ক। এরপর নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোর হাতে ওষুধটি তুলে দিতে ওই চুক্তির আওতায় বিশ্বের ২৭টি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নতুন চুক্তি করেছে এমপিপি।
মার্কের তথ্যমতে, করোনায় আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় পাঁচ দিনে এক কোর্স মলনুপিরাভির বড়ি (৪০টি) গ্রহণ করতে হয়। মার্কের সঙ্গে করা এমপিপির চুক্তি অনুযায়ী, কম দামে মলনুপিরাভির উৎপাদনে কোনো রয়্যালটি নেবে না মার্ক। ফলে দরিদ্র দেশগুলোর বাসিন্দারা কমবেশি ২০ মার্কিন ডলার খরচ করলেই এক কোর্স বড়ি পাবেন বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির এক কর্মকর্তা। সম্প্রতি করোনা চিকিৎসায় মলনুপিরাভিরের অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যেই মার্কের কাছ থেকে ১৭ লাখ কোর্স বড়ি কিনতে রাজি হয়েছে দেশটি। মার্কিন সরকারের কাছে মার্ক প্রতি কোর্স বড়ির দাম ধরেছে ৭০০ মার্কিন ডলার।
এমপিপির নির্বাহী পরিচালক চার্লস গোর বলেছেন, ‘আমরা আশাবাদী যে, নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে এই বহুপ্রত্যাশিত চিকিৎসা শিগগিরই সহজলভ্য হবে।’
এদিকে মার্কের মতোই করোনা চিকিৎসায় প্যাক্সলোভিড নামে মুখে খাওয়া বড়ি এনেছে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক বহুজাতিক ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজার। গত ডিসেম্বরে মার্কের মলনুপিরাভিরের পাশাপাশি প্যাক্সলোভিডের অনুমোদন দেয় মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)।
গবেষণায় দেখা গেছে, ফাইজারের প্যাক্সলোভিড ও মার্কের মলনুপিরাভি বড়ি ভাইরাস পুনরুৎপাদনের সক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং একপর্যায়ে ভাইরাসের শক্তি ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। মলনুপিরাভি বড়ি ঝুঁকিতে থাকা করোনা রোগীর মৃত্যুঝুঁকি ৩০ শতাংশ কমিয়ে দেয়। এ ক্ষেত্রে মার্কের চেয়ে ফাইজারের বড়ি কার্যকারিতায় এগিয়ে। করোনায় আক্রান্ত হওয়া উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা রোগীদের মৃত্যুঝুঁকি কিংবা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার হার প্রায় ৯০ শতাংশ কমিয়ে দেয় ফাইজারের প্যাক্সলোভিড।