নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট এবং এর জেরে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কা। সংকটের কারণে জ্বালানি, খাবার এবং ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর আমদানি মূল্যও পরিশোধ করতে পারছে না দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি।
এছাড়া সংকটকে চরম অবস্থায় নিয়ে গেছে দেশটির সরকার বিরোধী গণআন্দোলন। তবে এখন কেবল শ্রীলঙ্কায় নয়, দেশটির পথে হাঁটছে আরও এক দক্ষিণ এশীয় দেশ পাকিস্তান। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, শ্রীলঙ্কার মতো সংকটের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে পাকিস্তান।
রোববার (২৪ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি থেকে খুব বেশি দূরে নয় এবং মানুষ শিগগিরই মাফিয়াদের দুর্নীতি ও লুটপাটের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসবে বলে শনিবার সতর্ক করেছেন দেশটির বিরোধী রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ (পিটিআই) প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
শনিবার নিজের মতামত ও উদ্বেগ প্রকাশ করে টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় ইমরান খান বলেন, ‘পাকিস্তানের ‘হাকীকী আজাদী’ (সত্যিকারের স্বাধীনতা) নিয়ে তার আহ্বানের জবাবে মানুষের প্রতিক্রিয়া এবং তাদের মনোভাব বোঝার পরে আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, পাকিস্তানের জনগণ সহ্যের চরম সীমায় পৌঁছেছে এবং এই মাফিয়াদেরকে লুটপাট আর লুণ্ঠন চালিয়ে যেতে দেবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতিতে পরিণত হওয়া থেকে বেশি দূরে নই। এসময় আমাদের জনগণ রাস্তায় নেমে আসবে। আমার প্রশ্ন হলো : মাত্র তিন মাসের মধ্যে জারদারি-শরীফের মাফিয়ারা দেশকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে নতজানু করে ফেলেছে; তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য, ৩০ বছর ধরে তারা দেশকে লুট করে যে সম্পদ জমিয়েছে তা রক্ষা করা। আমার প্রশ্ন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো আর কত দিন ধরে এমন কাজ বরদাস্ত করবে।’
সংবাদমাধ্যম বলছে, সম্প্রতি উপনির্বাচনে বিপুল জয়ের পরেও আইনসভার ডেপুটি স্পিকারের বিতর্কিত রায়ে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের ক্ষমতা দখল করতে পারেনি ইমরানের দল। এই পরিস্থিতিতে শনিবার ক্ষমতাসীন ‘পাকিস্তান মুসলিম লিগ নওয়াজ (পিএমএল-এন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির জোটের বিরুদ্ধে সরব হন পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। মূলত পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের পরিবার এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারিকে লক্ষ্য করেই এসব কথা বলেন ইমরান খান।
মূলত গত সপ্তাহে পাঞ্জাবের উপনির্বাচনে জয়ের পর শুক্রবার প্রদেশের আইনসভায় মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোটও পেয়েছিলেন ইমরান তথা পিটিআই-এর প্রার্থী চৌধুরী পারভেজ ইলাহি। কিন্তু ডেপুটি স্পিকারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে সর্বোচ্চ ভোট না পেয়েও মুখ্যমন্ত্রী হন পিএমএল (এন)-পিপিপি জোটের প্রার্থী শেহবাজ-পুত্র হামজা শরীফ।
উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। করোনা মহামারি, জাতীয় অর্থনীতি পরিচালনায় সরকারের অদক্ষতা, বিশ্বজুড়ে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ তলানিতে নেমে যাওয়ায় শ্রীলঙ্কায় বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
জ্বালানি, খাবার এবং ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর আমদানি মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না শ্রীলঙ্কা। ডিজেলের সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে পড়ায় প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো। ফলে গত কয়েক মাস ধরে সেখানে দিনের বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকছে না।
এছাড়া চলতি মাসের মাঝামাঝিতে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানায়, শ্রীলঙ্কার পর বর্তমান বিশ্বের আরও এক ডজন তথা ১২টি দেশ এখন অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। মূলত নানামুখী বিপর্যয়ের কারণে খাদের কিনারায় থাকা দেশগুলোকে চিহ্নিত করে তাদের অর্থনৈতিক দুরবস্থার দিকটিকে সামনে আনে বার্তাসংস্থাটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্রীলঙ্কার পর অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে থাকা এসব দেশের বৈদেশিক ঋণ, মুদ্রাস্ফীতি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যা ভবিষ্যতের চরম সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। আর্জেন্টিনা, ইউক্রেন, মিশর, কেনিয়া, ইথিওপিয়া, এল সালভাদর, ইকুয়েডরসহ ওই তালিকায় রয়েছে বেলারুশ, নাইজেরিয়া, পাকিস্তানের মতো দেশও।