• ঢাকা
  • রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০২২, ১০:০৪ এএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ৪, ২০২২, ১০:০৪ এএম

যেভাবে সিরিয়াল কিলার হয়ে গেলেন চিকিৎসক

যেভাবে সিরিয়াল কিলার হয়ে গেলেন চিকিৎসক

ভারতে সিরিয়াল কিলিংয়ের এমন কিছু ঘটনা রয়েছে, যা মানুষের গায়ে কাঁটা দেবে। পুলিশ কর্মকর্তারাও যখন তদন্ত করেছেন, তখন এমন ভয়াবহ তথ্য সামনে এসেছে, যা দেখে তারাও চমকে গেছেন।

২০০৪ সালে দিল্লি পুলিশের হাতে এমনই এক সিরিয়াল কিলার ধরা পড়ে। তবে তার খুন করার পদ্ধতি শুনে পুলিশ কর্মকর্তারাও ঘাবড়ে যান দেবেন্দ্র শর্মা ওরফে দেবিন্দর, যিনি ‘ডক্টর ডেথ’ (মৃত্যুর চিকিৎসক) নামে বেশি পরিচিত। পেশায় চিকিৎসক হলেও রোগীদের প্রাণ বাঁচানোর বদলে একের পর এক খুন করেছেন তিনি।

পুলিশ সূত্রে খবর, জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালে দেবেন্দ্র খুব শান্ত মাথায় বলেছিল, একটা সময় পর সে খুনের হিসাব রাখা ছেড়ে দিয়েছিল। সারা জীবনে তিনি ৫০-এর বেশি খুন করেছেন। সেই সংখ্যা ১০০-ও হতে পারে— এমনই জানিয়েছিলেন তিনি। খুনের পেছনে কী উদ্দেশ ছিল, তা জিজ্ঞাসা করতেই দেবেন্দ্র জানায়, বহু দিন ধরেই আর্থিক টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছিল। অর্থ উপার্জনের রাস্তা খুঁজছিল সে। তাই শেষ পর্যন্ত এই পথই বেছে নেয় দেবেন্দ্র। বিহার থেকে আয়ুর্বেদিক নিয়ে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করার পর ১১ বছর ধরে নিজের ক্লিনিকেই রোগী দেখত দেবেন্দ্র। সেই সময় তার আর্থিক পরিস্থিতি খুব একটা ভালো ছিল না।

ডাক্তারি পেশায় থাকায় তিনি জানত, বেআইনিভাবে কিডনি প্রতিস্থাপন করলে বিপুল পরিমাণ টাকা রোজগার করা যায়। পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৪ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত টানা ১০ বছর তিনি ১২৫টি কিডনি প্রতিস্থাপন করেছিল। একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করতেই তিনি পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত পেতেন।

বেআইনিভাবে টাকা রোজগারের জন্য প্রথমে একটি ভুয়া গ্যাস এজেন্সিও খুলেছিল দেবেন্দ্র। তবে ব্যবসায় লোকসান হওয়ায় তিনি কিডনি প্রতিস্থাপন করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন।

কিডনি পাচার-কাণ্ডের তদন্ত শুরু করলে ২০০৪ সালে দেবেন্দ্র গুরুগ্রাম পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। সেই সময় দেবেন্দ্র ও তার দলের সদস্যরা টাকা রোজগারের জন্য আরও নৃশংস পথ বেছে নিয়েছিল। তারা খোঁজ পেয়েছিল, উত্তরপ্রদেশে ট্যাক্সি বিক্রি করে প্রচুর টাকা পাওয়া যায়। তাই ট্যাক্সিচালকদের অপহরণ করে প্রথমে দলের সদস্যরা তাদের খুন করত। পরে সেই ট্যাক্সিগুলো বিক্রি করে ট্যাক্সিপিছু ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পেত তারা।

একই বছরে জয়পুরের এক ট্যাক্সিচালককে খুন করার অপরাধে দেবেন্দ্রকে রাজস্থান আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয়। ২০০৭ সালে ফরিদাবাদের এক ট্যাক্সিচালককে হত্যার অপরাধে দেবেন্দ্র-সহ আরও দুই সদস্য দোষী সাব্যস্ত হয়। পরে ২১ জন চালককে খুন করার অপরাধে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়।

ঠিক তার পরের বছর গুরুগ্রাম আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেয়। দেবেন্দ্র স্বীকার করে, সে ৫০টিরও বেশি খুন করেছে। ১৬ বছর টানা জেল খাটার পর তাকে ২০ দিনের জন্য প্যারোলে ছাড়া হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে ফিরে না এলে তল্লাশি শুরু করে পুলিশ।

প্যারোল থেকে ছাড়া পাওয়ার ছয় মাস পর হদিস মেলে দেবেন্দ্রর। পুলিশের দাবি, সে জয়পুর থেকে সোজা দিল্লিতে যায়। বাপরোলা এলাকায় এক বিধবা নারীকে বিয়ে করে সে। তারপর জমি বিক্রির ব্যবসা শুরু করে দেবেন্দ্র।

দিল্লি থেকেই জয়পুরের এক ব্যক্তিকে জমি বিক্রি করে সে। তবে লোক ঠকানোর জন্যেই সে এই ব্যবসায় নামে। পুলিশের কাছে ধরা পড়ার পর সে জানায়, দিল্লিতে আসার পর সে নতুন ভাবে জীবন শুরু করবে বলে ভেবেছিল। তাই বিয়ে করে নতুন ব্যবসা শুরু করে।

হত্যার পর মরদেহগুলো কোথায় লুকিয়ে রেখেছে— জিজ্ঞাসাবাদে দেবেন্দ্র জানায়, খুন করার পর কাশগঞ্জের হাজারা খালে চালকদের দেহ ফেলে দিত সে। সেই খালে ভর্তি কুমির। ফলে মৃতদেহের হদিস পাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

নিজে যাতে কোনো ভাবেই ধরা না পড়ে, তার জন্য এত নিখুঁত পরিকল্পনা করেছিল, যা শুনে পুলিশও অবাক হয়ে যায়। এখনও সিরিয়াল কিলারদের তালিকা ঘাটলে ‘ডক্টর ডেথ’-এর নাম তালিকার শীর্ষে থাকে।