কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে নাশকতা ও তাণ্ডবের মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সতর্ক করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার।
বাংলাদেশ বিষয়ে মমতার ‘উসকানিমূলক বক্তব্য’ নিয়ে আগেই আপত্তি জানিয়ে দিল্লিকে নোট দিয়েছিল ঢাকা। সেই আপত্তি পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল।
এরপরই মমতাকে ভারতের সংবিধানের কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিষয়ে কথা বলা নিয়ে সাবধান থাকতে পরামর্শ দিয়েছে রণবীর।
মমতাকে সংবিধানের পাঠ দিয়ে তিনি বলেন, অন্য কোনো দেশ বা বৈদেশিক বিষয় নিয়ে পদক্ষেপ করার অধিকার কোনো রাজ্য সরকারের নেই। সংবিধান সেই অধিকার রাজ্যকে দেয়নি।
‘বিষয়টি একান্তভাবে ভারত সরকারের হাতে। তাই আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে কোনো রাজ্যের নাক গলানোর প্রয়োজন নেই,’ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে তিস্তার পানিবণ্টন ইস্যুতে দিল্লি ইতিবাচক মনোভাব দেখালেও, তখন থেকে বেঁকে বসেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তখন থেকেই একের পর এক কথা বলতে শুরু করেন তিনি।
এর মধ্যেই কোটা আন্দোলন নিয়ে বাংলাদেশে যখন উত্তাপ-উত্তেজনা তুঙ্গে ঠিক তখনই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মমতার মন্তব্যে তোলপাড় শুরু হয়।
গেল রোববার কলকাতার এক জনসভায় বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনায় প্রসঙ্গে প্রথমেই তিনি বলে নিয়েছিলেন, আমি বাংলাদেশ নিয়ে কোনও কথা বলতে পারি না কারণ, ওটা একটা আলাদা দেশ। যা বলার ভারত সরকার বলবে।
কিন্তু এরপরই বিতর্কিত মন্তব্য করে বসেন তিনি। মমতা বলেন, আমি এটুকু বলতে পারি যে অসহায় মানুষ যদি বাংলার দরজায় খটখটানি করে, আমরা তাদের আশ্রয় নিশ্চয়ই দেব। তার কারণ ইউনাইটেড নেশনসের একটা রেজল্যুশন আছে যে, কেউ যদি রিফিউজি হয়ে যায় তাকে পার্শ্ববর্তী এলাকা সম্মান জানাবে।
তৃণমূল নেত্রী আরও বলেন, আমাদের সহমর্মিতা, আমাদের দু:খ, সে যারই রক্ত ঝরুক, তাদের জন্য আছে। আমরা দুঃখী, আমরাও খবর রাখছি। ছাত্রছাত্রীদের মহান প্রাণ, তাজা প্রাণগুলো চলে যাচ্ছে।
ওইদিনই এক্সের পোস্টে মমতা বলেন, বাংলাদেশ থেকে কয়েকশো ছাত্র এবং অন্যান্যরা পশ্চিমবঙ্গ আর ভারতে ফিরে আসছেন। আমি রাজ্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি যাতে তাদের সব রকম সাহায্য সহযোগিতা করা হয়। পাশাপাশি ‘বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরছে’ বলে মন্তব্য করেছিলেন মমতা।
মমতা ব্যানার্জির এসব মন্তব্য নিয়ে বাংলাদেশের আপত্তির নোট পাঠানো হয় ভারত সরকারের কাছে। বাংলাদেশের পাশাপাশি এই ভাষণের কড়া প্রতিক্রিয়া জানায় বিজেপিও।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সাংবাদিকদের বলেন, আমি আপনাদের নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর করা মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে আমরা একটি কূটনৈতিক নোট পেয়েছি। আপনারা (সংবাদমাধ্যম) রিপোর্টে যেমনটা দেখেছেন, খানিকটা সে রকমই (নোট পাঠানো হয়েছে)।
তিনি বলেন, ভারতের সংবিধানের সপ্তম তফসিলের প্রথম তালিকার ১০ নম্বর অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, বিদেশ সংক্রান্ত সমস্ত বিষয় এবং অন্য কোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্কিত কেন্দ্রীয় সরকারের সমস্ত বিষয়ের এক্তিয়ার একমাত্র ভারত সরকারের।
ভারতীয় মুখপাত্র পরিষ্কার করে বলেছেন যে, আমাদের অবস্থানটা স্পষ্ট। সাংবিধানিক এখতিয়ারের বাইরের কোনও বিষয় নিয়ে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।
জাগরণ/আন্তর্জাতিক/এমএ