সৈয়দ আলমাস কবীর। একজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী নেতা এবং তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি মেট্রোনেট বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও এবং আইএএল করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। পাশাপাশি বেসিসের প্রতিনিধিত্বকারী এফবিসিসিআইয়ের পরিচালকও। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আসন্ন বাজেট, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রসার এবং এর বিভিন্ন দিক নিয়ে জাগরণ অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। কথোপকথনে অংশ নিয়েছেন শাহাদাত হোসেন তৌহিদ।
জাগরণ: দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট ১ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। ২০২১-২২ সালে কেমন বরাদ্দ চাচ্ছেন?
সৈয়দ আলমাস কবীর: এবারের বাজেটে আমাদের যে সুপারিশ, সেখানে প্রথমে আমরা যেটা বলেছি, ২০২৪ সাল পর্যন্ত যে ট্যাক্স হলিডে পাচ্ছি, অর্থাৎ সফটওয়্যার কোম্পানি এবং আইটি সক্ষম সার্ভিসেস কোম্পানিগুলো সেটাকে বাড়িয়ে ২০৩০ পর্যন্ত করা দরকার। কারণ, আমাদের সামনে বেশ কিছু লক্ষ্য রয়েছে। যেমন আমাদের ২০২৫-এর মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারের একটা রপ্তানির লক্ষ্য রয়েছে। আমাদের স্থানীয় বাজারেও কিছু টার্গেট রয়েছে। যেহেতু করোনাকালীন ব্যবসা-বাণিজ্যে একটা খারাপ অবস্থায় গেছে এবং আইসিটি খাতেও এটার খুব মন্দাভাব গেছে, এতে আমরা কিছুটা পিছিয়ে গেছি। এটাকে আমরা ধরে রাখতে চাই। দ্বিতীয়ত, এই খাতে আরও বিনিয়োগ দরকার। বিশেষ করে বিদেশি বিনিয়োগকে এখানে নিয়ে আসতে চাই। সে কারণে বিনিয়োগকারীরা যদি দেখেন যে আগামী ২০৩০ পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি একটা হলিডে আছে তাহলে অনেকে এখানে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে। এটা আমাদের একটা বড় প্রস্তাব।
গুরুত্ব আরও কিছু প্রস্তাবের মধ্যে, যেগুলো আছে তার মধ্যে আরেকটা হচ্ছে, আইটি সক্ষম সার্ভিসেস কোম্পানিগুলোর মধ্যে চব্বিশ-পঁচিশটার মতো আইটেম রয়েছে। সেখানে আমরা আরও চার-পাঁচটা আইটেম যেগুলো নতুন হয়েছে যেমন সফটওয়্যার সার্ভিস, ক্লাউড ফ্ল্যাটফর্ম এ-জাতীয় নতুন কিছু কিছু জিনিসকে আমরা যুক্ত করতে বলেছি।
এ ছাড়া আরেকটা জিনিস হচ্ছে, যেকোনো ডিজিটাল ট্রানজেকশন বা ডিজিটাল পেমেন্ট যখন হবে সেই ডিজিটাল পেমেন্টকে ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা। এতে যেটা হবে কনজ্যুমার তখন ডিজিট্যালি পেমেন্ট করতে বেশি বেশি উৎসাহিত হবে। ক্যাশলেস সোসাইটির দিকে আমরা তাড়াতাড়ি এগোতে পারব। আমরা দেখেছি যে করোনার সময় অনলাইনে কেনাকাটাগুলো হয়েছে তখন ক্যাশ অন ডেলিভারি (সিও) কমে গেছে এবং ডিজিটাল পেমেন্ট যেখানে ১৫ শতাংশ ছিল সেটা বেড়ে ৩০-৩৫ শতাংশ হয়ে গেছে। মানে ডাবলের বেশি। এই যে গতিটা এটাকে ধরে রাখতে হবে। এটাতেও যদি সুবিধা পাওয়া যায় যে ভ্যাট দেওয়া লাগবে না, তাহলে অনেকেই ডিজিট্যালি পেমেন্ট করা শুরু করবে।
আরেকটা হচ্ছে, আমাদের আইটিইএস পরিষেবায় এগুলোতে অনেক সময় দেখা যায় ভ্যাট ইন সোর্স, মানে উৎসে মূসক এটা কিন্তু কাটা হয় ৪.৫ শতাংশ। এটাতে যেন না কাটা হয়। কারণ, যেহেতু এটা সেবা। বেশির ভাগ সময় দেখা যায় যে গ্রাহক কিন্তু দু-তিন মাস পরে বিলটা দেয় সেই বিলটা কিন্তু শতভাগ দেন না। কিছু হয়তো কেটে রাখে। কারণ, এটা তো একটা সেবা এবং এটা একটা সাবজেক্টিভ ব্যাপার। আমরা কিন্তু ওদিকে আবার পুরো টাকার ওপরে ভ্যাট প্রদান করেছি। এই অসুবিধাটার কারণে অনেকে এই খাতে পরিষেবা বা সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রিতে আসতে চায় না। এখানে আমার মনে হয় এই ভ্যাটের সোর্সটা বন্ধ করা উচিত।
আরও একটা জিনিস আমরা বলেছি যে বাংলাদেশে অনেকগুলো আইটি কোম্পানি তাদের বড় বড় কাজ করার এখন অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে। যেমন আমরা এনআইডি, ড্রাইভিং লাইসেন্স, হজ ম্যানেজমেন্টের মতো বড় কাজ করছি। আমরা বড় বড় ডেটা সেন্টার তৈরি করেছি। এই যে বড় বড় কাজ করার যে অভিজ্ঞতা, বড় প্রজেক্ট করার যে অভিজ্ঞতা, এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমরা এই কাজগুলো বিদেশেও করতে চাই। বিদেশে রেপ্লিকেট করতে চাই। ধরেন যে একটা ডেভেলপিং কান্ট্রি বা লিজ-ডেভেলপিং কান্ট্রিতে তাদেরও তো ধরেন এনআইডি, হজ ম্যানেজমেন্ট করতে হবে। এ ধরনের কাজগুলো আমরা সেখানে করতে চাই। এই জন্য আমার বলেছি যে দুই দেশের সরকারের মধ্যে যদি জিটুজি চুক্তি হয়। যেখানে বাংলাদেশে সরকার একটা অর্থ অনুদান দেবে ওই সরকারকে। কিন্তু শর্ত থাকবে ওই যে প্রকল্প যে কাজটা করা হবে, সেই কাজটা যেন বাংলাদেশি কোনো কোম্পানিকে দিয়ে করিয়ে নিতে হবে। তাহলে দেখা যাবে যে, টাকাটা আমাদের ফেরত আসবে ঠিকই কিন্তু মাঝখানে যেটা হবে যে আইটি কোম্পানিগুলো একটা বিদেশে কাজ করা একটা ভালো অভিজ্ঞতা হবে। এবং বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিংটাও বিশ্বের বাজারে কিন্তু খুব সম্মানজনকভাবে উপস্থাপন হবে। এর জন্য জিটুজি অ্যাগ্রিমেন্ট এটার জন্য আমরা বলেছি যে, এর জন্য যদি ৫০০ কোটি টাকার একটা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই টেকনিক্যাল অ্যাসিসট্যান্ট (টিএ) প্রজেক্ট, এটার জন্যও বলেছি। এগুলোই আমাদের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট।
জাগরণ: করোনাকালে প্রযুক্তিনির্ভরতা বেড়েছে, তাই এই খাতে বাজেট কেমন হওয়া উচিত?
সৈয়দ আলমাস কবীর: আমি যেটা মনে করি, গত দেড় বছরে করোনায় লকডাউনের কারণে আইটির গুরুত্বটা সবাই উপলব্ধি করতে পেরেছে। সরকারও এটা বুঝতে পেরেছে যে এটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আগে যেটা আমার সরকারের যে ডিজিটাল বাংলাদেশের যে ম্যান্ডেটটা ছিল, সেটার প্রধান কারণ ছিল যে আমরা একটা স্বচ্ছ, একটা প্রোডাক্টিভ এবং অ্যাপ্রিশিয়েন্ট একটা জাতি তৈরি করতে চাই। এখন যেটা হয়েছে, এটা একটা রিকোয়ারম্যান্ট। টেকনোলজি যদি না থাকত, আমি কিন্তু ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারতাম না, মিটিং করতে পারতাম না, ব্যাংকিং করতে পারতাম না, ক্লাসরুম হতো না, বিচারকার্য বন্ধ থাকত। সুতরাং এই যে এটা একটা অতি জরুরি একটা পদ্ধতি বা উপায়, এটা মানুষ উপলব্ধি করতে পেরেছে, বিশেষ করে সরকার। সে হিসেবে আমি আশা করব যে এবার বাজেটে এটার প্রতিফলনটা থাকবে। যে সরকারে বিভিন্ন যে মন্ত্রণালয়গুলো এবং গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলো তাদের ডিজিটালাইজেশনের যে অ্যাপার্ট, এটার ব্যাপারে ভালো বরা্দ্দ থাকবে। ভালো বাজেট থাকবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও এজেন্সিগুলোতে। এতে আমার মনে হয় যে সরকার আরও তাড়াতাড়ি ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি করতে পারবে। শুধু তা-ই না, আমরা আরও বেশি প্রোডাক্টিভ হতে পারব।
জাগরণ: তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশ কোন পর্যায়ে?
সৈয়দ আলমাস কবীর: বাংলাদেশ এখন একটা গ্রোয়িং স্টেজে আছে। বলতে পারেন যে রানওয়েতে আছি টেকআপ করার জন্য। আমরা দৌড়ানো শুরু করেছি। অতি শিগগির হয়তো আমরা টেকআপ করে ফেলবে। যেটার কারণে একটু দেরি হচ্ছে সেটা হচ্ছে আমাদের মেধা আছে কিন্তু দক্ষ মানুষের অভাব আছে। যথেষ্ট দক্ষ মানুষ এখনো আমাদের নেই। এটা আমাদের খুব তাড়াতাড়ি তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া সারা দেশে ১০ থেকে সাড়ে ১০ কোটির মতো ইন্টারনেট ব্যবহারকারী আছে। এটাকে আরও শক্তিশালী করা দরকার। ইন্টারনেটকে আরও ছড়িয়ে দেওয়া, আরও সুলভ করা, সহজলভ্য করা। আমার মনে হয় এগুলো যদি আমরা করতে পারি সহজেই আমরা যে টেকআপ করতে পারব এবং আরএমজি (রেডিমেট গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রি) ওপরে যে আমাদের এক্সপোর্ট ডিপেনডেন্সি রয়েছে, এটাকে কাটিয়ে উঠে আমরা আইটিকে একটা বিকল্প হিসেবে ভাবতে পারব।
জাগরণ: বাংলাদেশে প্রযুক্তি খাতে কী কী পরিকল্পনা প্রয়োজন?
সৈয়দ আলমাস কবীর: যেটা বলছিলাম স্কিল ডেভেলপমেন্ট, দক্ষ মানুষ তৈরি করতে হবে খুব তাড়াতাড়ি। আমাদের যে তরুণরা রয়েছে, সেই তরুণদের থেকে যদি সুবিধা নিতে চাই, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড যদি আমরা সত্যি সত্যি নিতে চাই, তাহলে দক্ষ জনশক্তির কোনো বিকল্প নেই। আমাদের দক্ষ জনশক্তি কীভাবে তৈরি করব, সেটার প্ল্যানিং স্ট্র্যাটেজি তৈরি করে দ্রুত কাজ করতে হবে। এর জন্য আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার একটা আমূল পরিবর্তন করতে হবে।
একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, যেহেতু চতুর্থ শিল্পবিপ্লব চলেই এসেছে বলা যায়, এই শিল্পবিপ্লবের জন্য যে দক্ষতা দরকার, যে টেকনোলজিগুলো দরকার, সেসব বিষয়ে কিন্তু দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তাহলে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারব। আমাদের যে প্রতিবেশী-প্রতিযোগী দেশ আছে, তাদের থেকে আমরা এগোতে পারব। দ্বিতীয়ত, আবারও সেই অবকাঠামো। ইন্টারনেটের অবকাঠামো একেবারে গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া। আর যে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক বিভিন্ন জেলায় হচ্ছে, সেগুলোকে খুব তাড়াতাড়ি শেষ করে ফেলা। তাহলে এই যে ঢাকামুখী একটা প্রবণতা, সবাই ঢাকায় আসতে চায়, এটা না এসে বিভিন্ন গ্রামে-শহরে এবং বিভিন্ন জেলা শহরগুলো রয়েছে, সেখানেও কিন্তু আমরা দেখব, আইটির কার্যক্রম অনেক বেড়ে গেছে।
জাগরণ: বেসিস যে অর্থে যাত্রা শুরু করেছিল, তা কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
সৈয়দ আলমাস কবীর: বেসিস ২৪-২৫ বছর ধরে ইন্ডাস্ট্রির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের যে কোম্পানিগুলো আছে, সেগুলোর জন্য কাজ করে যাচ্ছি। বেসিস যাত্রা শুরু করেছিল ১৮টা কোম্পানি নিয়ে এখন ১৬০০ ওপরে কোম্পানি রয়েছে বেসিসের মেম্বার। বেসিস অনেকগুলো কাজ করেছে। যেমন আপনি জানেন যে পলিসি মেকিংয়ে আমরা অনেকটা অবদান রাখতে পেরেছি। সরকারের যে ডিজিটাল বাংলাদেশে ট্রাস্কফোর্স আছে সেখানে আমরা বেসিস মেম্বারশিপ পেয়েছি। সেখানে আমরা বিভিন্ন রকমের পরামর্শ দিই। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সরকারের যে নীতিনির্ধারণী দপ্তরগুলো আছে, সেখানে আমাদের কথাগুলোকে যথেষ্ট গুরুত্বসহকারে নেওয়া হয়। বেসিসকে এমন একটা পর্যায়ে আমরা নিয়ে আসতে পেরেছি, এখানে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ যে কমিটিগুলো আছে, সেগুলোতে বেসিসকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আমাদের বেসিসের যে জয়যাত্রা, সেটা অবশ্যই সফল। আরেকটা জিনিস হচ্ছে আমরা যদি নাম্বার চিন্তা করি, আপনি দেখবেন যে আমাদের দশ-এগারো বছর আগে আমাদের এক্সপোর্ট ছিল ২৬-২৭ মিলিয়ন ডলার, সেটা এখন বেড়ে এক বিলিয়ন ডলারে পরিণত হয়েছে। শিগগিরই আমরা ৫ বিলিয়নে নিতে চাই। আমি মনে করি, আমরা যথেষ্টই সফল বেসিস থেকে। একই সঙ্গে আমি ধন্যবাদ দেব সরকারকে। সরকার আমাদের যথেষ্ট সাপোর্ট দিয়েছে।
জাগরণ: এনবিআর সূত্র বলছে, আইটি খাতের আরও নতুন পাঁচটি সেবাকে কর অব্যাহতির সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। সেবাগুলো হচ্ছে—ক্লাডউ সার্ভিস, সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন, ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম, ই-বুক পাবলিকেশন, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস এবং ফ্রিল্যান্সিং। এই কর অব্যাহতির বিষয়টি কীভাবে দেখছেন? তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে?
সৈয়দ আলমাস কবীর: আমাদের বাজেট প্রস্তাবে এটা ছিল। বলেছিলাম যে, আইটিসক্ষম সার্ভিস বা তথ্যপ্রযুক্তি-নির্ভরসেবা এটার সংজ্ঞা কিন্তু সব সময় পরিবর্তন হচ্ছে। প্রতিবছরই এই সংজ্ঞার মধ্যে নতুন নতুন কিছু সার্ভিস যুক্ত করতে আমরা বলি। এবারও আমরা বলেছিলাম। আমি খুবই খুশি হব যদি সরকার আমাদের এই প্রস্তাবনাটা গ্রহণ করে এই নতুন সার্ভিসগুলো তো তারা যুক্ত করেন। যেমন ক্লাউড সার্ভিস। আমাদের জন্য অনেক নতুন। অ্যাপ্লিকেশন এজ এ সার্ভিস, ই-লার্নিং। আপনি জানেন যেমন এই মহামরির সময় আমরা দেখেছি যে রিমোট ক্লাসরুম, ডিজিটাল লার্নিং ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এবং আরও হবে। এখন আমরা একটা অবকাঠামো তৈরি করছি, বিভিন্ন রকমের নেটওয়ার্ক তৈরি হচ্ছে। এই জাতীয় নতুন নতুন পরিষেবাগুলোকে আইটিসক্ষম সেবায় যদি অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং সেগুলো কর অব্যাহতি পাবে। আমার মনে হয় এই ইন্ডাস্ট্রিতে আরও বেশি মানুষ উৎসাহিত হবে, বিনিয়োগও আরও বেশি করে আসবে।
জাগরণ: অর্থনৈতিক ডিজিটাল টান্সমিশনকে ত্বরান্বিত করতে ও উদ্যোক্তা তৈরিতে এ বাজেট কীভাবে কাজ করবে?
সৈয়দ আলমাস কবীর: ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের কথা যদি বলেন গত বছরে কিন্তু অনেক বেড়েছে। প্রথমত, ভাইরাসের জন্য মানুষ টাকা হাতে নিতে চায়নি, অনলাইনে কেনাকাটার সময় আমরা আগে যেটা দেখতাম যে ১৫ শতাংশের মতো ডিজিটাল পেমেন্ট। সেটা ৩০-৩৫ শতাংশ হয়েছে, যেটা দ্বিগুণের বেশি। এই গতিটাকে ধরে রাখতে হবে। ধরে রাখার জন্য আমার দুটি প্রস্তাবনা করছি। এবারের বাজেটে এনবিআরের কাছে একটা প্রস্তাবনা হচ্ছে যে ডিজিটাল পেমেন্টের ওপরে যাতে কোনো ভ্যাট না রাখে। ডিজিটাল পেমেন্টকে যেন করের আওতামুক্ত রাখা হয়, তাহলে মানুষ ক্যাশের চেয়ে ডিজিটাল পেমেন্ট করতে বেশি উৎসাহিত হবে।
দ্বিতীয়ত হচ্ছে, আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকারের সঙ্গে কথা বলেছি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দু-তিনটা সভা করেছি। আমরা বলেছি ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস যখন ব্যবহার করা হবে, সেটা ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে হোক বা এমএফএসের মাধ্যমে হোক অর্থাৎ ক্যাশলেস ট্রানজেকশন যখন হবে, তখন সরকার থেকে যেন একটা লভ্যাংশ দেওয়া হয়। আমরা বলেছি যে, ৫ শতাংশ ক্যাশব্যাক লভ্যাংশ সরকার যদি ঘোষণা করে, যার আড়াই শতাংশ পাবেন ক্রেতা আর আড়াই শতাংশ পাবেন বিক্রেতা। তখন দেখা যাবে বিক্রেতাও ডিজিটালি পেমেন্ট গ্রহণ করতে উৎসাহিত হচ্ছেন। অনেক সময় দেখা যায়, অনেক বিক্রেতা বলে যে না আমরা ক্রেডিট কার্ড নেব না বা আমি বিকাশ নেব না, তখন কিন্তু তারা নেওয়ার জন্য উৎসাহিত হবে। কারণ, তারা জানে আমি আড়াই শতাংশ ক্যাশব্যাক পাব। ক্রেতাও তখন ক্যাশ না দিয়ে ডিজিটাললি পেমেন্ট করতে চেষ্টা করবে। কারণ, তিনিও কিন্তু আরেকটা ক্যাশব্যাক পাবেন। এই ইনসেন্টিভটা যদি আগামী পাঁচ বছরের জন্য সরকার ঘোষণা করে তাহলে আমার মনে হয় ডিজিটাল সার্ভিস সেন্টারের জনপ্রিয়তা আরও অনেক বৃদ্ধি পাবে এবং আমার ক্যাশলেস সোসাইটির দিকে অনেক বেশি এগোতে পারব। শেষমেশ সরকার কিন্তু এটাতে অনেক বেশি রাজস্ব পাবে। কারণ, ডিজিটাল ট্রান্জকেশন আপনি জানেন যে একটা অডিট ট্রেন্ড।
আরেকটা যেটা বলতে চাই, ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসকে উৎসাহিত করার জন্য সরকারি যে ফি আছে, যেমন ধরেন আপনি ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করলেন ফি দিতে হবে, ট্রেড লাইসেন্সের ফি, পাসপোর্টসহ যেকোনো ধরনের ফি এবং সব ইউটিলিটি ফি, বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল, গ্যাসের বিল এগুলো যদি বাধ্য করা যে এগুলো ডিজিটালি পেমেন্ট করতে হয়। ক্যাশ গ্রহণ করা হবে না। এভাবে মনে হয় ডিজিটাল লেনদেন অনেক বেশি বেড়ে যাবে।
জাগরণ: উদ্যোক্তা তৈরিতে এবারের বাজেট কী ভূমিকা রাখবে?
সৈয়দ আলমাস কবীর: আমার মনে হয়, আমরা যত বেশি ডিজিটালি লেনদেন করব, তত বেশি কিন্তু সিনটেকের সার্ভিস তৈরি হবে। আপনি জানেন যে ব্যাংকগুলো কিন্তু ধীরে ধীরে টেকনোলজির দিকে ঝুঁকছে। এই যে আমরা ডিজিটাল ওয়ালেটের কথা বলি, কিউআর কোডের ব্যবহার করে পেমেন্টের কথা বলি। এই যে ক্যাশলেস ট্রানজেকশন এটার মধ্যে তো অনেক টেকনোলজি জড়িত। ফিনটেক যেটাকে আমরা বলি ফাইন্যান্সিয়াল টেকনোলজি। এটা যত বেশি জনপ্রিয় হবে, তত দেখা যাবে নতুন নতুন সার্ভিস আসছে। ফলে নতুন নতুন অনেক উদ্যোক্তা, অনেক তরুণ নতুন নতুন ইনোভেটিভ সার্ভিস নিয়ে তারা যুক্ত হবে। এবং আমার মনে হয় তারা আমাদের অর্থনীতিতে ধীরে ধীরে অবদান রাখা শুরু করবে।