জ্বর হলেই আতঙ্ক অনুভব করছেন রাজধানীর মানুষ। এ আতঙ্ক নিয়েই তারা ছুটে যাচ্ছেন হাসপাতাল বা চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে। ঢাকার উচ্চব্ত্তি থেকে নিম্নব্ত্তি- সব শ্রেণির মানুষের মধ্যেই এমন ডেঙ্গু আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
ইমরান হোসেন, মোহাম্মদপুর তাজমহল রোডের একটি বাসার সিকিউরিটি গার্ড। দুদিন ধরে তিনি জ্বরে আক্রান্ত। শনিবার রাতে ইমরান বলেন, খুব ভয়ে আছি। রোববার সকালেই ডাক্তারের কাছে যাব। জ্বরের সঙ্গে সর্দি আছে। মনে হচ্ছে সর্দি জ্বরই। কিন্তু যেভাবে চারদিকে ডেঙ্গুর কথা শুনি, এতে ভয় লাগছে।
এমন আতঙ্ক শুধু ইমরানের মনে নয়। রাজধানীতে যারাই জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের মধ্যেই ডেঙ্গু আতঙ্ক বিরাজ করছে। এজন্য সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং চিকিৎসকের ব্যক্তিগত চেম্বারেও ভীর বেড়েছে।
একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিক জাকির হোসেন বলেন, আজ শনিবার সকালে দেখি আমার মেয়ের এক চোখের কোনা লাল হয়ে আছে। আমার তো ভয় লেগে যায়, শুনেছি ডেঙ্গুর প্রভাবেও চোখ এমন লাল হয়। তবে মেয়ের জ্বর ছিল না। তবুও ভয় যায় না। পরে মেয়ে বলল- চোখ চুলকানোর পর এমন হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে- ১৯ জুলাই সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ২৩৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। শুধু এই জুলাই মাসের ২০ দিনে ২ হাজার ১৯০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ২৩৩ জনের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫৬ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ২৭ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ২২ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ২১ জন, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১২ জন, বারডেম হাসপাতালে ২০ জন, বিজিবি হাসপাতালে ১ জন ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এছাড়া ইবনে সিনা হাসপাতালে ৩ জন, স্কয়ার হাসপাতালে ৯ জন, সেন্ট্রাল হাসপাতালে ১৯ জন, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ১৯ জন, খিদমা হাসপাতালে ২ জন, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২ জন, সালাউদ্দিন হাসপাতালে ৭ জন, পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯ জন ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।
তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে আজ ২০ জুলাই পর্যন্ত ৬ হাজার ৪৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্তমানে ভর্তি আছেন ১ হাজার ৪৭৪ জন, ছাড়পত্র পেয়েছেন ৪ হাজার ৫৬৬ জন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ও চিকিৎসক আয়েশা আক্তার।
কলাবাগানে প্রাইভেট প্রাকটিস করেন এমবিবিএস চিকিৎসক বশীর আহমেদ। তিনি বলেন, আমার কাছে জ্বর নিয়ে আসা রোগীদের বেশিভাগই সর্দিজ্বর। এটা বলার পরও তাদের মধ্যে ভয় থাকে। রোগীরা খুব অনুরোধ করে বলেন, ‘স্যার দিয়ে দেন ডেঙ্গু টেস্ট। দেখি, বেশ ভয় লাগে।’ রোগীদের এমন অনুরোধের পর আর কী করব, দিয়ে দিই।
বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক আবদুর রহমান বলেন, আসলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। জ্বরে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি।
আরএম/ এফসি