
২০১২ সালের পর ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের হাত ধরে উত্থান ঘটনে গ্রেপ্তারকৃত মহানগর দক্ষিন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদের । তার হাতে আসে ঢাকার এক অংশের কর্তৃত্ব।
পরবর্তীতে রিয়াজ মিল্কি ও তারেক হত্যার পর পুরো এলাকা নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন খালেদ। শুরু হয় মতিঝিল ক্লাবপাড়ার জুয়া, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, পরিবহন চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে ভবন দখল ও নিজের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার জন্য খালেদের ক্যাডার বাহিনীর ত্রাসের রাজত্ব।
• রিয়াজ মিল্কি ও তারেক হত্যার পর পুরো এলাকা নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন খালেদ •
সরকারী বেসরকারী গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের তথ্য মতে, যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূইয়ার বিরুদ্ধে আনত অভিযোগ-
• রাজধানীর মতিঝিল, ফকিরাপুল এলাকায় কমপক্ষে ২০টি ক্লাব নিজের নিয়ন্ত্রণধীন রাখার । এর মধ্যে ১৬টি ক্লাব তার নিজেস্ব লোকবল দ্বারা এবং ফকিরাপুল ইয়াং ম্যানস নামের ক্লাবটি সরাসরি তিনি পরিচালনা করেন। প্রতিটি ক্লাব থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে এক লাখ টাকা নেন তিনি। এসব ক্লাবে রাত ১০টা থেকে ভোর পর্যন্ত ক্যাসিনো বসে।
• খিলগাঁও-শাহজাহানপুর রুটে চলাচলকারী লেগুনা ও গণপরিবহনগুলো থেকে নিয়মিত চাঁদা দিতে হয় খালেদকে। প্রতি কোরবানির ঈদে শাহজাহানপুর কলোনি মাঠ, মেরাদিয়া ও কমলাপুর পশুর হাট নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। খিলগাঁও রেল ক্রসিংয়ে প্রতিদিন রাতে মাছের একটি হাট বসান এ নেতা। সেখান থেকে মাসে কমপক্ষে এক কোটি টাকা আদায় করা হয়। একইভাবে খিলগাঁও কাঁচাবাজারের সভাপতির পদটিও দীর্ঘদিন তিনি ধরে খালেদের কুক্ষিগত। শাহজাহানপুরে রেলওয়ের জমি দখল করে দোকান ও ক্লাব নির্মাণ করেছেন।
এছাড়া এসকল গোয়েন্দা প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে আরো জানা যায়,৭টি সংস্থার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতেন খালেদ। শুধু তাই নয়, মতিঝিল, শাহজাহানপুর, রামপুরা, সবুজবাগ, খিলগাঁও, মুগদা এলাকার পুরো নিয়ন্ত্রণও ছিল তার হাতেই। এসব এলাকায় থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যথাক্রমে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), রেলভবন, ক্রীড়া পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, যুব ভবন, কৃষি ভবন, ওয়াসার ফকিরাপুল জোনসহ বেশিরভাগ সংস্থার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতেন এ নেতা। ভূঁইয়া অ্যান্ড ভূঁইয়া নামের প্রতিষ্ঠানটি দিয়ে তিনি তার সকল অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করতেন বলেও জানা যায়।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনের তথানুযায়ী অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেফতারকৃত খালেদের সহযোগিদের খোঁজা হচ্ছে। এরইমধ্যে যুবলীগ দক্ষিনের শীর্ষ নেতা আত্মগোপনে চলে গেছে। র্যাবসহ আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। সম্ভাব্য বিশেষ স্থানে একের পর এক অভিযান চালাচ্ছে র্যাব।
প্রসঙ্গত, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেফতার করেছে র্যাব। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে প্রথমে তার গুলশান-২, ৫৯ নম্বর রোডের ৪ নম্বর বাসায় আটক করা হয়। সেখানে টানা প্রায় ৩ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গ্রেফতার দেখায় র্যাব। বিকাল ৪টা থেকেই তার বাড়িটি ঘিরে রাখেন র্যাব সদস্যরা। পাঁচটা বাজার পরপরই এই যুবলীগ নেতাকে গ্রেফতার দেখায় র্যাব। পরে রাত ৮টার দিকে কালো গ্লাসের একটি মাইক্রোবাসে করে তাকে র্যাব সদর দফতরে নেওয়া হয়। তাকে বাড়ি থেকে বের করার ১০ থেকে ১৫ মিনিট আগে, অভিযানে থাকা র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাসাটি থেকে বের হন।
বাসাটির ম্যানেজার আরিফ জানান, খালেদ মাহমুদ ৬ তলার ভবনটির ৩-এ/১ ফ্ল্যাটে স্ত্রী ও ২ ছেলে অর্ক ও অর্পনসহ থাকতেন। খালেদ সাহেবের বাসার ভেতরে ওয়াল আলমারি থেকে ১০ লাখ ৩৪ হাজার নগদ টাকা, ২ প্যাকেটে ৪০০ পিস ইয়াবা , অনুমানিক ৪ লাখ টাকার সমান ডলার, আর ৩ টি অস্ত্র উদ্ধার করে। ৩ অস্ত্রের মধ্যে ২ টির কাগজ দেখাতে পেরেছে খালেদ মাহমুদ। এই প্রত্যক্ষদর্শী আরো বলেন, আটকের সময় তার পরনে স্টেপ টি শার্ট, জিন্স প্যান্ট ছিল।
র্যাব লিগ্যাল ও মিডিয়া উইং কমান্ডার জানান, আটকের সময় তার কাছ থেকে একটি অবৈধ অস্ত্র, গুলি ও মাদক (ইয়াবা) উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গের কারণে আরো দু’টি অস্ত্র জব্দ করে র্যাব।
এসকে