• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ১৫, ২০২০, ০৬:৪৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ১৫, ২০২০, ০৭:২৩ পিএম

ইসলাম প্রচারে বঙ্গবন্ধুর অবদান

ইসলাম প্রচারে বঙ্গবন্ধুর অবদান

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, একটি নতুন মানচিত্রের অমর রূপকার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন উদার চেতনার অধিকারী একজন খাঁটি মুসলমান।

বঙ্গবন্ধুর পূর্ব পুরুষ শেখ আউয়াল ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে হজরত বায়জিদ বোস্তামী (রা.) এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে তার সঙ্গে ভারতীয় উপমহাদেশে আসেন প্রথম। পরবর্তীতে তারই উত্তরপুরুষেরা বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় বসতি স্থাপন করেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হচ্ছেন ইসলাম প্রচারক শেখ আউয়ালের সপ্তম বংশধর। বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমান ছিলেন একজন সুফি চরিত্রের অধিকারী অন্যতম ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও ইসলামের প্রচার ও প্রসারের অন্যতম একজন ধারক।

বঙ্গবন্ধু কখনো ইসলামকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেননি। বাংলাদেশকে সব ধর্মের সব মানুষের জন্য শান্তির দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি ছিলেন সদা সচেষ্ট। তিনি তার সংক্ষিপ্ত শাসনামলে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে যে অসামান্য অবদান রেখেছেন তা মুসলিম বিশ্বে বিরল। 

ইসলামের প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যুগান্তকারী অবদানের কথা বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

ইসলামের প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যুগান্তকারী অবদানের কথা বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।


তিনি যেমন একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের মহান স্থপতি, তেমনি বাংলাদেশে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ইসলামের প্রচার-প্রসারের স্থপতিও তিনি।

ইসলাম প্রচার-প্রসারে বঙ্গবন্ধুর অবদানসমূহের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিচে উপস্থাপন করা হলো:

(১) ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা: স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু বাংলাদশের রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব নিয়ে এক দিকে যেমন যুদ্ধ-বিদ্ধস্ত দেশকে পুনর্গঠনে মনোযোগ দিলেন অন্য দিকে ইসলাম প্রচার, প্রসার এবং গবেষণার জন্য সরকারিভাবে ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা করেন। বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন এখন সরকারি অর্থে পরিচালিত অন্যতম একটি বৃহৎ ইসলামিক সংস্থা। ১৯৭৫ সালের ২৮ মার্চ প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রকাশনা বর্তমানে আন্তর্জাতিক ভাবেও স্বীকৃতি পাচ্ছে।

(২) মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড পুনর্গঠন: ইসলামি আকিদাভিত্তিক জীবন গঠন ও দ্বীনি শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড পুনর্গঠন করেন। বঙ্গবন্ধুই প্রথম মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডকে স্বায়ত্তশাসন দিয়ে এর নাম রাখেন ‘বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড।’ জাগতিক শিক্ষার সঙ্গে ধর্মীয় শিক্ষার সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে ধর্মীয় শিক্ষার আধুনিকীকরণের পাশাপাশি মাদরাসা শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চতর শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত করা এবং মাদরাসা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সরকারি চাকরির নিশ্চয়তা ও যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত করেছিলেন।

(৩) টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার স্থান বরাদ্দ: বিশ্ব ইজতেমা শান্তিপূর্ণভাবে পালন  করার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বপ্রথম স্থায়ী বন্দোবস্ত হিসেবে তুরাগ নদীর তীরবর্তী জায়গাটি প্রদান করেন। সে হতে অদ্যাবধি তাবলিগ জামাত ওই স্থানে বিশ্ব ইজতেমা পালন করে আসছে। টঙ্গীতে বঙ্গবন্ধু এই স্থান বরাদ্দের বদৌলতেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের লক্ষ লক্ষ  মুসলিম এখানে সমবেত হয়ে ইসলামের  দ্বিতীয় বৃহৎ সম্মেলন করে যাচ্ছেন। এছাড়া তাবলিগ জামাতের কেন্দ্র নামে পরিচিত কাকরাইল মসজিদের সম্প্রসারণের দরকার হলে তখন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধু নির্দ্বিধায় কাকরাইল মসজিদকে সরকারি জায়গা বরাদ্দ দিয়ে এর সম্প্রসারণের ব্যবস্থা করে দেন।

(৪) হজ পালনের জন্য সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা: পাকিস্তান আমলে হজযাত্রীদের জন্য কোনো সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা ছিল না। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে প্রথম হজযাত্রীদের জন্য সরকারি তহবিল থেকে অনুদানের ব্যবস্থা করেন। ফলে হজ পালনকারীদের আর্থিক সাশ্রয় হয়। বঙ্গবন্ধু শাহাদাত লাভের পর যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা কথায় কথায় নিজেদের ইসলামের সেবক দাবি করলেও তাদের আমলে সরকারি অনুদান বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।

(৫) সীরাত মজলিশ প্রতিষ্ঠা: বঙ্গবন্ধুর দিকনির্দেশনা ও পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকায় সীরাত মজলিশ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়। সীরাত মজলিশ ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে রবিউল আউয়াল মাসে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম বৃহত্তর আঙ্গিকে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) মাহফিল উদযাপনের কর্মসূচি গ্রহণ করে। সরকারপ্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধু বায়তুল মোকাররম মসজিদ চত্বরে মাহফিলের শুভ উদ্বোধন করেছিলেন।

(৬) বেতার-টেলিভিশনে ধর্মীয় অনুষ্ঠান প্রচার: বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে তারই নির্দেশে সর্বপ্রথম বেতার ও টেলিভিশনে গুরুত্বের সঙ্গে পবিত্র কোরআন ও তার তাফসির এবং অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান প্রচার করার সুব্যবস্থা করেন।

(৭) ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.), শবেকদর, শবেবরাত উপলক্ষ্যে সরকারি ছুটি ঘোষণা: ধর্মীয় দিবসসমূহ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধুই প্রথম বাংলাদেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন এবং উল্লিখিত দিবসসমূহের পবিত্রতা রক্ষার্থে সিনেমা হল বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেন।

(৮) মদ জুয়া নিষিদ্ধকরণ ও শাস্তির বিধান: ইসলামে মদ জুয়া সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। ইসলামের এই বিধানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকারীভাবে আইন করে এসব অপকর্ম নিষিদ্ধ করেছিলেন এবং শাস্তির বিধান জারি করেছিলেন।

(৯) রাশিয়াতে প্রথম তাবলীগ জামাত প্রেরণের ব্যবস্থা: রাশিয়া তথা সোভিয়েত ইউনিয়নে বিদেশ থেকে কেউ গিয়ে ইসলাম প্রচারের সুযোগ পেত না। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়ার সুসম্পর্কের সুযোগ নিয়ে ইসলাম প্রচারের জন্য সর্বপ্রথম তাবলিগ জামাতের একটি দল রাশিয়াতে প্রেরণের ব্যবস্থা করেন।

এছাড়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ১৯৭৪ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত ইসলামি সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) অধিবেশনে যোগদান করেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে এই সংস্থার অন্তর্ভুক্ত করার মধ্য দিয়েই বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর মাঝে বাংলাদেশের স্থান করে দেন।

ইসলামের প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যুগান্তকারী অবদানের কথা বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

এম