বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘শিশু হও, শিশুর মতো হও। শিশুর মতো হাসতে শেখো। দুনিয়ার ভালোবাসা পাবে।’
বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন সমাজ, মানুষ এবং রাজনীতির মধ্যে যত বিভেদই তৈরি হোক না কেন, প্রতিটি শিশুকে সাম্য ও সমতার মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠতে হবে। শিশুদের প্রাণে জাগাতে হবে অসাম্প্রদায়িক চেতনা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বাস করতেন, আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। কর্মব্যস্ত জীবনে মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি পেতে শিশুদের সান্নিধ্য পছন্দ করতেন তিনি। বিভিন্ন সময়ে কচি-কাঁচার মেলা, খেলাঘরসহ অন্যান্য সংগঠনের অনুষ্ঠান ও সমাবেশে শিশুদের উপস্থাপনা উপভোগ করতেন বঙ্গবন্ধু। তিনি খুব আন্তরিকভাবে শিশুদের সঙ্গে মিশে যেতেন তাই শিশুরাও তাঁকে খুব আপন করে নিতো সহজেই।
শিশুদেরই কল্যাণে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালের ২২ জুন ‘জাতীয় শিশু আইন’ জারি করেন। এই আইনের মাধ্যমে শিশুদের নাম ও জাতীয়তার অধিকারের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। শিশুদের প্রতি সব ধরনের অবহেলা, শোষণ, নিষ্ঠুরতা, নির্যাতন, খারাপ কাজে লাগানো ইত্যাদি থেকে নিরাপত্তার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।
শিশুদের অগ্রগতির বিশেষ বিধান প্রণয়নের ওপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে সংবিধানের ২৮(৪) অনুচ্ছেদে। রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে শিশুদের জন্য অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষাসহ মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা, সুযোগের সমতা, অধিকার ও কর্তব্যের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। শিশুবান্ধব দেশের কথা ভেবেই ১৯৭৩ সালে ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করা হয়।
শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ছিল অপরিসীম দরদ। এখানে একটা ঘটনার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। ১৯৭২ সালের শেষের দিকের কথা। বঙ্গবন্ধু প্রতিদিন সকালে হাঁটতে বের হতেন, সেদিনও তেমন বের হয়েছিলেন, সঙ্গে বড় ছেলে শেখ কামাল। হঠাৎ বঙ্গবন্ধুর চোখে পড়লো একটি শিশু। দেখলেন, কাঁধে বইয়ের ব্যাগ নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে ছেলেটি। বঙ্গবন্ধু ছেলেটিকে কাছে ডাকলেন। জানতে চাইলেন, কেন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে সে? ছেলেটি বলেছিল, তার পায়ে কী যেন ফুটছে, এজন্য ব্যথা করছে। বঙ্গবন্ধু নিজের হাতে ছেলেটির পায়ের জুতা খুলে দেখেন তার ভেতর বের হয়ে আছে লোহার সুঁচালো মাথা, যার খোঁচায় রক্তক্ষরণ হচ্ছিল পা দিয়ে। বঙ্গবন্ধু সঙ্গে সঙ্গেই শিশুটির চিকিৎসার জন্য তাঁর দেহরক্ষী পুলিশকে নির্দেশ দিলেন। তার হাতে কিছু টাকাও দিলেন। পরম মমতায় আদর করে বিদায় দিলেন ছেলেটিকে।
বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন কাজে যখন গ্রামেগঞ্জে যেতেন, চলার পথে শিশুদের দেখলে গাড়ি থামিয়ে গল্প করতেন তাদের সঙ্গে। দুস্থ ও গরিব শিশুদের দেখলে কাছে টানতেন। কখনো গাড়িতে উঠিয়ে অফিসে বা নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতেন। পোশাক এবং নানা উপহার দিতেন। শিশুদের জন্য জাতির পিতার দুয়ার ছিল খোলা। তিনি মনে করতেন, শিশুদের প্রাণে জাগাতে হবে অসাম্প্রদায়িক চেতনা। সকল প্রকার অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারকে দূরে ঠেলে এগিয়ে চলার যে শিক্ষা শিশুর মানসিক বিকাশে সহায়ক, সেই শিক্ষাই শিশুর অন্তরে ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করতেন বঙ্গবন্ধু।