রমজান মাসে মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের আশায় রোজা রাখেন ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। দিবাগত রাতে সাহরি খেয়ে রোজা শুরু করেন। সারাদিন রোজা রেখে সন্ধ্যায় মাগরিব আযানের সময় ইফতার করেন।
সুতরাং প্রতিদিনের খাদ্যাভাসে হঠাৎ পরিবর্তন আসে। যা অনেকের শরীরে বিরূপ প্রভাব ফেলে। অনেকে আবার ইফতারে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ায় অসুস্থ বোধ করেন। এর ফলে সবগুলো রোজা রাখার আগেই অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকে। বেশি খেয়ে ফেলা বা অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ায় নামাজ ও প্রার্থনাতেও মনোযোগী হতে পারেন না। এমন অবস্থায় রমজান মাসে খাবার নিয়ে বিশেষ সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন স্বাস্থ্যবিদরা।
পেটের সমস্যা, মাথাব্যথা, দুর্বলতা, আলসার বা অ্যাসিডিটিসহ হজমের সমস্যাও বেড়ে যেতে পারে। ওজন নিয়েও বিপাকে পড়েন অনেকে। কারো ওজন বেড়ে যায়, কারো বা খেতে না পেরে ওজন কমে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।
এর অন্যতম কারণ হচ্ছে ইফতারের ভাজা বা অস্বাস্থ্যকর খাবারগুলো। পোড়া তেলে ভাজা বাইরের ইফতার একেবারেই পরিহার করার পরামর্শ পুষ্টিবিদদের। ঘরে এই খাবারগুলো বানিয়ে নিতে পারেন। তবে এটি প্রতিদিন না খাওয়াই ভালো বলে জানান পুষ্টিবিদরা।
পেঁয়াজি, বেগুনি, কাবাব, হালিম, মাংস-জাতীয় খাবার বাইরে থেকে এনে না খাওয়াই ভালো। হজমে সমস্যার প্রধান কারণ এটি। সেক্ষেত্রে ফলমূল খাওয়ার পরিমান বাড়িয়ে দিতে পারেন। তবে খালি পেটে কিংবা রাতে ফল খাওয়ায় অনেকের অ্যাসিডিটির সমস্যা হতে পারে। তাদের জন্য পেট ঠাণ্ডা রাখে এমন খাবার যেমন দই, চিড়া খাওয়ার পরামর্শ থাকছে।
রোজা শেষে শরীর, মস্তিষ্ক ও স্নায়ুকোষ তাৎক্ষণিক শক্তির জোগানে স্বাস্থ্যকর, পুষ্টিকর ও সুষম খাবার রাখতে হবে ইফতার ও সাহরির টেবিলে। বিভিন্ন ফলের জুস খেয়ে নিতে পারেন। তবে এতে চিনির পরিমাণ কম থাকাই শ্রেয়। সম্ভব হলে চিনি ছাড়াই জুস বানিয়ে নিন। এতে স্বাদের তারতম্য হলেও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি।
ইফতারের সময় ভারী খাবার না খাওয়াই ভালো। এতে তারাবীর নামাজে প্রভাব পড়তে পারে। সারাদিন খালি পেটে থাকার পর শরীর যখন খাবার পায় তখন তা শক্তি সঞ্চালন করে। এতে শরীরে সাময়িক সময়ের জন্য় স্থির ভাব অনুভব হতে পারে। ভারী খাবার খেলে তা হজমেও সময় নেয়। এতে নামাজে ওঠা বসায় সমস্যা হতে পারে।
অনেকেই ইফতারের পর সাহরির আগ পর্যন্ত আর কিছুই খান না। এমন অভ্যাস থাকলে ইফতারে ভারি খাবার খেয়ে নিতে পারেন। তবে অতিরিক্ত পরিমানে খাওয়া ঠিক হবে না।
সাহরিতেও খাবারে সচেতন হতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। তবে পেট ভরে না খাওয়াই ভালো। এতে ঘুমের সমস্যা হয়। সারা দিন খেতে পারবেন না বলে ইচ্ছেমতো খাবেন না। পেটের এক-চতুর্থাংশ খালি রাখবেন। এছাড়া মাংস কম ও মাছ বেশি খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা। অনেকে তো ভাতের সঙ্গে দুধ, কলা দিয়েও সাহরির খাবার সেরে নেন।
ইফতারে খেজুর বা খোরমা দিয়েই শুরু করেন রোজাদাররা। এটা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালে। খেজুরো শর্করা, চিনি, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, কপার, সালফার, ম্যাঙ্গানিজ, সিলিকন, ক্লোরিন ফাইবার থাকে। যা সারা দিন রোজা রাখার পর খুবই দরকারি। সাহরিতেও খেজুর খেতে পারেন।
ইফতার খোলার পর একেবারে পানি খাবেন না। এতে অস্বস্থিবোধ হতে পারে। ঘুমাতে যাওয়ার আগে একটু একটু করে কিছুক্ষণ পরপর পানি খাবেন। মনে রাখবেন, গরমে শরীরে পানির ঘাটতি হতে দেওয়া যাবে না। পর্যাপ্ত পানি খেলেই আপনি সুস্থ থাকবেন। চাইলে ডাবের পানিও রাখতে পারেন ইফতারে।
ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ ও কিডনি রোগীরাও রোজা রাখতে পারবেন। তবে তাদের ওষুধ সেবনে যেন কোনো সমস্যা না হয় সেই দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে রোজা রেখে ওষুধ খাওয়ার সময়টা ঠিক করে নিন।
পরিবারের ছোটরা শখ করে রোজা রাখে। অনেক পরিবারে ছোটদের নিয়ম করেই রোজা পালনের উৎসাহ দেন। সেক্ষেত্রে ছোটদের স্বাস্থ্যের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। সাহরিতে তাদের জন্য পুষ্টিকর এবং ইফতারে স্বাস্থ্যকর খাবারের পাশাপাশি তাদের পছন্দের খাবারগুলোর ব্যবস্থা রাখুন।