প্রাকৃতিক গ্যাস আমাদের অমূল্য সম্পদ। বাসা বাড়ির রান্নার জন্য, শিল্প কল কারখানার কাঁচামাল, যানবাহনের জ্বালানি হিসাবে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এই অমূল্য সম্পদ কিন্তু অফুরন্ত নয়। সময়ে সময়ে গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। এক সময় প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ সম্পূর্ণ ফুরিয়ে যাবে। প্রতি মাসে গ্যাসের বিল পরিশোধ করলেও চুলায় রান্না চড়ানোর গ্যাসও পাওয়া যায় না অনেক সময়। এ বাস্তবতায় প্রাকৃতিক এ জ্বালানির বিকল্প নিয়ে চিন্তা-ভাবনা কিন্তু সবারই আছে। বাসা বাড়ির গ্যাস সংকট হলে রান্নার কাজ চালিয়ে যেতে বিকল্প অন্য উপায়গুলো সম্পর্কে জানাব আজকের আয়োজনে।
সিলিন্ডার গ্যাস
আমাদের দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি করে থাকে। আবার পাড়া মহল্লায় কিছু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রয়েছে যারা বাসা বাড়িতে সিলিন্ডারে গ্যাস বিক্রি করে। এক্ষেত্রে সিলিন্ডারের জন্য জামানত হিসেবে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা দিতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠান এলপিজিএল এর ১২ কেজি সিলিন্ডার গ্যাসের দাম ৯০৬ টাকা। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের একটি ১২ কেজি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম পরবে ১২৫০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে।
ইন্ডাকশন/ম্যাগনেট/ইনফ্রারেড চুলা
এই আধুনিক চুলাগুলো বৈদ্যুতিক চুম্বক বা ইনফ্রারেড শক্তিকে কাজে লাগিয়ে রান্নার পাত্রকে দ্রুত গরম করে। ইন্ডাকশন চুলায় শুধুমাত্র চুম্বক আকর্ষণ করে এমন ধাতুর পাত্র ব্যবহার করতে হয়। স্টেইনলেস, কাঁচ, কাস্ট আয়রন, কপার ইত্যাদির তৈরি পাত্র এই চুলায় ব্যবহার করা যাবে না। প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি মাসে ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ১২০০ টাকা বিদ্যুৎ বিল আসবে এই চুলা ব্যবহারে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তৈরি বৈদ্যুতিক চুলা বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। দাম ২৫০০ থেকে ৬০০০ টাকা।
রাইস, কারি কুকার
রাইস, কারি কুকারকে ঠিক চুলা বলা যায় না। এগুলো হাড়ি ও চুলার সংমিশ্রণ। রাইস, কারি কুকার বৈদ্যুতিক চুলা তবে চুম্বকের জায়গায় কয়েল ব্যবহার করা হয়। এই চুলার সঙ্গে নির্দেশিকা দেওয়া থাকে, যা দেখে খুব সহজেই এর ব্যবহার জেনে নেওয়া যায়। বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের রাইস ও কারি কুকার পাবেন ১০০০ থেকে ৫০০০ টাকার মধ্যে।
অভেন
মাইক্রো অভেনেও কিন্তু রান্না করা যায়। যদিও অনেকে বলে মাইক্রোওয়েভ অভেন স্বাস্থের জন্য নিরাপদ নয়। সে ক্ষেত্রে ইলেক্ট্রিক অভেন ব্যবহার করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন একেবারে না পারতে অভেন ব্যবহার করবেন। তা না হলে মাস শেষে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে ঋণ নেওয়া লাগতে পারে। অভেন এ রান্নার জন্য বিভিন্ন অপশন দেওয়া থাকে। সেগুলো একটু জেনে নিয়ে আপনার বিপদের সময়ে রান্নার কাজটি সেরে নিন। ৮০০০ থেকে ২৬০০০ টাকার মধ্যে আপনার সাধ্যমতো অভেন কিনতে পারেন।
কেরোসিন/ গ্যাস স্টোভ
সিংগাড়া পুরি চায়ের দোকানে এখনো গ্যাস স্টোভের ব্যবহার হয়। দামেও সস্তা। গ্যাস স্টোভ বললেও আগুন জ্বলে কেরোসিন আর বাতাসের সংমিশ্রণে। ১ লিটার কেরসিন তেল ভরে নিলে বেশ করে রান্না করা যায়। বিপদের সময় স্টোর রুম থেকে বের করে নিরাপদ জায়গায় রেখে চালু করে নিন। রান্না শেষে ভালো করে নিভিয়ে আবার স্টোর রুমে রেখে দিন।
সাথী চুলা
অনেকেই এই নামটির সঙ্গে পরিচিত নয়। হ্যা, সাথী চুলা বলতে গ্রাম বাংলার বহুল ব্যবহৃত মাটির চুলার কথা বলছি। তবে এটি সনাতনী মাটির চুলা নয়। সাথী চুলা বিশেষ নকশায় তৈরি করা মাটির চুলা যেখানে আগুনের তাপের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হয় এবং ধোঁয়া বিশেষভাবে স্থাপন করা নল দিয়ে বের হয়ে যায়। বাড়ির ছাদে বা উন্মুক্ত কোনও জায়গায় স্থাপন করে নিন। বিপদের বন্ধু হিসাবে সাথী চুলায় রান্না করতে করতে হারিয়ে যান গ্রাম বাংলার চিরায়ত অতি সাধারণ জীবনযাত্রায়। শহুরে জীবন থেকে ক্ষনিকের জন্য ফুরসতও পাবেন।
হোটেল রেস্তোরা
হাতের কাছে গ্যাসের চুলার কোন বিকল্প পাওয়া গেল না। কি আর করার, অগত্যা নির্ভরযোগ্য কোনও বাংলা হোটেল থেকে খাবার এনে খেয়ে নিতে পারেন। হোটেলের খাবার খেলে স্বাদেরও পরিবর্তন আসবে।
ক্যাটারিং সার্ভিস
বর্তমানে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ে অনেকে রান্না করা খাবার ফরমায়েশ অনুযায়ী সরবরাহ করে থাকে। এমনকি ফেসবুক পেজ খুলেও অনেকে ক্যাটারিং ব্যবসা করছেন। গ্যাস সরবরাহ না থাকলে ঘরের খাবারের চাহিদা মেটাতে ক্যাটারিং সার্ভিস আরেকটি উপায় হতে পারে।
রান্না থেকে জাতীয় অর্থনীতির সব ক্ষেত্রে গ্যাসের প্রয়োজন অপরিহার্য। গ্যাস ব্যবহারে এবং অপচয় রোধ করতে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। আর গ্যাসের অভাবে টেবিলে সময়মতো খাবার না পাওয়ার বিড়ম্বনা এড়াতে উপরে আলোচনা করা বিকল্প উপায়গুলো প্রস্তুত রাখতে পারেন।