স্মার্ট টিভি হওয়ায় ইন্টারনেট এখন হাতের নাগালে। টিভিতে ইন্টারনেট সংযোগ থাকায় ইচ্ছেমতো যে কোনও কিছু দেখা যায়। নারীরা এখন কাজের ফাঁকে ঘরে ভারতীয় বাংলা নাটকগুলো নিয়ে বসে থাকেন না। তারা ইউটিউব ঘেটে নানা স্বাদের রকমারি রান্নার অনুষ্ঠানও দেখছেন।
সম্প্রতি রকমারি রান্নার আয়োজন নিয়ে বেশ সাড়া ফেলেছে পুষ্পরানী সরকার। বয়স তার ৮২ বছর। থাকেন ভারতের বীরভূমির ইলামবাজার বনভিলাতে। নিজের বাগানে টাটকা সবজি ও পুকুরের টাটকা মাছ দিয়ে মজার সব রান্না করেন। তা ভিডিও করে ইউটিউবে আপলোড করে তার নাতি সুদীপ সরকার। সেই রান্নার ভিডিও দেখতে তার ইউটিউব চ্যানেলে ভিড় করেন দেশ-বিদেশের বহু মানুষ।
ইউটিউব চ্যানেলের নাম ‘ভিলফুড’। এর ফলোয়ার সংখ্যা ১০ লাখ ৫৪ হাজার। যেকোনও রান্নার ভিডিও আপলোড হলে তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভিউয়ার সংখ্যা হয় প্রায় এক লাখ। ২০২০ সালে এই চ্যানেলকে ‘গোল্ড প্লে’ সম্মান দিয়েছে ইউটিউব। এই সুবাদে প্রতিবছর এই চ্যানেল থেকে পুষ্পরানী সরকারের পরিবার আয় করছেন ভারতীয় মূল্যে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা।
ছোট-বড় সবাই পুষ্পরানীর এই ইউটিউব চ্যানেলের বেশ ভক্ত। বাঙালিয়ানা রান্নার তরকা দেখিয়েছে তার রান্নায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তার রান্নার ভক্তরা রয়েছেন। বাংলাদেশ, চীন, আফ্রিকা, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র কোথায় নেই তার ভক্তরা।
বাংলাদেশে তার রান্নার ভক্ত এক গৃহিনী বলেন, "আগের দিনে মা-দাদীকে দেখেছি এভাবে রান্না করতে। তাকে দেখলেই মা-দাদীর কথা মনে পড়ে। আমরা এখন রান্নায় এতোটা কষ্ট করি না। কিন্তু রান্নায় স্বাদ বাড়াতে পাটায় বাটা মসলা আর টাটকা সবজি ও মাছের যে প্রয়োজন, তা পুষ্পরানীর রান্না দেখে মনে পড়ে।"
প্রথমে বাঙালির প্রিয় কুমড়ো ফুলের বড়ার রেসিপি দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করেন। এরপর একে একে গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় রান্নাগুলো নিয়ে একেকটি আয়োজন সাজিয়েছেন।
তার জনপ্রিয় রান্নাগুলোর মধ্য়ে কাঁচকলার কোপ্তা, নানা রকমের ইলিশ ভাপা, কচুর শাক, থানকুনি পাতার চচ্চড়ি, তেল কই, লাউয়ের ঘণ্টের রেসিপি এখন দেশের সীমানা ছাড়িয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে বিদেশে।
মুখরোচক খাবার রান্না শেষে নাতনি, নাত বউ, ছেলে বউকে নিয়ে তা খেতে বসেন পুষ্পরানী। তার খাওয়া দেখে তৃপ্ত হন দর্শকরাও। মাটির চুলায় হয় রান্না। খেতে বসেন খড়ের ছাউনির নিচেই। তার রান্নার কাজে সঙ্গ দেন তার ছেলে বউ। সাদাসিটে পোশাকে উপস্থাপন করেন নিজেদের। কিন্তু তার রান্না করা খাবারের স্বাদে জুড়ি নেই। বাংলার অতি সাধরণ রেসিপিতেই তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। জনপ্রিয়তা কোনও বয়স মানে না, তারই প্রমাণ দিয়েছেন পুষ্পরানী সরকার।