প্রেমটা এক বা দুই বছরের বেশি কখনোই টিকে না আমার। বলা যায়, আমিই রাখি না। দু’হাজার ১২ সালের শুরুর দিকে সায়েরা নামের টেনে পড়ুয়া এক মেয়ের সাথে আমার প্রেম হয়। আবেগী মেয়েটার সবকিছুই ভালো লাগতো। শুধু ভালো লাগতো না, কথায় কথায় সেভ করার তাগিদটা।
সরকারি নামকরণ এক শহীদ সড়কের গোলচত্বরে আমাকে দাঁড় করিয়ে হাতে গুঁজে দেয়, পাঁচশ টাকার একটি মুজিবমার্কা নোট। বললাম, ‘এটা কেনো?’
সায়েরা হুকুম দিয়েই জানান দিলো, ‘বিকালে দেখা করবা রামঠাকুর আশ্রমের ফুলবাগানটিতে।’ সাথে আরো বলে দিলো সে, ‘সেলুন থেকে মুখ পরিষ্কার করে আসবা।’
মুজিবমার্কা নোটটি বার কয়েক তাকে সাধলেও নেয়নি! অগত্যা রিকশাওয়ালাকে বললাম, ‘মামা যা।’
একটা বিয়ার খেয়ে, শহরের অমরবাবুর দোকান থেকে বাকি টাকার চকলেট নিলাম প্রেমিকার সে টাকায়। ঠাকুরের কৃপায় রামঠাকুর আশ্রমটিতে পুজোর ফুল সবসময় দারুণ ফোটে। আজও বাগানে অনেক ফুলের দেখা। সেভহীন চেহারায় সায়েরার হাতে পেকেটটি দিয়ে বললাম, ‘ভালোবাসার মানুষকে গিফট করলে সবার আগে ঠাকুরজি খুশি হয়। তাই এই চকলেটগুলো তোমার জন্য...’
চকলেটসহ পেকেটটি মাটিতে ফেলে সায়েরা দ্রুত পায়ে চলে যাওয়ার সময় উচ্চস্বরে বলেই দিলো, ‘তুমি আর আমার সাথে কখনোই যোগাযোগ করবা না।’
‘হাহাহা...’
মুহূর্তে রামঠাকুর আশ্রমের মূর্তিটাকে অসহায় শিশুর মতোই মনে হলো আমার! কারণ দেশের বহু মন্দিরে আমার প্রেম খাঁটি হলেও, সেবার-ই প্রথম সায়েরা চলে গেল কোনো এক পবিত্র স্থান থেকে। আর রামঠাকুর আশ্রমের মূর্তিটা তখনও তাকিয়ে ছিল— আমার হাসিমাখা মুখের দিকে।