বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বাংলাদেশ ও বাঙালিদের ইতিহাসের কি সমার্থক হিসেবে বিবেচনা করাটা কতটা সংগত, এ নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলেন তারা যদি বাংলাদেশের উত্থানের ইতিহাসের দিকে তাকান, তবে এর প্রকৃত সত্যটি পষ্ট হবে, আঙুল উঁচিয়ে বলা যায়। একটি অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারী রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মুখপাত্র হিসেবে বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ স্মরণকালের ঐতিহাসিক বৃহত্তম জনসভায় যে ভাষণ দেন, সেই ঐতিহাসিক ভাষণটি এখন প্রায় অনেকেরই মুখস্থ। সেদিনের তাঁর অসাধারণ ভাষণটি বাংলাদেশের জন্মের সঙ্গে, উত্থানের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। এখন প্রশ্ন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ দেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল কি? এ ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প ছিল না। সময় ও ঐতিহাসিক দাবির সঙ্গে একটি অবহেলিত ও নির্যাতিত জনপদের মানুষের আকাঙ্ক্ষার স্ফুরণ এ অমূল্য ভাষণটি। কোন পরিস্থিতিতে তিনি ভাষণটি দেন, এটা অজানা থাকলে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পাকিস্তান রাষ্ট্র, তার শাসকশ্রেণির চরিত্র এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিটি কখনোই পরিষ্কার হবে না।
একাত্তরের মার্চ বাঙালিদের জাতীয় জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস, এর কারণ ১ মার্চ থেকে পাকিস্তানের ইতিহাসের গতিপথটি খুব দ্রুত বদলে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে পাকিস্তানের জাতীয় সংসদের মোট ৩০০টি আসনের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তান (নারীদের জন্য ৭টি সংরক্ষিত আসন) ১৬৭টি আসন লাভ করেছিল ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান গঠিত হওয়ার পর থেকে।
এটা বিস্ময়কর হলেও সত্য, স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ সময় পর্যন্ত (২৩ বছর) কোনো সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। ১৯৭০-এর ডিসেম্বরে যে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, সেই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশে জাতীয় পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠা লাভ করেন যেখানে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার প্রতি জনগণের রায়ের প্রতিফলন দেখা যায়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর পাকিস্তানের সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র, জুলফিকার আলী ভুট্টোর পিপিপি, কাইয়ুম খানের মুসলিম লীগ প্রভৃতি চক্র গণতান্ত্রিক রীতিনীতির বাইরে গিয়ে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত শুরু করলেও বঙ্গবন্ধু গণতান্ত্রিক রাজনীতির রীতিনীতিতে অটল থাকেন। ৩ জানুয়ারি ১৯৭১, তিনি তাঁর দলের জনপ্রতিনিধিদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক জনসভায় ৬ দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র রচনা এবং জনগণের রায়ের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার শপথ পাঠ করান।
জেনারেল ইয়াহিয়া খান একটি আইনি ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার (এলএফও) প্রকাশ করেছিলেন যার অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এলএফও আদেশ দিয়েছিল যে একবার সংসদ গঠিত হওয়ার পরে পাকিস্তানের আদর্শের ভিত্তিতে পাকিস্তানের পক্ষে একটি সংবিধানের খসড় তৈরি করতে হবে, এর গঠনতন্ত্র প্রকৃতিকে স্বীকার করে। ১২০ দিনের মধ্যে পাকিস্তানের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। আওয়ামী লীগ তার ছয় দফা কর্মসূচিতে প্রচার চালিয়েছিল এবং ঘোষণা করেছিল যে এই সংবিধানটি আবারও এই প্রোগ্রামকে অন্তর্ভুক্ত করতে পুনর্লিখন করা হবে, যা পাকিস্তানের সব প্রদেশের সম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জাতীয় আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) নেতা মওলানা ভাসানীসহ অনেকেই প্রশ্ন করেছিলেন যে এলএফওর অধীনে এ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে কিনা।
অন্যদিকে শেখ মুজিব বিপ্লবী ছিলেন না; তিনি সাধারণত গণতান্ত্রিক মানদণ্ডে বিশ্বাসী ছিলেন এবং এই নির্বাচনগুলোই ছিল ক্ষমতা অর্জনের একমাত্র উপায়। নেতা ও রাজনৈতিক দল বাছাই করার সময় বাঙালিরা কোনো ত্রুটি করেনি। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলকে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে সরকার গঠনের জন্য আহ্বান জানানো হয়। তবে ২৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১ সালে ভুট্টো ঘোষণা করেছিলেন যে এলএফওর ১২০ দিনের সময়সীমা অবশ্যই প্রত্যাহার করতে হবে এবং ইয়াহিয়া খান যদি ঢাকায় বসার কথা ছিল যে জাতীয় সংসদ অধিবেশন সেই নির্ধারিত অধিবেশনটি স্থগিত করেন, তবে তিনি ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ শেখ মুজিবের ছয় দফা কর্মসূচি ও সংবিধান প্রণয়নসংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে রাজি ছিলেন। অপ্রত্যাশিতভাবে, ১৯৭১ সালের ১ মার্চ, অপ্রত্যাশিতভাবে খবর পাওয়া গেল যে ইয়াহিয়া একতরফাভাবে সংসদ অধিবেশন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ভুট্টোর সুরে সুর মেলান/নাচছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে ভুট্টো ছিলেন লিঞ্চপিন।
সংসদের অধিবেশন বাতিল করা ছিল সংযুক্ত পাকিস্তানের কফিনের শেষ পেরেক। ঢাকায় কর্মরত তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের সিভিল আমলা সৈয়দ শহীদ হোসেন এবং একাত্তরের ২৫-২৬, ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনার সাক্ষী, তাঁর স্মৃতিচারণায় লিখেছিলেন, ‘ওয়ার্ট ওয়াজ ওয়ান্স ইস্ট পাকিস্তান: “জাতীয় সংসদ অধিবেশন স্থগিতের সিদ্ধান্ত তীব্র নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া উৎসাহিত করেছে।” স্থগিতের বিরুদ্ধে প্রদেশে প্রকাশ্য বিক্ষোভের আহ্বান মুজিবের ঢাকা রেডিও স্টেশনে প্রচারিত হয়। নাগরিকরা, তবে আমরা নিজেদের আটকে রাখতে অক্ষম হয়েছি এবং ঘোষণার আধা ঘণ্টার মধ্যে রাস্তায় নেমে আকস্মিকভাবে এবং জোরালোভাবে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে... প্রায় ১৫০ জন লোক আমার অফিসে এসে নম্রভাবে অনুরোধ করেছিলেন যেন আমি অফিস বন্ধ করার আদেশ দিই কারণ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। আমি সেই অনুযায়ী আদেশ দিয়েছি।
৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ আয়োজিত পল্টন ময়দানে একটি বিশাল জনসমাবেশে বক্তব্য রাখেন, যেখানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলন করা হয়েছিল এবং প্রস্তাবিত স্বাধীন নতুন জাতির একটি ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। প্রস্তাবিত নতুন দেশের জাতীয় সংগীতও ঘোষিত হয়। বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন যে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তিনি রমনা রেসকোর্সে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জাতির কাছে ভবিষ্যতের কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা দেবেন।
৭ মার্চ ভাষণের আগে বঙ্গবন্ধু কী বলবেন তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা করে গুঞ্জনে বাতাস ভারী হয়। তিনি কি একতরফা স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে চলেছেন বা কোনো আপস চুক্তি ঘোষণা করবেন? ৭ মার্চ সকালে ছাত্রলীগের নেতারা তাকে প্রস্তাব দেন যেন তিনি একতরফাভাবে একটি স্বাধীন বাংলাদেশ ঘোষণা দেন। অর্থাৎ বাংলাদেশকে স্বাধীন ঘোষণা করেন এবং একতরফাভাবে সেনানিবাসের নিয়ন্ত্রণ নেন। পাকিস্তানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জোসেফ ফারল্যান্ড শেখ মুজিবের সঙ্গে দেখা করে তাকে স্পষ্টভাবে বলেন যে তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা দিলে আমেরিকা (যুক্তরাষ্ট্র) তাকে গ্রহণ করবে না বা তাতে সমর্থন দেবে না।
বঙ্গবন্ধু ধৈর্যসহকারে সবার কথা শোনেন কিন্তু খুব কম বলেন। তিনি তার বিকল্পগুলো কী এবং তার সম্ভাব্য পরিণতি বা ফলাফলগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত ছিলেন। মধ্যাহ্নের মধ্যেই বিশাল রাজনীতির রেসকোর্স লাখ লাখ লোককে ‘রাজনীতির কবি’ থেকে শুনতে আগ্রহী করে তুলেছিল, কারণ সংবামাধ্যমগুলো আগেই তাকে শিরোনাম করে সংবাদ প্রকাশ করে। সৈয়দ শহীদ হুসেন লিখেন, “আমি আমার ডায়েরিতে জানিয়েছিলাম যে শেখ মুজিব ৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে পারেন। বাস্তবে আমি বিবিসিতে শুনেছিলাম। ৭ মার্চ এক বিশাল সমাবেশে মুজিব বক্তব্য রাখেন কিন্তু স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। ইয়াহিয়া নিশ্চয়ই হতাশ হয়েছিলেন কারণ সম্ভবত তিনি আশা করেছিলেন যে মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দেবেন এবং এভাবেই পূর্ব পাকিস্তানি নেতাকে গ্রেপ্তারের ন্যায্যতা প্রদান করবেন।
দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ঘটনাস্থলে এসে মাত্র ১৮ মিনিটের একটি বক্তব্য দেন। এটি একটি ১৮ মিনিটের বিমোহিত মুহূর্ত ছিল। পাকিস্তাানি এবং পূর্ববঙ্গের মানুষেরা কেবল তাদের রেডিওতে আটকেই থাকেনি, পুরো বিশ্বেরও দম বন্ধ হয়ে গেছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশের কারণে রেডিও ও টেলিভিশন স্টেশনগুলো ঐতিহাসিক ভাষণ প্রচার থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হয়। এর প্রতিবাদে রেডিও এবং টেলিভিশন কেন্দ্রগুলোর কর্মীরা তাদের সম্প্রচার কেন্দ্রগুলো থেকে বেরিয়ে আসেন। ইতিহাসের সবচেয়ে অবিস্মরণীয় রাজনৈতিক বক্তৃতা হিসাবে এটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
বঙ্গবন্ধু বক্তব্য রাখার সময় ঢাকার গ্যারিসন নিরপেক্ষ বেসামরিক নাগরিকদের ওপর স্বাধীনতার ঘোষণার ঘটনায় হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বঙ্গবন্ধু প্রতীক্ষিত লাখ লাখ মানুষদের হতাশ করেননি, পরিবর্তে তাঁর দূরদৃষ্টি, জ্ঞানী ও রাষ্ট্রনীতিমূলক উপায়ে রাষ্ট্রনায়ক জাতীয়ভাবে যা বলার দরকার তা বলেন। “এই সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এই সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম,” এ বলে তিনি তাঁর বক্তব্য শেষ করেন। তিনি যদি সরাসরি ঘোষণা করতেন, এবং তিনি বিদেশি তথা বিশ্ব সমর্থন হারাতেন তবে তাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসাবে চিহ্নিত করা হত। স্বনামধন্য অথচ অদূরদর্শী অনেককে, এমনকি তাঁর দলের কোনো কোনো নেতাকেও বলতে শোনা গেছে, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন না কেন? এটা যদি তিনি করতেন, তবে এটা হতো বাঙালির জন্য চরম আত্মঘাতী। তিনি জনগণনন্দিত গণতান্ত্রিক নেতা থাকতেন না। তিনি শান্তিপূর্ণ উপায়ে আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের স্বাধিকার অর্জনের পথ খোলা রাখেন। ৭ মার্চের পরও তিনি ইয়াহিয়া, ভুট্টোর সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। তারা চেয়েছিল অস্ত্রের মাধ্যমে বাঙালিকে দমিয়ে দিতে, দাবিয়ে রাখতে। কিন্তু নিরস্ত্র বাঙালিকে সশস্ত্র পশুশক্তি নিশ্চিহ্ন করতে চাওয়ায় বিশ্বজনমত বাঙালির পাশে দাঁড়ায়।
বঙ্গবন্ধু তাদের দাবি পূরণ না হওয়া অবধি অসহযোগিতার নীতি ঘোষণা করেন, যার মধ্যে সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের (আওয়ামী লীগ) হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর, সামরিক আইন উত্তোলন, সেনাবাহিনীকে তার ব্যারাকে ফিরিয়ে দেওয়া এবং সেনাবাহিনী দ্বারা নিরীহ বেসামরিক মানুষদের হত্যার জন্য নিরপেক্ষ স্বাধীন তদন্ত পরিচালনা অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি জনগনকে কোনো শুল্ক না-দেওয়ার এবং সরকারকে পুরোপুরি অসহযোগিতা করার নির্দেশনা দেন। সমস্ত পরিবহন যানবাহন চলবে, ব্যাংকগুলো দুপুর ২টা অবধি খোলা থাকবে এবং সমস্ত বিল্ডিংগুলো কালো পতাকা উড়বে। বাস্তবে এটি বঙ্গবন্ধু ছিলেন, ইয়াহিয়া খান নয়, যিনি পূর্ববঙ্গের সিভিল প্রশাসন পরিচালনা করছিলেন। সমস্ত সংজ্ঞামতে, পূর্ব পাকিস্তানের বিলীন হয়েছিল এবং বিশ্ব একটি নতুন স্বাধীন জাতির ধীর উত্থানের সাক্ষী ছিল।
১৯৭১-এর ১৫ মার্চ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে ইয়াহিয়া ঢাকায় পৌঁছান। তবে অনেক দেরি হয়ে গেছে। চারদিকে মানুষ হত্যা করে গুম করা হচ্ছে। বাঙালি জনগণকে নির্মূল করতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে মুক্ত করে দেওয়া এই চক্রান্তের একটি অংশ ছিল। ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ জেনারেল আইয়ুব খান পাকিস্তানের পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের একটি বৃহত্তর ছাত্র বিদ্রোহের মুখে ক্ষমতা ত্যাগ করলে তিনি একটি ভাষণ দিয়েছিলেন, যাতে তিনি দাবি করেছিলেন যে তিনি পাকিস্তানের মৃত্যুর সভাপতিত্ব করতে পারবেন না। তিনি জেনারেল ইয়াহিয়াকে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন, যিনি ঠিক তা করেন কারণ এটি পাকিস্তানের ভাগ্য, ত্রুটিপূর্ণ দর্শনের ভিত্তিতে নির্মিত পাকিস্তানের পূর্বনির্ধারিত নিয়তি।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বাংলাদেশের ইতিহাসের সমার্থক হয়ে উঠেছে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের চেতনা বেঁচে থাক অনির্বাণের মতো, হ্যামিলিয়নের বাঁশিঅলার মতো। আর এভাবে একটি স্বাধীন দেশ, বাংলাদেশের উত্থান, জন্ম। আট কোটি বাঙালি সেই সময়ে তাদের অন্তরে যে আবেগ ও স্বপ্নের বীজ বপন করেছিল, এরই প্রকাশ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের শেষ বাক্যগুলো। মুক্তি ও স্বাধীনতাসংগ্রামের নতুন অধ্যায়ের সূচনা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, একজন স্বপ্নদ্রষ্টার উত্থান যার ধারাবাহিকতা বাংলাদেশের অভ্যুদয়। এটা কে অস্বীকার করবে?