চলমান বইমেলায় ছুটির দিন শুক্রবারে (১৬তম) ছিল লেখক-পাঠক-প্রকাশক, ক্রেতা-বিক্রেতার ও দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়।
ছুটির দিনকে ঘিরে কেউ বই কিনতে এসেছেন, কেউ এসেছেন আড্ডা দিতে। কেউ লেখকদের দেখতে এসেছেন। ছুটির দিনে অনেকেই পরিবার নিয়ে বইমেলায় এসেছেন। বাচ্চাদের কিনে দিচ্ছেন নানা ধরনের বই। মেলায় আগতদের মধ্যে আগের তুলনায় স্বাস্থ্যসচেতনতা বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
বিক্রেতার বলেছেন, অন্যদিনের তুলনায় আজকে বই বিক্রি বেড়েছে। কিন্তু সময়টা যদি বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮-৯টা পর্যন্ত করা যেত তাহলে অবশ্যই বেচাকেনা আরও ভালো হত। বইমেলার গুরুত্ব সকলের কাছে আরও বেড়ে যেত।
বেশিরভাগ প্রকাশনীর স্টল ম্যানেজাররাও সময় নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, মেলায় সময়টা বিকেল ৪টা-রাত ৮টা পর্যন্ত করা হলে আমাদের বিক্রি ভালো হত। বাংলা একাডেমির একক সিদ্ধান্তে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে প্রকাশকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
ভাষাচিত্র প্রকাশনীর স্টল ম্যানেজার মৃদৃল হাসান জানান, আসলে ছুটির দিনে বইমেলায় মানুষের সমাগমটা আগের চেয়ে বেড়েছে। মানুষ বই দেখছে, আগের চেয়ে তুলনামূলক একটু ভালো বিক্রি হচ্ছে। তবে আমি মনে করি মেলার সময়টা রাত ৮টা পর্যন্ত করা উচিত।
ছুটির দিনে বইমেলা কেমন সাড়া পাচ্ছেন জানতে চাইলে উৎস প্রকাশনীর স্টল ম্যানেজার কষ্ণ মজুমদার বলেন, “ছুটির দিন হিসেবে মানুষের আগ্রহটা অন্যদিনের চেয়ে বেশি। তবে বই বিক্রি আজ তেমন একটা বাড়েনি।
মাওলা ব্রাদার্সের স্টল ম্যানেজার মো. ত্বোহা জানান, বইমেলার প্রতি মানুষের আগ্রহ চিরদিনের। করোনার মধ্যেও মানুষ কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বইমেলায় আসছেন। সময় নিয়ে ক্রেতারাও আপত্তি জানাচ্ছেন। আমার কাছে মনে হচ্ছে সময়টা বাড়িয়ে দিলে ক্রেতা আসবেন। অনেক বইপ্রেমী জানেই না যে, বইমেলা সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বন্ধ হয়ে যায়। তারা এসে বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে যান।
বইমেলাকে জ্ঞানের মেলা উল্লেখ করে বেসরকারি মাদ্রাসা শিক্ষক মাহমুদুল হক জালীস জাগরণকে বলেন, “স্বাস্থ্যবিধি মেনে বইমেলা চালিয়ে নেওয়া উচিত। কারণ, এটা মানুষের মননের মেলা, জ্ঞানের মেলা। মানুষ বই দেখবে ও কিনবে। বই নিয়ে কথা বলবে। বই নিয়ে আড্ডা দিবে।
মাহমুদুল হক আরও বলেন, “করোনার কারণে প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০/৫০জন মানুষ মারা যাচ্ছেন। প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনা এবং আত্মহত্যায় এর চেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়। সেটা নিয়ে তো এতো মাতামাতি নেই। করোনার অজুহাতে বইমেলা বন্ধ করার কথা বলা-এটা বাংলা ভাষা, বাঙালি ও সাহিত্য নিয়ে চক্রান্ত বলে মনে হয়। মেলার বিন্যাস বড় হয়েছে আগের চেয়ে। সবাই মোটামুটি স্বাস্থ্যবিধি মানছেন। তাহলে বইমেলা নিয়ে এত আপত্তি কেন?”
কবি পিয়াস মজিদ বলেন, “স্বাস্থ্যবিধি মেনেই মানুষ সকাল থেকেই মেলায় আসছেন। সবাই বই দেখছেন, বই নিয়ে কথা বলছে। সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে সতর্কভাবেই চলাফেরা করেছন। এটা আসলে বইমেলার ইতিবাচক একটি দিক।”
শুক্রবার মেলা সকাল ১১টায় শুরু হয়ে চলে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত। বইমেলা আজ নতুন বই এসেছে ১৯৯টি। এরমধ্যে গল্পের বই ৩৩টি, উপন্যাস ৩৭টি, প্রবন্ধ ৭টি, কবিতার বই ৫৪টি, গবেষণা ৯টি, ছড়া ৪টি, শিশুসাহিত্য ১টি, জীবনী ৪টি, রচনাবলি ৩টি, মুক্তিযুদ্ধ ৬টি, বিজ্ঞান ২টি, ভ্রমণ ৪টি, ইতিহাস ২টি, রাজনীতি ১টি, চিকিৎসা/স্বাস্থ্য-২টি, বঙ্গবন্ধু ২টি, রম্য/ধাঁধা ১টি , ধর্মীয় ৩টি, অনুবাদ ১টি, সায়েন্স ফিকশন ২টি এবং অন্যান্য ২১টি বই।
আগামীকাল শনিবার (৩ এপ্রিল) মেলা শুরু সকাল ১১টায় এবং চলবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত।