চাষের মৌসুম
বীজতলা সাজিয়েছি, সাজিয়েছি বালাম ধানের ক্ষেত, বিরুনের চারা, ঠাকুরভোগ ধানের জমি, বৃষ্টি বাদলা মাথায় নিয়ে, কাঠফাটা রোদে।
এই বার ধানক্ষেত যেন ভরে ওঠে ধানে, এই বার মন যেন নেচে ওঠে গানে।
সেই বার ময়না শাইল ক্ষেতে পোকা ধরেছিলো, সেই বার চিটা ধানে ক্ষেত ভরেছিলো, শিলাবৃষ্টিতে জখম হয়েছিলো টেপি বোর ক্ষেত, রাতা শাইল ধানের ফুলে রোগ ধরেছিলো।
এই বার বীজতলা সাজিয়েছি, সাজিয়েছি তুলসি জিরার ক্ষেত, কামে ঘামে কাটিয়েছি দিন, কাটিয়েছি রাত। জাগল করেছি তাকে দয়ামায়া দিয়ে।
ও আমার কালিজিরা ধানের জমিন, চেংরি ধানের ক্ষেত, দয়াবতী হও, এই বার দেশি ধানে দেশি গানে মন যেন ভরে ওঠে ফসলের ভারে।
তিন ফসলি কবিতা
অনেক হয়েছে চাষ! করেছি কামনা রোজ দেশি ধানে ভরে যাক ফসলের মাঠ। তিন ফসলি জমিনে তিন বেলা খেটেছি মজুর।
বেজাল করিনি কোনো। সজ্ঞানে দিয়েছি ঢেলে প্রত্যহ আদর। সজ্ঞানে চেয়েছি হোক হৃষ্টপুষ্ট চাষ, ধানের শরীর।
আজ ফসলের দিনে দাঁড়িয়েছি মাঠে। দেখি চিটা ধানে ভরে গেছে মাঠ। হয়তো বেজাল ছিলো
বীজে
চাষে
মাটিতে আদরে...
হয়তো বেজাল ছিলো জলে ও কাদায়...
তবু আমি ভালোবাসি এই চিটা ধানের মাঠ, নানা রঙ্গা ধানের শরীর। আমি তারে ঘরে তুলে আনি। আমি তারে খাঁটি বলে মানি।
চাষিপুত্র
আমি যেন চাষিপুত্র জল ডাঙ্গা মাঠে, বেঁধেছি জলের নাও ঘাট থেকে ঘাটে। চাষাবাদে এই মন যেন মজে থাকে, কাদাজলে মিশে থাকি বুকে ধরি তাকে।
কে যেন দিয়েছে ঢেলে এই দেহে বিষ, কে যেন দিয়েছে মন্ত্র কানে অহর্নিশ। সেই থেকে মজে আছি প্রেমে-কামে-চাষে, সেই থেকে ভাবি মনে কেউ ভালোবাসে। কাদাজলে এই দেহ ভিজেছিলো কবে, মনে আছে মনে নাই রক্তে আছে তবে। চাষের কৌশল তাই আজো ভুলি নাই, ফসলের দিন এলে দেহে টের পাই।
কে যেন নিয়ত ডাকে রক্তে করে বাস, আমি যেন করে যাই দেশি ধান চাষ। আমি তাই চাষে আছি রৌদ্র-খরা-জলে, আমারে ডাকিও তুমি দেশি কবি বলে।