• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ১২, ২০২১, ০৫:২০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১২, ২০২১, ০৫:২০ পিএম

গুচ্ছ কবিতা । আরিফ নজরুল

গুচ্ছ কবিতা । আরিফ নজরুল

মায়া চোখ কারে খোঁজে, কারে—

এই যে রোদ্দুর— নীলের আকাশ মেঘের রাজ্য
দৃষ্টির ওপাড়ের অস্থির নুরের পাখি
মায়া চোখ কারে খোঁজে, কারে—
পূর্ণতার ভেতরও শূন্যতা নিজেকে খাই 
অটোফেজি আত্মশুদ্ধির টানটোন।

রোদ্দুর সেঁকে তুলে আনি কুসুম কুসুম
জয়তুন নির্যাস খেয়ে সরাই যত জঞ্জাল
আমি তো মানুষ, কিছু ভুল আমিও করি
নগর মায়ায় পড়ে থাকি কংক্রিট জঙ্গলে
ইচ্ছে হলে ডুবে যেতে পারি তরুছায়ায়।

চোখের চেয়ে আর কিছু সুন্দর নেই জগতে
যে চোখে তুমি দ্যাখো মায়া সুনিপুণ
সময়ের ভাঁজ খুলে পাঠমগ্ন আত্মার পৃষ্ঠা
সুমহান নদীর পাড় বাগানবাড়ি অরণ্য
মায়া চোখ কারে খোঁজে, কারে—

 

তুমি আমি লীন হই 

তুমি ঈশ্বরের অদৃশ্য হাতে গড়া মাটির পুতুল
কুমার বাড়ির উঠোনে সাজানো থাকে যেমন
প্রাণ পেয়ে তুমি রিপু তরঙ্গে গন্দম নেশায় বুদ
আমিও ভেসেছি বানের জলের মতো সে নেশায়।

জল পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে ঢেউ নিয়ে আসে তীরে
আমিও জড়িয়ে বুকে বৃষ্টি এনেছি শরীর জুড়ে
কালো জোছনায় জেগে উঠি আর তুমি রক্তরাগে
স্বর্গীয় সুখ এনে সাজালে মায়ার ঘর-সংসার।

সমুদ্রের তাবৎ উন্মাদনা বুকে ছাপিয়ে হৃদয়
বসন্ত বৈরী ডেকে যায় নেচে চলে রাজবুলবুল
সাম্পানের বর্ণিল পাল ওড়ে, ওড়ে গাঙচিল
আমি উড়ি নীল সমুদ্রাকাশে দৃষ্টির শেষ বিন্দুতে।

তুমি আমি লীন হই দেহের অলিতে গলিতে
জোনাকি সময় কাটাই কাঁঠালিচাঁপা বনে।

 

ভাতের বদলে মাছ

আলস দুপুর, আমিও আলস্য রোগাক্রান্ত আশৈশব
বাবাও ভালোবাসতেন আলস্য, ধান রুয়ে দিয়ে 
অপেক্ষায় থাকতেন অগ্রহায়ণের সোনালি রোদ্দুরের
হাওয়ায় হাওয়ায় মৌ মৌ গন্ধে উঠোন ভরা মায়ের আনন্দ।

শেষ রাতে খারৈভরা ঘাঙের মাছে হেসে উঠতো ঘর
ঘাউরাটেংরা, আইর, রিডা, চিংড়ি—
জিরার গন্ধে সালুনের ঘ্রাণ মাছের ঝোল জিহ্বার মতো স্বাদ
চালের অভাবে শ্রাবণে মাছ খেতাম বাসুন বাসুন।

ইলিশের তেলে পান্তা ভাত ডুবিয়ে সকালের নাস্তা
লবণ তেল আর হলুদ মাখা জাল দেয়া দু-টুকরো ইলিশ
উৎসব ছাড়া মাছোৎসবে কাটতো আমাদের বেলা
চাঁই, বুজনাই, মইয়া জালে মাছ আর মাছ—

মা, মাছ নয় আমি ভাত খাবো, ভাত
আউশ চালের ঘনো ফ্যানে পেট ভরতো কখনো
ভাতের বদলে মাছ খেতাম, বাবা গায়ে হাওয়া লাগিয়ে
ঘুরে বেড়াতেন পাড়া ফসলের মাঠ।