আমার নজরুল-সন্ধান শুরু হয় মূলত নজরুল জন্মশতবর্ষে। নজরুল ইনস্টিটিউট একশটি গ্রন্থ প্রণয়নের একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে নজরুলের একশ বছরকে উদ্যাপনের জন্য নজরুলের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবে। সেখানে আমি একটি গ্রন্থ রচনার দায়িত্ব পাই। তখন নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি ছিলেন প্রখ্যাত নজরুল গবেষক, এখন আমাদের জাতীয় অধ্যাপক ও বাংলা একাডেমির নবনিযুক্ত সভাপতি ড. রফিকুল ইসলাম এবং নির্বাহী পরিচালক ছিলেন বিশিষ্ট কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। তাঁদের আমন্ত্রণে আমি ‘নজরুলের কবিতায় শব্দালঙ্কার’ বলে একটি গবেষণাগ্রন্থ রচনা করি। আমরা নজরুলকে রাজনৈতিকভাবে দেখেছি, সংগীতের মানুষ হিসেবে দেখেছি, কিন্তু তাঁর কবিতার অলংকার-তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ খুব একটা হয়নি। ওই দিকটাকে গুরুত্ব দিয়ে আমি নজরুলের কবিতার শব্দালংকার অনুসন্ধান করে দেখিয়েছি যে কাব্যতত্ত্ব বিচারেও বাংলা ভাষার একজন প্রধান কবি হিসেবে নজরুল আমাদের কাছে সম্মানিত হতে পারেন। পরে নজরুল নিয়ে আমার আরও কিছু অনুসন্ধান অব্যাহত ছিল। এই একবার যখন তাঁর ওপর গবেষণা করতে গিয়ে আমার বিচিত্রমুখী পাঠের সুযোগ হয়, সেই পাঠপ্রতিক্রিয়াকে সম্বল করে পরে আমি বিচ্ছিন্ন বেশ কিছু প্রবন্ধ লিখি। সেটি সম্প্রতি ‘নজরুল সাহিত্যে কমালোচিত অধ্যায়’ নামে প্রকাশিত হয়। আমি শব্দটি ব্যবহার করেছি ‘কমালোচিত অধ্যায়’, যে অধ্যায়গুলো বা যে প্রসঙ্গগুলো কম আলোচিত হয়েছে, মানে আলোচনার পাদপীঠে কম এসেছে, সে রকম কিছু বিষয় নিয়ে আমি নজরুলের ওপর একটি গবেষণাগ্রন্থ রচনা করি। মূলত এই গ্রন্থের জন্য আমাকে নজরুলের জন্মগ্রামে প্রতিষ্ঠিত নজরুল একাডেমি পদক দিয়ে সম্মানিত করে। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সাধন চক্রবর্তী। এটি আমার জীবনের একটি বড় অর্জন। এবং তারই ধারাবাহিকতায় বর্ধমানের আরেক শহর মেমারিতে যে নজরুল-উৎসব হয়, নজরুল প্রয়াণদিবসকে সামনে রেখে, সেখানে আমাকে জিরোপয়েন্ট পত্রিকার উদ্যোগে ‘নজরুল অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়। জিরোপয়েন্ট পত্রিকার সম্পাদক আনোয়ার আলির আমন্ত্রণে বিশিষ্ট নজরুলসংগীত গবেষক শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, নজরুল-ভ্রাতুষ্পুত্র কাজী রেজাউল করিম এবং নজরুল-নাতনি কাজী সোনালী ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্বের বাইরে গিয়ে আমি নজরুলকে নিয়ে যে চর্চাটা করেছি, নজরুলবিষয়ক বেশ কিছু প্রবন্ধ রচনা করেছি, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের আমি একাধিকবার আমন্ত্রিত বক্তা হিসেবে গিয়েছি, ঢাকা শহরে অনেক সভা-সেমিনারে আমি নজরুলকে নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পেয়েছি। ড. কাজী মোতাহার হোসেন নজরুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তখন কোয়ার্টার হিসেবে ব্যবহৃত বর্ধমান হাউসে কাজী মোতাহার হোসেন যে ঘরে থাকতেন, নজরুল ঢাকায় এলে সে ঘরে থাকতেন। আমি চাকরিসূত্রে যখন বাংলা একাডেমিতে যোগদান করি, তখন আমার বসার জায়গা হয় ‘নজরুল স্মৃতিকক্ষ’ নামের ওই কক্ষে। আমি খুব গর্বিত যে নজরুল কলকাতা থেকে যখন ঢাকাতে যেতেন, যে কক্ষে তিনি রাত্রি যাপন করতেন, সেই কক্ষে আমি অফিস করেছি প্রায় পাঁচ বছর। সেটি আমার জন্য খুব আনন্দের অর্থাৎ নজরুলের স্মৃতিকক্ষ আমারও এখন একটি স্মৃতিকক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার স্মৃতির একটি বড় অংশ ওখানে। ওখানে গিয়ে আমি লক্ষ করেছি যে নজরুলকে নিয়ে প্রথম গবেষণাগ্রন্থ রচনা করেন কাজী আবদুল ওদুদ, তারপরে একটি গবেষণাপত্র রচনা করেন শিবপ্রসন্ন লাহিড়ী এবং তৃতীয় গ্রন্থটি লেখেন কাজী মোতাহার হোসেন। এই বইটি নজরুল সাহিত্য-সমালোচনার একটি বড় মাইলফলক হয়ে আছে। এর বাইরেও কাজী মোতাহার হোসেন বেশ কিছু প্রবন্ধ লিখেছেন। তাঁর স্মৃতিকথার মধ্যে নজরুল প্রসঙ্গ এসেছে, নজরুলের পুস্তক সমালোচনা করেছেন। এগুলো একক কোনো গ্রন্থে ছিল না তখন আমি ‘কাজী মোতাহার হোসেনের নজরুলচর্চা’ নামে এই প্রবন্ধগুলো সংকলন করি। এর বাইরে কলকাতা থেকে আমার একটি বই বের হয়েছে ‘অদ্বিতীয় নজরুল’ নামে। পশ্চিমবঙ্গের মানকর কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. অরিজিৎ ভট্টাচার্য এবং আমার যৌথ সম্পাদনায় ওটি প্রকাশিত। অরিজিৎ তখন আসানসোল কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি অধ্যাপক ছিলেন। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের তৎকালীন সহকারী অধ্যাপক ড. মোনালিসা দাসের মাধ্যমে অরিজিৎ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। দুই দেশে বাংলা ভাষায় নজরুলবিষয়ক যত গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে, তার থেকে নির্বাচিত অংশ নিয়ে আমরা গ্রন্থটি প্রকাশ করি, যার নাম ‘অদ্বিতীয় নজরুল’। এই গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও নজরুল ইনস্টিটিউটের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ড. মনিরুজ্জামান। এর আনুষ্ঠানিক প্রকাশনা অনুষ্ঠানে ছিলেন আামদের জাতীয় অধ্যাপক পদ্মভূষণ ড. আনিসুজ্জামান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আসানসোল কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. সাধন চক্রবর্তী এবং ময়মনসিংহ জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোহীতউল আলম। নজরুলবিষয়ক দুটি নিজস্ব গবেষণাগ্রন্থ এবং দুটি সম্পাদিত সংকলন গ্রন্থ- এই চারটি গ্রন্থ নিয়ে আমার নজরুলচর্চা অব্যাহত রেখেছি। এর বাইরে বাংলাদেশের যাত্রাগান নিয়ে যে গবেষণা করেছিলাম কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, সেখানকার বাংলার অধ্যাপক প্রখ্যাত লালন-গবেষক প্রফেসর ড. আবুল আহসান চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে ‘বাংলাদেশে যাত্রা গান-জনমাধ্যম ও সামাজিক পরিপ্রেক্ষিত’ এই নামে, সেখানেও নজরুল ও যাত্রাগান প্রসঙ্গ রয়েছে। এই গবেষণার সহ-তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। অভিসন্দর্ভটি বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
আজকে আমরা যে নজরুলের ‘চল চল চল’ গানটি গাই, যেটি বাংলাদেশের ‘রণসংগীত’ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে, এটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯২৮ সালের এপ্রিল-মে মাসে। তখন ফরিদপুর থেকে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হতো ‘মোয়াজ্জিন’ নামে। ওই পত্রিকার উদ্বোধনী সংখ্যায় আশীর্বাদী কবিতা হিসেবে ‘মোয়াজ্জিন’ নামে ছাপা হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এটিকে আমাদের ‘রণসংগীত’ হিসেবে গ্রহণ করেন। আমার বাড়ি মাদারীপুর থাকার কারণে ওই পত্রিকার পুরোনো সংখ্যা দেখার সুযোগ হয়। আমি লক্ষ করলাম যে একটি মফস্বলের পত্রিকা, একটি প্রান্তিক অবস্থানের পত্রিকা সেখানে নজরুলের ২৬টি রচনা প্রকাশিত হয়েছিল। গান, ছড়া, কবিতা, পুস্তক সমালোচনা সব মিলিয়ে ২৬টি রচনা। তারপর থেকে নজরুলের প্রতি আমার আগ্রহ জন্মাল। ওই পত্রিকার সম্পাদক সৈয়দ আবদুর রব। উনি ‘নজরুলনামা’ বলে পদ্যে নজরুলের জীবনী লিখেছিলেন নজরুল জীবদ্দশাতেই। এসব কারণে নজরুল সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হই।
নজরুল যে নির্বাচন করেছিলেন, ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন, সেটি ফরিদপুর থেকে। ১৯২৬ সালের কথা। স্বরাজ দলের হয়ে এই কবি নির্বাচন করেছিলেন। তিনি দাঁড়িয়েছিলেন ঢাকা বিভাগের মুসলমানদের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক পরিষদের একজন সদস্য পদে। ফরিদপুরে তখন বড় নেতা ছিলেন তমিজউদ্দিন খান, উনি জিতেছিলেন। নির্বাচনী প্রচারণায় নজরুলকে ‘কাফের’ আখ্যা দিয়ে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল। মুসলিম-আসনে ‘কাফের’কে কে ভোট দেয়? ময়মনসিংহ-ঢাকা-ফরিদপুর-বরিশাল অঞ্চলে নজরুল পেয়েছিলেন মাত্র ১০৬২ ভোট। কবি হুমায়ুন কবীর তখন অবিভক্ত বাংলার শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন, উনি সেখানে গিয়েছিলেন। নজরুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন কবি জসীমউদদীন। উনি জসীমউদদীনের বাড়ি থেকে দিনভর গান করতেন। সবাই যখন বলছে যে কাজীদা নির্বাচন হচ্ছে, ক্যাম্পিংয়ে যেতে হবে, জনসভায় যেতে হবে উনি এগুলোর গুরুত্ব না দিয়ে হারমোনিয়াম নিয়ে বসে যেতেন। উনি পাগলাটে ছিলেন, পাগলাটে আমি আদুরে অর্থে বলছি, খেয়ালি মনের ছিলেন। সে কারণে উনি জানতেন যে সাধারণ মানুষ ওনাকে ভোটের রাজনীতিতে গ্রহণ করবেন না কিন্তু যিনি ভোটে জিতে ছিলেন তার নাম মানুষ জানে না কিন্তু মানুষ জানে ওই ভোটে পরাজিত হলেও নজরুল মানুষের কাছে জয়ী হয়েছেন।
নজরুল মাদারীপুরের বিপ্লবী পূর্ণচন্দ্র দাসের সঙ্গে বহরমপুর জেলে কাটিয়েছেন। তাঁকে ‘জয় বাংলার পূর্ণচন্দ্র’, ‘মাদারীপুরের মর্দবীর’ হিসেবে বরণ করেছেন। তাঁর একটি বিখ্যাত কবিতা আছে ‘পূর্ণ অভিনন্দন’ নামে। ওই পূর্ণচন্দ্রের বাড়ি ও আমার বাড়ি একই জায়গায় মাদারীপুর। নজরুল যে ‘ধীবরদের গান’ লেখেন মাদারীপুরে ধীবর সম্মেলনে গিয়ে। অর্থাৎ আমার জন্মস্থানের কাছাকাছি নজরুল একাধিকবার গিয়েছেন এবং নজরুলের ওখানে বাসে রচনার নিদর্শন আছে। ওখানকার মানুষের সঙ্গে নজরুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল। এই বিষয়গুলো আমাকে নজরুলের প্রতি আকৃষ্ট করেছে।
কাজ করতে গিয়ে লক্ষ করেছি যে নজরুল এমনই একজন মানুষ, যিনি জাতি-ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে উঠে একজন আন্তর্জাতিক মানব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নিজেকে। যার ভেতরে কোনো রাজনৈতিক বিভেদ করা যাবে না, যাকে জাতিতে জাতিতে ভেদ করা যাবে না, দুই বাংলার সংস্কৃতির সেতু হিসেবে মনে করি নজরুলকে। এ রকম আক্ষরিক অর্থে অসাম্প্রদায়িক ও সাম্যবাদী চেতনার মানুষ নজরুলের বাইরে আমরা খুব বেশি দেখতে পাই না। তখন মনে হলো যে এই লোকটির সাহিত্যকীর্তি, এই লোকটির সংগীতকীর্তি, এই লোকটির যত কর্মকাণ্ড সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে, তার সবকিছু আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে উপস্থিত করা দরকার। তাহলে হয়তো আমাদের হানাহানি কমবে, মানুষে মানুষে ভাতৃত্ব বোধ তৈরি করবে, আমাদের সংস্কৃতির সেতু আরও দৃঢ় হবে। এই রকম একটি অভিপ্রায় থেকে আমি নজরুলচর্চায় মনোনিবেশ করেছি।
নজরুল জন্মসূত্রে বর্ধমান জেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রামের অধিবাসী হলেও নজরুলের বড় সময়টি কেটেছে দুই বাংলায় ছোটাছুটি করে। তার রচনা যদি দেখি, প্রতিটি রচনায় তারিখ লেখা আছে সেখানে যতখানি না পশ্চিমবঙ্গ তার চেয়ে পূর্ববঙ্গ কম নয়। উনি কুমিল্লায় কাটিয়েছেন, উনি বিয়ে করেছেন মানিকগঞ্জে, ঢাকায় অনেকবার গিয়েছেন, থেকেছেন তাঁর বন্ধু কাজী মোতাহার হোসেনের বাড়িতে। বুদ্ধদেব বসুর স্ত্রী প্রতিভা বসুসহ অনেক সময় অভিজাত মানুষের বাড়ি গিয়ে গান শিখিয়েছেন। অর্থাৎ নজরুলের কর্মের একটি বড় অংশ কেটেছে বাংলাদেশে। আমরা আনন্দিত। আমরা জানি যে নজরুল বেশি দিন সক্রিয় ছিলেন না, দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকলেও সক্রিয় ছিলেন না, সৃষ্টিতে সক্রিয় ছিলেন না। এই সময় আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নজরুলকে বাংলাদেশে নিয়ে যান। মজার ব্যাপার হলো, আমাদের কোনো রাষ্ট্রীয় ফরমান জারি করা হয়নি, এ নিয়ে কোনো সরকারি আদেশ নেই তবু সাধারণ মানুষ তাকে ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে বরণ করে নিয়েছে। এখন জাতীয় কবি বললে আমরা নজরুলের নামই বলি। সরকারি কোনো নির্দেশের অপেক্ষা না করে এ রকম একটি জাতীয় সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষ নিয়ে ফেলেছে। এর ভেতরেই বোঝা যায় যে নজরুল কতখানি সাধারণ মানুষের কাছের। এবং নজরুলের সাহিত্য সংগীতে আমরা যে অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা জানি, তাতে দেখি উনি হিন্দু-মুসলিম-খ্রিষ্টান আলাদা করে দেখেননি। সবাইকে দেখেছেন ‘মানুষ’ হিসেবে। এই যে মানুষ হিসেবে সকলকে দেখা এবং সেটি শুধু মুখের কথা নয় এবং উনি জীবদ্দশায়ও সেটি প্রমাণ করেছেন। উনি ধর্মীয় আচরণের গণ্ডির মধ্যে থাকেননি, তিনি ধর্মীয় লোকাচারের ঊর্ধ্বে উঠে সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন করেছেন। মানুষকে ভালোবেসেছেন, মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন, যতটুকু ভালোবাসা দিয়েছেন তার থেকে মানুষ তাকে কম ভালোবাসা ফিরিয়ে দেয়নি। এই ভালোবাসার টানেই আমি সারা জীবন নজরুলচর্চায় নিবিষ্ট থাকাকে দায়িত্বজ্ঞান করি।