জনবল সংকটে ধুঁকছে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল। এ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে এসে মারাত্মক হয়রানি ও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসকের দেখা পাচ্ছে না তারা। রোগীদের সেবা দিতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
২০০৩ সালের জুলাই মাসে ৫০ শয্যা থেকে উন্নীত করা হয় ১০০ শয্যায়। সম্প্রতি এ হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার ঘোষণার পর এর অবকাঠামোগত কিছু উন্নয়ন হলেও নিয়োগ দেওয়া হয়নি প্রয়োজনীয় জনবল। জনবল নিয়োগ না দেওয়ার ফলে তীব্রভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে প্রতিদিন ইনডোর ও আউটডোর মিলিয়ে রোগী আসেন প্রায় ৪ শতাধিক। সেখানে মাত্র কয়েকজন চিকিৎসক দিয়ে দায়িত্ব পালন অনেকটা দুরূহ হয়ে পড়ে। এখানে ৫০ শয্যার জনবলও রয়েছে সংকটে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীদের দীর্ঘ সারি। হাসপাতালের কক্ষগুলোতে রোগীদের উপচেপড়া ভিড়। সেই ভিড় এসে থেমেছে হাসপাতালের বারান্দা ও বাহিরের রাস্তায়ও। মহিলা কাউন্টারের লাইন শেষ হয়ে ভিড় জমাচ্ছে পুরুষ কাউন্টারে। বহির্বিভাগে চিকিৎসা দিতে দেখা গেছে আরএমও ডা. আনোয়ার হোসেনকেও।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের ১০০ শয্যার অনুমোদন থাকলেও জনবল দেখানো হয়েছে ৫০ শয্যার। ১২৫টি পদের মধ্যে ৩৫টিই শূন্য। এর মধ্যে চিকিৎসকের পদ ২২ জন, শূন্য রয়েছে ৩ জন। নার্স ৬৫ জন, শূন্য রয়েছে ১৯ জন, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির এমএলএসএস, আয়া ও সুইপারের পদে ৩৮ জন থাকার কথা থাকলেও ১৩টি পদই রয়েছে শূন্যের তালিকায়। এ ছাড়া অর্থোপেডিক্স, সার্জারি, প্যাথলজি ও হিসাব রক্ষক পদে দীর্ঘদিন ধরে শূন্য।
জানা যায়, গেল ২০১৭ সালের ১৪ মার্চ লক্ষ্মীপুর স্টেডিয়াম মাঠে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় সদর হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার ঘোষণা দেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর হাসপাতালের অবকাঠামোগত কিছু উন্নয়ন চোখে পড়লেও জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
২০১৮ সালের শেষের দিকে ২৫০ শয্যা হাসপাতালের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়। সেই ২০০৩ সাল থেকেই ৫০ শয্যা হাসপাতালের জনবল দিয়েই চলছে কার্যক্রম।
বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা টুমচর গ্রামের আনোয়ার হোসেন বলেন, জেলা শহরের এই হাসপাতালে প্রচুর রোগী। সে জন্য ডাক্তার ও অন্যান্য সুবিধা খুবই কম। যেভাবে চিকিৎসা পাওয়ার কথা সেভাবে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছি না।
রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালের প্রতিটি বেডে একজন রোগী চিকিৎসা নেওয়ার নিয়ম। কিন্তু দুই তিনজন ভর্তি রোগীকে এক বেডে থাকতে হচ্ছে। হাসপাতালের পরিবেশ, বাথরুম ও টয়লেট অপরিচ্ছন্ন। এতে রোগীরা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের সিনিয়র নার্স নিলু রাণী দাস বলেন, সদর হাসপাতালে যে কয়জন নার্স আছে তা চাহিদার তুলনায় খুবই নগণ্য। যার কারণে চিকিৎসা সেবা দিতে অনেকটা হিমশিম খেতে হচ্ছে।
সদর হাসপাতালেরস আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আনোয়ার হোসেন বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও মূল ৫০ শয্যার জনবল দিয়েই হাসপাতালের কার্যক্রম চলছে, তার মধ্যেও অনেকগুলো পদ খালি রয়েছে। যে কারণে চাহিদা অনুযায়ী সেবা দেওয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না। এছাড়াও হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় ১শ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। সর্বমোট প্রায় ৩শ’ রোগী ইনডোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে দাবি করেন তিনি।
লক্ষ্মীপুর সিভিল সার্জন ডা. মোস্তফা খালেদ আহম্মদ বলেন, জনবল সংকটের সমস্যা সমাধানের জন্য একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বর্তমানে ২য় শ্রেণির নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ৪র্থ শ্রেণির জনবল সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। জনবল নিয়োগ হয়ে গেলে আরও ভাল সেবা পাবে জেলার বাসিন্দারা এমনটাই জানিয়েছে এ কর্মকর্তা।
কেএসটি