বরগুনা সদর এলাকায় শাহ নেওয়াজ রিফাত শরীফ (২৫) নামে সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতাকে প্রকাশ্য দিবালোকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে এলাকার একদল চিহ্নিত সন্ত্রাসী। বুধবার (২৬ জুন) আনুমানিক বেলা ১০/১১টা নাগাদ জেলার সদর এলাকায় অবস্থিত বরগুনা সরকারী কলেজের সামনের জনাকীর্ণ রাস্তায় এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে। এই ঘটনার ধারণকৃত একটি ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় তোলপাড়।
পরে নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য অনুসন্ধানে পাওয়া যায় চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রাপ্ত তথ্যেরভিত্তিতে জানা যায়, নব বিবাহিতা স্ত্রীর প্রেমিক দাবি করা উত্যক্তকারীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জেরে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন রিফাত।
তথ্য মতে, মাত্র দু'মাস আগে পুলিশ লাইন সড়কের মিন্নি নামের এক মেয়ের সাথে বিয়ে হয় রিফাতের। বিয়ের পর নয়ন নামের এলাকার এক চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী, নিজেকে রিফাতের স্ত্রী মিন্নির প্রেমিক দাবি করে নানাভাবে তাকে উত্যক্ত করতে শুরু করে। এক পর্যায়ে নয়নের এসকল আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় রিফাত। প্রাথমিকভবে ধারণা করা হচ্ছে, এর জেরেই নয়ন ও তার অনুসারীদের হাতে খুন হন তিনি।
এদিকে নিহতের পরিবারের সূত্রের বরাতে পাওয়া তথ্য অনুসারে জানা যায়, রিফাতকে হত্যা করেছে তার স্ত্রীর প্রেমিক নয়ন। রিফাতের সঙ্গে দু’মাস আগে পুলিশ লাইন সড়কের মিন্নি নামের এই মেয়ের বিয়ে হয়। বিয়ের পর নয়ন নামের ওই যুবক মিন্নিকে তার প্রেমিকা দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপত্তিকর পোস্ট দিতে থাকে। যার প্রতিবাদ জানায় রিফাত।
এলাকাবাসীর বরাতে পাওয়া তথ্য মতে, নয়ন একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী। নানা অপরাধে একাধিকবার জেলও খেটেছে সে। তবে নয়ন ও মিন্নির মাঝে আসলেই কোন সম্পর্ক ছিলো বা আছে কিনা এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে এখনও কিছু জানা যায়নি।
ঘটনার দিন, বুধবার বেলা আনুমানিক ১০/১১টা নাগাদ বরগুনা সরকারী কলেজের সামনের পথ ধরে বাড়ি ফিরছিলেন রিফাত ও তার স্ত্রী মিন্নি। এ সময় হঠাৎ নয়নের নেতৃত্বে তার অপর তিন সহযোগি রিফাত ফরাজী, রিশান ফরাজী ও রাব্বি আকন- রিফাতকে ঘিরে ধরে এবং ধারালো দা ও চাপাতি দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় ফেলে রেখে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।
কিন্তু এ সময় রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় আহত রিফাতকে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকাল আনুমানিক ৪টার দিকে মারা যান রিফাত।
রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বলেন, তার পুত্রবধূকে প্রতিনিয়ত উত্ত্যক্ত করাসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপত্তিকর পোস্ট দিত নয়ন। এর প্রতিবাদ করায় তার একমাত্র ছেলেকে এমন নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তবে এব্যাপারে রিফাতের স্ত্রী মিন্নি বা তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোন কিছু জানা যায়নি।
বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবীর মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ঘটনাস্থলটি থানার সিসি ক্যামেরার আওতাধীন। এরই মধ্যে ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামিদের শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদের গ্রেফতারে মাঠে নেমেছে পুলিশ।
এসকে